• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নেত্রকোনা-০৪

তৃণমূলের আস্থা শফী আহমেদ, বিতর্কিত রেবেকা মমিন

প্রকাশ:  ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:১৬ | আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নেত্রকোনার সবকয়টি আসনে বর্তমানে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। পাশাপাশি দেশের অন্যাতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে আসবার ঘোষণা দেয়ার পর তা আরও বেড়ে গেছে। পাল্টে যেতে শুরু করেছে সব হিসাব নিকাশ।

বিগত সময়ে নেত্রকোনার বেশ কিছু আসন ছিল বিএনপির দখলে এদিক বিবেচনা করলে নেত্রকোনার হাওরবেষ্টিত এলাকা সংসদীয় আসন-১৬০ তথা নেত্রকোনা-৪ (মদন- মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুড়ি) ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্বাচনী আসন। বরাবরই বিএনপি'র শক্ত ঘাটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় আসনটিকে। লুৎফুজ্জামান বাবর এখন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় এই আসনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট অর্থাৎ বিএনপি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবনী।

সম্পর্কিত খবর

    এ কারণেই উক্ত আসনে এবার আ.লীগের মনোনয়ন নিয়ে চলছে শক্ত হিসাব নিকাশ। বিগত ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে বাবর পাশ করেছিলেন পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাবর মাত্র অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আ.লীগের প্রার্থী রেবেকা মোমিনের কাছে।

    প্রায় সকল নির্বাচনে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবার কারণে এই (নেত্রকোনা ৪) আসনকে সব সময়ই ‘হট সিট’ বলে বিবেচনা করা হয়।

    উক্ত আসনে বর্তমানে আ.লীগের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণ্যোগ্য নেতা শফী আহমেদ। বিগত জোট সরকারের আমলে তিনি বিভিন্ন সময়ে করেছেন কারাবরণ, হয়েছেন নির্যাতিত। সাবেক এই তুখোড় ছাত্রনেতাকে ছাড়া এই আসন এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করা বেশ কষ্টসাধ্য হবে বলে ধারণা আ.লীগের তৃণমূলের ও সাধারণ জনগণের।

    মদন পৌরসভার মেয়র আব্দুল হান্নান শামীম বলেন, আমাদের এই আসনের এমপি নিজের হাতে বিএনপি ও বাবরের লোকদের প্রতিষ্টিত করেছেন। তার কারণে আজ মূল আওয়ামী লীগ পরিবার ও কর্মীরা অবহেলিত। যার অসংখ্য প্রমান রয়েছে।

    তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে যদি বাবরের স্ত্রীকে বিএনপি মনোয়ন দেয় তাহলে আসন ধরে রাখতে হলে এ আসনে শফী ভাইয়ের কোন বিকল্প নেই।

    নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আওয়াল শাওন বলেন, নেত্রকোনার নির্বাচনী আসন গুলোর মাঝে নেত্রকোনা ৪ এবার বেশ গুরুত্বপূর্ন। বিএনপিকে প্রতিহত করতে ও আসন ধরে রাখতে এবার শক্ত প্রার্থী দিতে হবে। এদিক থেকে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফী আহমেদ। তিনি এককথায় গণমানুষের নেতা। এলাকার জনগণ এবার তাকে নৌকার কান্ডারী হিসেবে দেখতে চায়। তাকে ছাড়া এ আসনে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

    তিনি আরও বলেন, উক্ত আসনের এমপি মহোদয় বর্তমানে বয়সের ভারে অসুস্থ। তিনি গত দশ বছরেও তার নির্বাচনী আসনের অনেক ইউনিয়নে যেতে পারেন নাই, যার ফলে তৃণমূলের কর্মীরা তার প্রতি চরম ক্ষুব্দ এমনকি তার স্বামী সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল মোমিনের ভাগিনা আতাউর রহমান ননী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল থেকে ফাসির দন্ডপ্রাপ্ত হবার পরও রেবেকা মোমিন সে পরিবারের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন, যা এলাকায় একটা আলোচ্য বিষয়।

    এদিকে এলাকায় জনাবা রেবেকা মমিনের বিরুদ্ধে সাবেক বিএনপি নেতা ও তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারকে দলে টানার অভিযোগ রয়েছে। সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের ব্যক্তিগত সহকারি তোফায়েল আহমেদের পিতা ও এমপি’র ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে খ্যত মোহনগঞ্জ আ.লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র লতিফুর রহমান রতনের পিতা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। লতিফুর রহমান রতনের পিতার নামে ট্রাইবুনাল থেকে সমন এসেছিল। এছাড়াও বিগত জামাত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে খালিয়াজুড়ি এলাকার আতাউর রহমান (চেয়ারম্যান), লোকমান হেকিম (চেয়ারম্যান) ও মোহনগঞ্জ এলাকার তেতুলিয়ার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিএনপি-জামায়েত জোট সরকারের লুতফুজ্জামান বাবরের কর্মী ও আস্থাভাজন ছিলেন। এদের মধ্যে আতাউর রহমান এক অনুষ্ঠানে লুতফুজ্জামান বাবরের হাতে স্বর্ণের ধানের শীষ তুলে দিয়েছিলেন যার স্থিরচিত্র এখন এলাকার সকলের কাছেই রয়েছে। এছাড়াও রেবেকা মোমিনের বর্তমান ঘনিষ্টজন মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন যিনি বর্তমানে উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর এমপি রেবেকা মমিনের হাত ধরে এরা এখন এলাকায় আ.লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এতে বেশ মর্মাহত ও হতাশ।

    প্রসঙ্গত, নেত্রকোনা -০৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৫শ ৮৬ জন। ১৯৯১ সালে ৭ হাজার ৮শ ৯৮ ভোট বেশী পেয়ে বিএনপি থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আবারো ১৫ হাজার ৮শ ৩৫ ভোট বেশী পেয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আব্দুল মমিন নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো ৩ হাজার ৮শ ৫২ ভোট বেশী পেয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর এমপি নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে আবার আওয়ামীলীগ প্রার্থী রেবেকা মোমিন ১৬ হাজার ৭শ ৩১ভোট বেশী পেয়ে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় রেবেকা মমিন এমপি নির্বাচিত রয়েছেন। তবে আসন্ন একাদশ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল থেকে বর্তমান এমপি রেবেকা মমিন মনোয়ন চাইলেও বয়সের ভারে তিনি এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরেছেন। তাই এবার নতুন কোন মুখ আসবে নৌকার মাঝি হয়ে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।

    /এ আই

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close