• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কেন পেটিএমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশ:  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫২ | আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভারতের ডিজিটাল লেনদেনর জন্য সুপরিচিত পেটিএমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। আজ আরবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ক্রমাগত নিয়ম লঙ্ঘন’ এবং তত্ত্বাবধানের অভাবেই এই কঠোর পদক্ষেপ।

২০২২ সালেই আরবিআই পেটিএমকে নির্দেশ দিয়েছিল, কোনো নতুন গ্রাহক করা যাবে না। তারপরই মনে করা হচ্ছিল, যেকোনো সময় পেটিএমের ব্যাংকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এনডিটিভ জানিয়েছে, শেষমেশ তা-ই করা হয়েছে।

আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নর জে স্বামীনাথন বলেছেন, পেটিএম পেমেন্টস ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যা করণীয়, তা-ই করা হবে।

গত পয়লা ফেব্রুয়ারি আরবিআই পেটিএমের ওপর খড়গহস্ত হয়। সেদিন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২৯ ফেব্রুয়ারির পর আর ব্যাংকিং পরিষেবা দিতে পারবে না পেটিএম। ২৯ ফেব্রুয়ারির পর কোনো গ্রাহকের পেটিএম অ্যাকাউন্ট, ওয়ালেট বা ফাসট্যাগে নতুন করে অর্থ জমা নিতে বা ক্রেডিট লেনদেন করতে পারবে না বলেও জানায় আরবিআই। এরপরই ধস নামে পেটিএমের শেয়ারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই পদক্ষেপে পেটিএম গ্রাহকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়। পেটিএমের হিসাবে জমা অর্থের কী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল গ্রাহকদের মনে। তখন পেটিএম জানায়, রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে গ্রাহকদের সঞ্চয়ী হিসাব ও ওয়ালেটে জমা আমানতে প্রভাব পড়বে না। তারা আরও জানায়, পেটিএমের ফাসট্যাগ বা এনসিএমসি হিসাবে জমা থাকা অর্থেও প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে আরবিআই।

প্রশ্ন হলো, পেটিএমের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ ছিল, যার ভিত্তিতে আরবিআই এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, পেটিএম অ্যাপে উপযুক্ত তথ্য, পরিচয় ছাড়া হাজার হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। অধিকাংশ হিসাবেই সঠিক কেওয়াইসি বা সাধারণ ব্যাংকিং তথ্য নেই। এমনকি এ-ও দেখা গেছে, একটি প্যান নম্বর দিয়ে হাজারখানেক পেটিএমের হিসাব খোলা হয়েছে। ফলে আর্থিক দুর্নীতির সম্ভাবনা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে জন্য অনেক দিন তর্জন-গর্জনের পর হঠাৎ করে পেটিএমের লেনদেনে রাশ টেনেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া যেসব হিসাব খোলা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোটি কোটি রুপি লেনদেন হয়েছে। আরবিআই ওই হিসাবগুলোর নথি খতিয়ে দেখতে গিয়ে গলদ খুঁজে পেয়েছে। প্রায় কোনো হিসাবের সঙ্গেই উপযুক্ত নথিপত্র পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।

আরবিআইয়ের সন্দেহ, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া পেটিএমে যেসব হিসাব আছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো কোনো হিসাব আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সংবাদ অনুযায়ী, পেটিএমের সম্ভাব্য এই দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে ভারত। পেটিএমের মূল কোম্পানি ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশন লিমিটেড আরবিআইয়ের কোপে পড়েছে। এদের মাধ্যমে লেনদেনে গোপন তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনা আছে বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, পেটিএমের বিরুদ্ধে যত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার সবই করা হয়েছে আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার স্বার্থে। গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজও ভারতের শেয়ারবাজারে পেটিএমের শেয়ারের দাম অনেকটা কমেছে। আজ ৪৯৬ রুপিতে পেটিএমের লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ রুপি, অর্থাৎ দাম কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।

গতকাল বুধবার পেটিএমের মূল কোম্পানি ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশনের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছিল। বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ফিনটেক ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা বিজয়শেখর শর্মা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা করতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের সঙ্গে দেখা করার পরই এই পরিবর্তন। কিন্তু আজ আবার শেয়ারের দাম কমে যায়।

রয়টার্স জানিয়েছে, পেটিএম মূলত আরবিআইয়ের কাছে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে। পেটিএম ওয়ালেটগুলোর জন্য লাইসেন্স ট্রান্সফারের বিষয়ে আরবিআইয়ের কাছে স্পষ্টতা চেয়েছে তারা। পাশাপাশি ব্যবসা ও ফার্স্ট ট্যাগ ডিজিটাল হাইওয়ে টোল পেমেন্ট পরিষেবার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে পেটিএম নিয়ে এই ডামাডোলের মধ্যেই ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশনের ৫০ লাখ শেয়ার কিনেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মর্গ্যান স্ট্যানলি। গত শুক্রবার তারা এই শেয়ার কিনেছে। খোলাবাজারে লেনদেন চলাকালীন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এসব শেয়ার কিনেছে কোম্পানিটি। তাদের শেয়ারের ক্রয়মূল্য ছিল ৪৮৭ দশমিক ২০ রুপি। অর্থাৎ ৫০ লাখ শেয়ার কিনে মোট ২৪৩ দশমিক ৬ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে মর্গ্যান স্ট্যানলি। এই শেয়ার কিনেছে মার্কিন কোম্পানিটির এশিয়া (সিঙ্গাপুর) শাখা।

বাণিজ্য,ব্যাংক,ভারত
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close