• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১০৯

প্রকাশ:  ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৪০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় আবারো হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে অন্তত ১০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, ইসরায়েল বিমান হামলা শুরুর পর গাজায় আবারো শিশুরা আতঙ্ক ও ট্রমার মধ্যে পড়েছে।

দক্ষিণ গাজা থেকে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি চলাকালে তাদের মধ্যে সামান্য সময়ের জন্য হলেও শৈশবের আনন্দ-উল্লাস ফিরেছিল। এখন আবার ট্রমা ফিরে এসেছে। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে তারা বাবা-মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।

ফের যুদ্ধ শুরু হওয়ায় গভীর অনুতাপ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া স্ট্যাটাসে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, তিনি এখনো আশা করছেন, নতুন করে যুদ্ধবিরতি হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৫০টি শিশু রয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হলেও তাদের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গাজার হাসপাতালগুলোর অবস্থা একেবারেই খারাপ।

ফরাসি সরকার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে দুবাইয়ে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে আসা ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথেরিন কলোনান বলেন, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়া ‘খুবই খারাপ’ খবর। কারণ, এর মাধ্যমে কোনো সমাধান আসবে না; অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে এটি সমাধানকে আরও জটিল করবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে জার্মানিও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে।

হামাসের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে কারামুক্ত করলেও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ধড়পাকড় অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার জেনিন, হেবরন, তুলকারেম ও রামাল্লায় অভিযান চালিয়ে আরো ১২ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়।

ফিলিস্তিনের প্রিজনার্স সোসাইটি জানায়, ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি আটক হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির এক সপ্তাহে হামাস ১৩৭ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এখনও গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি আছেন আরো ১১৭ ইসরায়েলি।

কারামুক্ত ফিলিস্তিনিরা বন্দি অবস্থায় তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলছেন। মুক্তি পাওয়া বন্দিরা বলছেন, একত্রিত করে তাদের শাস্তি দেওয়া হতো; লাঠি দিয়ে পেটানো হতো, ভয় দেখানো হতো কুকুর দিয়ে। তাদের কাপড়, খাবার ও কম্বল ছিনিয়ে নেওয়া হতো। মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে ছয় ফিলিস্তিনির সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তারা বলেছেন, মুক্তির আগ মুহূর্তেও তাদের মারধর করা হয়েছে।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে বিমান থেকে লিফলেট ফেলে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণের একাধিক স্থানে হামলাও চালিয়েছে। অন্যদিকে শুক্রবার উত্তর গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি রকেটও ছুড়েছে হামাস।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন শুক্রবার জানায়, তারা ২৩ লাখ বাসিন্দার পুরো গাজা উপত্যকাকে কয়েক ডজন অংশে বিভাজিত করছে, যাতে বোমা ফেলার সময় এসব অংশের বেসামরিক লোকজনকে সহজে সরিয়ে নেওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির পর শুরু হওয়া নতুন ইসরায়েলি হামলা আগের চেয়ে আলাদা হবে। তুরস্কের কর্নেল ইউসুফ আলাবারদা (অব.) বলেন, ইসরায়েল নতুন হামলা শুরু করেছে, যা আগের চেয়ে ভিন্ন হবে।

ইসরায়েলের যুদ্ধের খরচ অনেক বেশি। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেখাতে চাইবেনু তারা উত্তর গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করতে পেরেছেন; লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হবে ভিন্ন।

তিনি বলেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিল চান, ইসরায়েলের লক্ষ্য নয়। হামাসকে আদৌ শেষ করা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নে ইউসুফ আলাবারদা বলেন, এটা অসম্ভব। হামাস কোনো সংঘাত থেকে জন্ম নেয়নি, বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলের শোষণ থেকে এর জন্ম হয়েছে।

ইসরায়েল অংশ নেওয়ায় জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৮-এ অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে ইরান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ইরানের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এতে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস অংশ নিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হেরজগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

নিহত,হামলা,যুদ্ধবিরতি,ইসরায়েল,গাজা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close