কেন্দুয়ায় শিশু নির্যাতনকারী যুবকের মাথা ন্যাড়া
ছয় বছরের কন্যাশিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মোবারক (৩৫) নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে জুতাপেটা ও মাথা ন্যাড়া করা সহ আশি হাজার টাকা জরিমানা করেছে মাতব্বররা। ৬ জুলাই শুক্রবার মাতব্বরদের মাধ্যমে জরিমানার টাকা পরিশোধ এবং টাকা পরিশোধের পরপরই মোবারককে এলাকা ছাড়ারও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় ওই সালিশে।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাটির বিষয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশ অবগত হওয়ার পরও কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় এলাকার সচেতন মহলে সমালোচনা চলছে। তারা বলছেন পুলিশকে ম্যানেজ করেই এ সালিশ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার দুপুুরের দিকে স্থানীয় জলাশয়ে মাছ ধরতে যান নওপাড়া গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে মোবারক।
সম্পর্কিত খবর
এ সময় সে তার মাছ রাখার পাত্র (ছোপরা) রাখার জন্য একই গ্রামের ওই কন্যা শিশুটিকে ডেকে নিয়ে যান। পরে শিশুটি বাড়ি যাওয়ার পর মোবারক শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ তুলে শিশুটির পরিবার। বিষয়টি জানাজানি হলে গত সোমবার বিকালে নওপাড়া বাজারের ঈদগা মাঠে এক সালিশ বসে। এতে আ.লীগ নেতা ও নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজু, নওপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম, নওপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সুমন ও কান্দিউড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়ালসহ দুই শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সালিশে উপস্থিত মাতব্বররা ঘটনাটি নিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর অভিযুক্ত মোবারককে সালিশে হাজির করে প্রকাশ্যে জুতাপেটা ও মাথা ন্যাড়া করাসহ আশি হাজার টাকা জরিমানা করে। স্থানীয় নওপাড়া পাক্কাঘাট এলাকার নাপিত রিপল শীলকে দিয়ে মোবারকের মাথা ন্যাড়া করানো হয়। মাথা ন্যাড়া করার সময় উপস্থিত কেউ যাতে কোনো ছবি কিংবা ভিডিও না করেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞাও দেন মাতব্বররা।
অভিযুক্ত মোবারকের বড় ভাই হাদিস মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি সালিশে তার ভাইয়ের মাথা ন্যাড়া করাসহ জরিমানা করার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, এলাকার মাতব্বররা বিষয়টি মীমাংসা করেছেন। শুক্রবার জরিমানার টাকা নেতা তাজুল ইসলাম তাজু ভাইকে দিতে হবে। হাদিস আরো জানান, তারা আট-দশ বছর আগে মদন উপজেলার হাসনপুর গ্রাম থেকে ছেড়ে এসে নওপাড়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
সালিশে উপস্থিত নওপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সুমন জানান, উভয়পক্ষের অনুরোধে সালিশে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। এতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ প্রায় দুই শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত লোকজনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ৯ সদস্যের জুরিবোর্ডের মাধ্যমে জরিমানা করাসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমারত হোসেন গাজীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে জানান, ঘটনাটি কোনো পক্ষ বা এলাকার কেউ আমাকে জানানি।