• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতির আশা বাড়ছে

প্রকাশ:  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৩৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার চতুর্থ মাস শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। তবুও উপত্যকাটিতে থামছে না ইসরায়েলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ। এরই মধ্যে পঞ্চম দফায় মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। চরম দুর্দশায় থাকা গাজাবাসীর প্রত্যাশা, ব্লিঙ্কেনের এই সফরের মধ্য দিয়ে উপত্যকাটিতে নতুন করে যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত রূপ নিতে পারে।

গত নভেম্বরে গাজায় প্রথমবারের মতো সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। এরপর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে নতুন করে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব আনা হয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ওই প্রস্তাব চূড়ান্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আজ সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার কথা রয়েছে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।

ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় প্রাথমিকভাবে অন্তত ৪০ দিন হামলা বন্ধ রাখবে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রবেশের সুযোগও দেবে দেশটি। এ সময় ৭ অক্টোবর গাজা সংঘাত শুরুর দিন ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে জিম্মি করা ২৫৩ ব্যক্তির মধ্যে বাকিদের মুক্তি দেবে হামাস। এর আগে প্রথম দফায় যুদ্ধবিরতির সময় চুক্তি অনুযায়ী ওই জিম্মিদের বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

যুদ্ধবিরতির চুক্তির এ প্রস্তাবে প্রাথমিক সায় দিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কাছে চুক্তির প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছে মধ্যস্থতাকারীরা। তবে হামাসের কাছ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলের হামলা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে ইসরায়েলের।

চুক্তির প্রস্তাব নিয়ে জানাশোনা আছে এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাব নিয়ে হামাস শিগগিরই নিজেদের অবস্থান জানাবে। তবে এটা নির্ভর করছে চুক্তির বিষয়ে ছাড় দিতে সফরের সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কতটা রাজি করাতে পারবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির তৎপরতা জোরদার হচ্ছে, তখন গাজায় চলছে ইসরায়েলের তীব্র হামলা। আজ ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

এদিকে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরের গাজা নগরীতে তাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের তুমুল লড়াই হয়েছে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় এলাকাগুলোয় সংঘাত বেশি হয়েছে। এসব এলাকায় ইসরায়েলের যুদ্ধজাহাজগুলো ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গতকাল রোববার রাতভর দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন তাঁরা। এর আগেও কয়েক দিন ধরে তাঁরা জানিয়েছেন, হামলার কারণে উদ্ধারকারীরা খান ইউনিসে হতাহত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

সম্প্রতি ইসরায়েল জানিয়েছিল, খান ইউনিসের পর এবার আরও দক্ষিণে মিসর সীমান্তবর্তী রাফায় অভিযান শুরু করতে তারা। ইসরায়েলি হামলার মুখে এ এলাকায় গাজার ২৩ বাসিন্দার বেশির ভাগই আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের আশঙ্কা, এ অভিযানের জেরে রাফায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ, গাজার সর্ব দক্ষিণের এ এলাকা থেকে আর পালানোর জায়গা নেই ফিলিস্তিনিদের।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। সেদিন থেকেই গাজায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর রোববার আবারও হামলা বিমান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে বলেছে, হুতিদের মোট পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র নিশানা করে ওই হামলা চালানো হয়। আগের দিন শনিবার হুতিদের ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

হুতিরা গত বছরের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে সামরিক-বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশে এ হামলা চালানো হচ্ছে—বলেছে হুতিরা। হুতিদের ক্রমাগত হামলার প্রেক্ষাপটে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেনাঘাঁটিতে হামলায় কুর্দি পরিচালিত বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) সাত যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। আজ সিরিয়ার যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ তথ্য জানিয়েছে। ড্রোন মাধ্যমে ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত বাহিনীটির আরও ১৮ যোদ্ধা আহত হয়েছেন।

২৮ জানুয়ারি জর্ডানে একটি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন। আহত হন ৪০ জনের বেশি। ওই হামলা জন্য ইরান–সমর্থিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করে ওয়াশিংটন। জবাবে গত শুক্রবার সিরিয়া ও ইরাকে ইরান–সমর্থিত বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে দুই দেশে প্রায় ৪০ জন নিহত হন। এমন হামলা আরও চালানো হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

ফিলিস্তিন,গাজা,হামাস,ইসরায়েল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close