• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সেলফি ছাড়া চলেই না

প্রকাশ:  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক

যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান,দর্শনীয় স্থান এমনকি আকর্ষণীয় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হলেও সেলফি না তুললে যেন হচ্ছে না। বিশ্ব এখন সেলফি (নিজের প্রতিকৃতি ধারণ) রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেলফি প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সেলফি নেশায় গভীরভাবে আসক্ত তরুণরা।

সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করে লাইক, কমেন্টস পাওয়ার আশায় তারা বেছে নিচ্ছে ভয়ানক ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ। কার চাইতে কে কত অভিনব উপায়ে সেলফি তুলে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে আপলোড করবে তার যেন এক মহাহিরিক লেগেছে তরুণ-তরুণীদের মাঝে। তেমনি আবার সেলফি তুলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনাও। এই নেশায় মত্ত হয়ে কেউ বেঘোরে মারা পড়ছেন অথবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন।

সম্পর্কিত খবর

    সেলফি আজ এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, যা সমাজে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে বিপজ্জনক জায়গায় সেলফি তুলতে গিয়ে দেশে-বিদেশে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ২০১৪ সালের মার্চে প্রথম সেলফি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই বছর ১৫ জন, ২০১৫ সালে ৩৯ জন এবং ২০১৬ সালে ৯৮ জন ও ২০১৭ সালে ৪৬ জন সেলফি তুলতে গিয়ে মারা যান।

    ঘটনা ১: ২২ সেপ্টেম্বর’১৭ রাজধানী ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে রেল লাইনের উপরে চলন্ত ট্রেনের সামনে বসে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে সাদিকুল ইসলাম (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

    ঘটনা ২: দক্ষিণ কোরিয়ার ২৩ বছর বয়সী এক পর্যটক সেখানে ঢালের খুব কিনারে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান প্রায় দুই শ ফুট নিচে। বেশ কয়েকটি মারাত্মক আঘাতের কারণে তিনি মারা যান। তিনি যেখান থেকে নিচে পড়ে যান, সে স্থানটি যে বিপজ্জনক, তা সবাই জানে।

    ঘটনা ৩: চীনের চ্যাংশা শহরে সেলফি তুলতে গিয়ে ৬২ তলা ভবন থেকে পড়ে নিহত হয়েছেন উয়ু ইয়ংনিং নামের এক ব্যক্তি। গত ৮ নভেম্বর’১৭ ইয়ংনিংয়ের মৃত্যু হয়। উঁচু ভবনে চড়ার জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ইয়ংনিং। কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই আকাশচুম্বী ভবনের চূড়ায় উঠতেন তিনি। সেসব মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটেও প্রকাশ করতেন।

    ঘটনা ৪: গত সেপ্টেম্বর’১৭ ভারতের ন্যাশনাল কলেজ অব বেঙ্গালুরুর এক শিক্ষার্থীর পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা আলোড়ন ফেলে। বন্ধুরা যখন সেলফি তুলতে ব্যস্ত ঠিক তখনই পাশে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটে তার। ওই কলেজের ২৫ শিক্ষার্থী রামা নগরে পিকনিকে গিয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়। পরে স্থানীয় কাগালিপুরা থানার পুলিশ পুকুর থেকে ১৭ বছরের বিশ্বাসের মরদেহ উদ্ধার করে।

    ঘটনা ৫:০৯ ফেব্রুয়ারি,১৮’ বৃহস্পতিবার সকালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের স্যামসন স্টেশনে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোবাইলে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।

    ঘটনা ৬: যমুনা টিভির এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ভারতে অল্প বয়সের একটি ছেলে এক হাতে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অন্য হাতে মোবাইল হাতে নিয়ে সেলফি তুলতে পোজ দেয়। মনের ভুলে মোবাইলের ক্যামেরার বাটনে ক্লিক না দিয়ে পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দেয়। ফলে ছেলেটি সাথে-সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

    সেলফি তুলতে গিয়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত যা হয়তো আমরা জানি না। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত তরুণ-তরুণীরা আকর্ষনীয় সেলফির জন্য বেপরোয়া হয়ে এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। সামাজিক তথা পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এই ধরণের কার্যক্রম হচ্ছে।

    বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,সন্তানের শিক্ষার প্রধম ধাপ হচ্ছে পরিবার। তাই পরিবারের পিতা-মাতার প্রয়োজন তার সন্তানের খোঁজখবর রাখা। সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, নাকি সে রাতভর ফেসবুকে চ্যাট করছে? এই বিষয়ে পিতা-মাতাকেই অবগত থাকতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও ভূমিকা রয়েছে। তাঁরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করলে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হয়ে উঠবে।

    /আজাদ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close