সাভারে মেহেদি গ্রামের সাফল্য
বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানে হাত রাঙ্গাতে মেহেদির চাহিদা বা প্রচলন সেই আদিকাল থেকেই। এছাড়া ঈদের উৎসবে হাত রাঙ্গাতে মেহেদির কোন বিকল্পই নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন পার্লারে মেহেদির চাহিদা থাকে বছর জুড়েই। নারী-পুরুষ সবার মাঝেই এই মেহেদী ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়। আবার হাত রাঙ্গানোর পাশাপাশি মেহেদীর রয়েছে নানান ওষুধী গুণ।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা মেহেদী পাওয়া গেলেও ব্যবহারকারীদের কাছে চাষ হওয়া প্রাকৃতিক মেহেদী পাতার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। মেহেদি প্রেমী বা অন্যান্য ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে সাভারে বিভন্ন গ্রামে বানিজ্যিকভাবে মেহেদি চাষ করা হচ্ছে। দিনে দিনে বাড়ছে মেহেদি চাষ। ঈদ সামনে রেখে এখন কেনাকাটাও বেশ জমে উঠেছে। এদিকে সাভারে অনেক পরিবার মেহেদি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সম্পর্কিত খবর
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের উপজেলার হেমায়েতপুর, ভার্কুতা, সালমাসি, ভরারীপাড়া, লুটেরচর, বাহেরচর, মাওয়ালীপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রতিবছরই বাড়ছে মেহেদি পাতার চাষ। খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি চাষিরা নানা প্রজাতির ফুল ও লাভজনক ফসলের চাষে করেন।
সলমাসি বাহের চর গ্রামের করম আলী প্রায় এক যুগ ধরে চাষ করছেন মেহেদি পাতা। তিনি জানান, মেহেদি চাষে উৎপাদন খরচ কম। প্রতিমাসে কীটনাশক ছাড়া আর কোনো খরচ হয় না। একবার চারা লাগানোর পর গাছ বাঁচে ১০ থেকে ১৫ বছর। বছরে বাগান থেকে পাতা কাটা হয় তিনবার। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, মেহেদী বাগান থেকে পাতা সংগ্রহ করছেন চাষিরা। বাড়িতে বসে মেহেদি পাতার ডালের ছোট ছোট আঁটি বাঁধছেন। আমির হোসেন জানান, গত বছর পোকার আক্রমণে ফলন হয় কম। তবে এবার ভালো হয়েছে। গত বছর ঈদে ৫০-৬০টি মেহেদি পাতার আঁটি বিক্রি করেছেন ৫০০ টাকা। এবার ঈদের আগেই বিক্রি হচ্ছে আট থেকে নয়শ টাকা। এবার লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরাও খুশি। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মেহেদি চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া বাজারে কেমিক্যাল মিশ্রিত মেহেদি আসায় প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
পরিবার নিয়ে মেহেদি পাতা কিনতে আসা লোকমান হোসেন জানান, আগের মতো মেহেদি পাতা খুব একটা চোখে পড়ে না। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও টিউব মেহেদি দখল করে রেখেছে। তাই নতুন প্রজম্মকে পরিচিত করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক মেহেদি পাতা ব্যবহার করে বেশি ভালো লাগে। তাই পরিবার নিয়ে মেহেদি গ্রামে আসা।
লালমিয়া জানান, কৃষি কর্মকর্তারা কখনো তাদের খোঁজ রাখেন না। তারাই বেশি সমস্যার সম্মুখীন হলে নিজেরাই কর্মকর্তাদের কাছে যান। কিন্তু তাদের পরামর্শ ঠিক মতো কাজ না হলে, নিজেরাই মনমতো জমিতে সার ও কীটনাশক প্রদান করেন।
মোহাম্মদ আলাউদ্দীন বলেন, তার আড়াই বিঘা জমিতে মেহেদি গাছ রয়েছে। প্রতি মাসে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। সপ্তাতে অন্তত দুবার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আমরা কষ্ট করে মেহেদি চাষ করি। কিন্তু বাজারে বিভিন্ন দেশের টিউব মেহেদির কারণে আমরা এখন বাজার পাচ্ছি না।
মোহাম্মদ আলাউদ্দীন নামের আরও একজন কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে প্রতিমাসে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকার মতো। সপ্তাতে অন্তত ২ বার ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়। আমরা কষ্ট করে মেহেদী চাষ করি কিন্তু বাজারে বিভিন্ন বিদেশি টিউব মেহেদীর কারণে আমরা বাজার পাই না। ব্যবহার করা ঝামেলা লাগে, তাই সহজে কেউ নিতে চায় না।
আবার এ মেহেদী পাতা সংরক্ষণের নেই কোন সু-ব্যবস্থা। পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তুলনামূলক ভাবে কম দামে তা অনেক সময় বিক্রি করে দিতে হয়। গুনতে হয় লোকসান।
কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন জানান, প্রাকৃতিক মেহেদি পাতার চাহিদা প্রচুর। রাজধানীর কাওরানবাজার, যাত্রাবাড়ী, মোহম্মদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মেহেদি পাতা সরবরাহ করে থাকেন।
দামে কম ও সহজে ব্যবহার করা বলে, টিউব মেহেদি তাদের বাজার অনেকটাই দখল করে নিয়েছে। তবে টিউব মেহেদি শুধু হাতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কিন্তু মেহেদি পাতা হাতে ছাড়াও মাথায় বা ওষুধী হিসেবে ব্যবহারের বিকল্প নেই। এছাড়া মানুষ এখনো প্রাকৃতিক মেহেদির পাতার উপর ভরশা রাখেন। ফলে মেহেদি পাতার বাজারটা ছোট নয়। ক্রেতাদের চাহিদা উপর ভিত্তি করেই আমরা বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে থাকি। তবে সংরক্ষন ব্যবস্থার অভাবে মাঝে মধ্যে লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
সাভার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, সাভার উপজেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে মেহেদির চাষ হয়। মেহেদি চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের মধ্যে তা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তবে নতুন অনেক প্রথম দিকে সমস্যা পড়েন।
কিন্তু কৃষি পরামর্শ বা যারা দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করছেন এমন চাষীদের পরামর্শ নিলে, তারাও ভালেঅ করতে পারবেন। কারণ মেহেদি চাষে খরচ খুব কম। মূলত এ কারণে প্রতি বছর কৃষকদের মেহেদি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তা ছাড়া এ এলাকায় মাটি মেহেদি চাষের জন্য উপযোগী। তিন চাষিদের মেহেদি চাষ সহায়তার আশ্বাস দেন।
ওএফ