• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে দুই বোনের স্বপ্ন জয়

প্রকাশ:  ০৭ মে ২০১৮, ১২:৩৮ | আপডেট : ০৭ মে ২০১৮, ১২:৪৯
মেহেদি হাসান (মাদারীপুর)

কবিতা ও মোহনা। বাবার আদর কতটুকু মনে আছে খেয়াল নেই ওদের। মায়ের ক্লান্তিহীন চেষ্টা ও নিজের অদম্য মানসিকতাকে সম্বল করে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কথা রেখেছে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর জিপিএ ৫ পাওয়া এই দুই বোন। এর আগে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ ৫ অর্জন করে তারা।

৯ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু হয়। তখন ওদের বয়স মাত্র ৭ বছর। আর্থিক অনটনের সংসারে লেখাপড়া চালিয়ে নেবার সাহস ওদের মায়ের প্রথমত অবস্থাতে না হলেও লেখাপড়ার প্রতি দূর্বার টান ও স্বপ্নজয়ের মানসিকতাই লেখাপড়া চালিয়ে যাবার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ওদের মনে। একমাত্র লেখাপড়া করতেই হবে এই ধারণা মনে পুষে নিজ গ্রাম থেকে নানা বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয় এই আপন দুই বোন।

সম্পর্কিত খবর

    আলাপচারিতায় পরিবারের সদস্যরা জানান, অভাব-অনটনের সংসারে টানাপড়েন লেগে থাকলেও তা নিয়ে কখনোই মন খারাপ করেনি এই দুইবোন। ভালো পোষাকের জন্য মাকে চাপ দেয়নি। সামর্থ অনুযায়ী যা পেয়েছে তাতেই ছিল সন্তুষ্টি। তবে লক্ষ্য ছিল ভালো রেজাল্ট করার মধ্য দিয়ে জীবনে ভালো কিছুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্য থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে জিপিএ ৫ ও বৃত্তি প্রাপ্তি ওদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে।

    এরপর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাতেও সকল বিষয়ে ৮০ নম্বর নিয়ে জিপিএ ৫ পায় এই দুই শিক্ষার্থী। স্বপ্নটা বেড়ে যায় আরো। এসএসসিতে একই ধারা বজায় রেখে ভালো একটা কলেজে লেখাপড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে কবিতা-মোহনা।

    বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৮ সনের এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করে স্বপ্ন জয়ের ধাপে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো আপন দুইবোন।

    তবে জিপিএ ৫ পেয়েও কেন যেন স্বতঃস্ফুর্ততা নেই ওদের মনে। এদিকে রেজাল্টের কথা মনে এনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়, অন্য দিকে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা এই শংকায় আনন্দ চুপসে যায় মুহুর্তে। আর্থিক অনটন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শহরের ভালো একটি কলেজে ভর্তি হবার ক্ষেত্রে।

    জানতে চাইলে মেধাবী শিক্ষার্থী কবিতা বলেন, ডাক্তার হবার ইচ্ছা থেকেই সায়েন্স নিয়ে পড়া। ডাক্তারই হতে চাই। পড়তে চাই শহরের ভালো একটি কলেজে। কিন্তু পারবো কিনা তা এখনো নিশ্চিত নই। শহরে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা যে আমাদের নেই!

    ছোট বোন অপর মেধাবী ছাত্রী মোহনা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের নিয়ে মায়ের যুদ্ধ। আমরা ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে হবে কি না বুঝতে পারছি না।

    তিনি আরো বলেন, ভালো একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার ইচ্ছা।

    মা কল্পনা বেগম বলেন, ওর বাবা যখন মারা যায় তখন ওদের বয়স ৭ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিই। টানাটানির সংসারে কোন মতে ওদের নিয়ে বেঁচে আছি।

    তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক থেকে এই পর্যন্ত দুই বোনই ভালো রেজাল্ট করে আসছে। স্বপ্ন বড়। কিন্তু ভালো কোন কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল আমরা নই। ভাগ্যে কি আছে জানি না!

    উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ওরা দুই বোন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে বলে বিশ্বাস করি।

    বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশ্রাফুল আলম বলেন, ওরা মেধাবী এবং দরিদ্র। এই কারণেই বিদ্যালয়ের বেতন, টিউশন ফি, ফরম পূরনের টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে এই দুইবোনকে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। ওরা আমাদের গর্ব।

    ওএফ

    এসএসসি জিপিএ ৫,অর্জনে যাযনী দুই,দুই বোনের স্বপ্ন জয়
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close