• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র যেভাবে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে উত্তেজনা বাড়াতে পারে

প্রকাশ:  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০২
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইয়েমেন উপকূল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দূরত্ব এক হাজার মাইলেরও বেশি। কিন্তু রোববার (৩ ডিসেম্বর) লোহিত সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যার কারণে গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের যে ডিভিশনটি মধ্য প্রাচ্যে নিয়োজিত আছে সেই ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্য করে চারটি হামলা চালিয়েছে।

ওই হামলায় একই সাথে বিস্ফোরক বহনকারী ড্রোন এবং জাহাজ বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার অবশ্য আগে থেকে ওই এলাকায় মোতায়েন ছিল, আর এর মাধ্যমেই গুলি করে ড্রোন তিনটিকে ভূপাতিত করা হয়।

এছাড়া আরো একটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সমর্থ হয়েছিলো তারা। যদিও তাতে সামান্য ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

পেন্টাগন বলছে এসব হামলাগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সমুদ্র সীমার নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি। পরে আরেক বিবৃতিতে তারা দাবি করে, এসব হামলা হয়েছে ইয়েমেন থেকে এবং এগুলোর পেছনে আছে ইরান।

হামলাগুলো যেখানে হয়েছে সেই স্থান বা লোকেশনটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি হয়েছে বাব এল মান্দেব প্রণালীর একটি কৌশলগত চেকপয়েন্টের উত্তর প্রান্তে।

প্রায় কুড়ি মাইল চওড়া এ চ্যানেলটিই আরব উপত্যকা থেকে আফ্রিকাকে আলাদা করেছে। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর প্রায় ১৭ হাজার জাহাজ এই এলাকার ওপর দিয়ে পণ্য আসা-যাওয়া করে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ রুট।

কোন জাহাজকে সুয়েজ খাল অতিক্রম করে ভারত মহাসাগরের দিকে যেতে হলে এই প্রণালী অতিক্রম করে যেতে হয়, যেটি ইয়েমেন উপকূলের খুবই কাছে।

তাহলে ওই হামলাগুলোর কারণ কী আর এর সাথে গাজারই বা সম্পর্ক কী?

ইয়েমেনের জনবহুল এলাকাগুলো ২০১৪ সাল থেকেই হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে লোহিত সাগর উপকূলও আছে। উপজাতীয় এই মিলিশিয়া বাহিনী ইয়েমেনের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলো।

তাদের সহায়তা করে ইরান এবং হুতিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ আছে দেশটির বিরুদ্ধে। এসব অস্ত্রের মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিও আছে। এটি একেবারেই গাজায় হামাসকে কিংবা লেবাননে হেজবুল্লাহকে যেভাবে সহায়তা দেয়া হয় ঠিক তেমন।

গত নয় বছরের বেশি সময় ধরে হুতিদের বিদ্রোহ এক বিপর্যয়কর গৃহযুদ্ধের সূচনা করেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়ে এক মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও, তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল সম্ভব হয়নি।

এই যুদ্ধের সময় হুতিরা অসংখ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব, আমিরাত ও ইয়েমেনের ভেতরে। তাদের হামলায় আক্রান্ত হয়েছে বেসামরিক বিমানবন্দর, শহর, পেট্রোক্যামিক্যাল অবকাঠামোসহ বহু সামরিক স্থাপনা।

গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলার পর হুতিরা তাদের সমর্থন জানিয়েছে- তাদের ভাষায় ‘গাজায় তাদের ভাইদের প্রতি’।

তারা এইলাটসহ ইসরায়েলের অন্যান্য টার্গেটে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করেছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ‘ইউএসএস কারণে’ গুলি করে ভূপাতিত করে।

হুতিরা অনেক সময় জাহাজকেও টার্গেট করে যদি তারা মনে করে এসব জাহাজের সাথে ইসরায়েলের কোন যোগসূত্র আছে।

নভেম্বরেই তারা কার্গো শিপ গ্যালাক্সি লিডারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে যোদ্ধাদের পাঠিয়ে সেটি আটক করে। তারা কোনো ইসরায়েলি জাহাজের ওই উপকূল অতিক্রমকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।

রোববার এক বিবৃতিতে তাদের সামরিক মুখপাত্র বলেছে ইসরায়েলি জাহাজ হওয়ার কারণেই তারা কিছু নৌযানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

যদিও ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ওইসব জাহাজের সাথে দেশটির সরকারের যোগসূত্র উড়িয়ে দিয়েছে। তবে গণমাধ্যমে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী ধনাঢ্য কিছু ইসরায়েলি ব্যক্তি ওই বেসরকারি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত।

জবাবে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও সহযোগীদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে যথাযথ জবাব দেয়ার কথা বলেছে। সাধারণত ওয়াশিংটন ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কিছু করতে চায় না, যেখানে এমনিতেই গাজা যুদ্ধের কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

কিন্তু যদি হুতিরা ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া অব্যাহত রাখে, তাহলে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেসব এলাকা থেকে নিক্ষেপ হয় সেসসব জায়গা লক্ষ্য করে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে হবে।

সেটি হলে সেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ইরানও। আর তাতে আরো বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশংকাও তৈরি হতে পারে।

আপাতত উভয় পক্ষই সেটি সচেতনভাবেই এড়াতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

উত্তেজনা,যুদ্ধ,হামাস-ইসরায়েল,ইয়েমেন,ক্ষেপণাস্ত্র
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close