• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সীমাহীন দুর্ভোগে বাসিন্দারা

এক সড়কের জনপদ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘চর বালুয়া’

প্রকাশ:  ২২ মে ২০১৮, ১৮:১০
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি

এক সড়কের জনপদ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘চর বালুয়া’। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের ২০ হাজার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের পথ এটি। চার রাস্তার মাথা নামক ঘাট থেকে শুরু হওয়া এ সড়কটির এক তৃতীয়াংশই কাঁচা। এক অংশ সলিং। আর এ সড়কের বেশিরভাগ অংশ খানাখন্দে ভরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মেঘনা ও বামনিয়া নদীর সংযোগস্থলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর বালুয়া। শত বছরের ভাঙা-গড়ার এ জনপদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড। এখানে ২০ হাজারের বেশি মানুষের বাস। কিন্তু দ্বীপের অভ্যন্তরে মানুষের যোগাযোগের জন্য মাত্র একটি প্রধান সড়ক রয়েছে। কাঁচা আর সলিং মিশ্রিত এ সড়কটিও খানাখন্দে ভরে গেছে। হয়ে পড়েছে চলাচলের অনুপযোগি। প্রশাসনিক, চিকিৎসা ও অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় কাজে এ দ্বীপের মানুষকে যেতে হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে। দ্বীপ থেকে উপজেলার সদরের দুরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাড়ি দিতে হয় নদী। সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, মূল ভুখন্ড থেকে চরলেঙ্টা ঘাট হয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের নদী পথ পাড়ি দিয়ে চর বালুয়ার চার খালের মাথা নামক ঘাটে যেতে হয়। চার খালের মাথা ঘাটে নেমেই কোনো সড়ক নেই দ্বীপের দিকে যাওয়ার। জোয়ার কম থাকলে নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাত্রীদের মূল ঘাট থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার আগেই নামিয়ে দেন। আর তখন ওই দুই কিলোমিটার কাদামাটি হেটেই পাড়ি দিতে হয়। আবার মূল ঘাটে নামিয়ে দেয়ার পরও সরাসরি সড়ক নেই। ক্ষেত হয়ে হেটে কিংবা মোটরসাইকেল চড়ে কিছুদুর গিয়ে উঠতে হয় সড়কে। সড়কে উঠার পরও প্রধান সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সড়কের কোথাও কোথাও এমন দশা হয়েছে যে, মোটরবাইক চালাতে হয় সড়কের দুই পাশের ক্ষেতে। এভাবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয় জনতা বাজার। অথচ চর বালুয়া দ্বীপের দক্ষিণে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বিপ উপজেলার উড়ির চর দ্বীপে পাকা, সলিং ও আরসিসি সড়ক চোখে পড়ে। সেখানে রয়েছে আধুনিক যানবাহনও। স্থানীয়দের দাবী শুধুমাত্র সীমানা জটিলতার কারণে ২০ হাজার মানুষ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল উন্নয়নের বাহিরে। অথচ এ দ্বীপ সরকারের সড়ক, পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিজ নির্বাচনী এলাকার একটি অংশ।

আবুল হোসেন নামে এক বাসিন্দা জানান, অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাঁদেরকে বসবাস করতে হচ্ছে। এ জনপদের মানুষের জন্য মাত্র একটি সড়ক। এখানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র যান হচ্ছে মোটরবাইক। বর্ষায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বর্ষায় এ সড়কে মোটরবাইকও চলাচল করে না। কাদাময় সড়কে হেটে যাতায়াত করাও দুর্সাধ্য হয়ে পড়ে। সবচেয়ে আচার্যের বিষয় হচ্ছে এ দ্বীপে প্রধান সড়ক থেকে গ্রামের দিকে যাতায়াতের জন্য কোনো সড়ক ব্যবস্থা নেই। দু-একটা থাকলেও সেগুলো সড়ক নয়, অনেকটা আইল-কান্ধির মতো। বর্ষায় দ্বীপের নারী ও শিশুরা বেশি বেকায়দায় পড়ে। পুরো দ্বীপে একটি মাত্র বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও বর্ষায় বিদ্যারয়ে ৫-৬জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। শুধুমাত্র সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাম থেকে শিশু শিক্ষার্থীরা আসতে পারে না।

স্থানীয় হাফেজ নাজিম উদ্দিন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী নিপু আক্তার বলেন, তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে হেটে আসতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। শুল্ক মৌসুমে ক্ষেতের আইল-কান্দি হয়ে হেটে তাকে প্রধান সড়কে উঠতে হয়। শুধু বাড়ি থেকে বিভিন্ন ক্ষেতের আইল-কান্দি মাড়াতেই সময় লাগে ৪০ মিনিট। তার পর প্রধান সড়ক হয়ে হেটে আসতে আরো ২০ মিনিট সময় লাগে। তার মতে, বর্ষায় ঘর থেকে বাহিরও হওয়া যায় না। কারণ সে সময় পানির কারণে ক্ষেতের আইল দেখা যায় না।

খোদ স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম আক্ষেপ করে বলেন, এখানকার মানুষ সকল নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। উৎপাদন করেন ধান, সবজি। এছাড়া এ দ্বীপ থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার কাকড়া যাচ্ছে দেশ ও দেশের বাহিরে। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দারা সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে ইতোমধ্যে প্রধান সড়কের কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে বলেও জানান এ ইউপি সদস্য।

দ্বীপে অভ্যন্তরে গ্রামগুলোতে গ্রামিণ সড়ক না থাকায় নারী, শিশুসহ সকল বয়সের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উন্নত সড়ক ও যানবাহন ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসার অভাবেই অনেককে অকালে চিরবিদায় নিতে হচ্ছে। অথচ এ দ্বীপ থেকে প্রতি বছরে হাজার হাজার টন আমন চাল উৎপাদিত হচ্ছে। এ দ্বীপের হাজার হাজার একর জমি দখল করে চাষবাদ করছে রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালীরা।

জানতে চাইলে চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, সত্যিই এ দ্বীপের মানুষ শতভাগ অবহেলিত। সড়ক ব্যবস্থাসহ দ্বীপের উন্নয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এলাকাটি সড়ক, পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিজ নির্বাচনি এলাকা। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এ দ্বীপের সড়ক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ হাতে নেবেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সন্দ্বিপের সঙ্গে সীমানা জটিলতা থাকায় উন্নয়ন কাজে বেগ পেতে হচ্ছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামিরুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, চর বালুয়া একদমই বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। এখানকার মানুষ সত্যিই অবহেলিত। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। চট্টগ্রামের সন্দ্বিপ উপজেলার সঙ্গে সীমানা বিরোধ থাকায় দুই জেলার কোথাও থেকে এখানে তেমন উন্নয়ন করা যাচ্ছে না।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো সড়ক উন্নয়ন করার সুযোগ নেই। তারপরও তাঁর উদ্যোগে ইতোমধ্যে দুটি মাটির সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রধান সড়কে চর উন্নয়ন বসতি স্থাপন প্রকল্পও (সিডিএসপি) মাটির কিছু কাজ করছে। যেহেতু সীমানা জটিলতা রয়েছে, তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে বড় কোনো বাজেটও নেই তাই পরিদর্শনকালে স্থানীয়দেরকে সড়ক নির্মাণে নিজেরা যেন উদ্যোগ নেয় সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তার প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় সবটুকু করবেন বলেও স্থানীয়দের আশ্বাস দিয়েছেন।

ওএফ

‘চর বালুয়া’,দ্বীপ,বিচ্ছিন্ন,জনপদ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close