• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নরসিংদী-৫ আসনে প্রচারণায় এগিয়ে ব্যারিস্টার তৌফিক

প্রকাশ:  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৩৭ | আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদন

মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র আর আঁড়িয়াল খা- এই তিন নদী বেষ্টিত বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল রায়পুরা। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নরসিংদী জেলার এ উপজেলাটি দেশের একটি অবহেলিত জনপদ। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রায়পুরা উপজেলা নিয়ে নরসিংদী-৫ সংসদীয় আসন গঠিত। দেশের অন্যসব প্রান্তের মতোই  দুর্গম এ চরাঞ্চলেও বইছে এখন ভোটের হাওয়া। 

নরসিংদী-৫ আসনে ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী তৎপর থাকলেও বিএনপি প্রার্থীদের এখনো মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রধান দুটি দল ছাড়া রায়পুরায় অন্য দলগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি নেই বললেই চলে। চরবাসীদের জল্পনা-কল্পনা তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়েই। এ আসনের টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর এই সদস্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়তে চান।  

সম্পর্কিত খবর

    দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে একই সংসদ সদস্য থাকায় স্থানীয় রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি, একসময়ের গণবান্ধব সংসদ সদস্য  রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর কাছে পৌছাতে সাধারণ মানুষের এখন বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতার রায়পুরার সংসদ সদস্য হিসেবে নতুন মুখের দাবি তুলেছেন।  এমনকি বর্তমান এমপির বিরোধিতা করছেন তার পরিবারের সদস্যরাই।এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর বিরোধিতা করে তারই ছোটভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু নির্বাচনে আওয়মী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও এ অাসন থেকে ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবির কাউছার, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও কবি শামসুর রাহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান  ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সামছুল হক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী।

     

     

    নরসিংদী-৫ আসনে নৌকা প্রতীকের হাফডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে এলাকাবাসীর মাঝে আলাদা আবেদন তৈরি করেছেন ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান। বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন তার নানা, সেইসূত্রে তৌফিক বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র।তার আরেক পারিবারিক পরিচয় তিনি কবি শামসুর রাহমানের  ভ্রাতুষ্পুত্র। বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার তৌফিক দীর্ঘদিন ধরেই রায়পুরার উন্নয়নে নিরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ জনপদে  প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় তাদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ব্যারিস্টার তৌফিক রায়পুরার স্যাটেলাইট ক্লিনিককে মানসম্পন্ন করে তুলতে কাজ করছেন। শিক্ষায় পশ্চাদপদ চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য রায়পুরার পাড়াতলি কলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে রূপান্তরের উদ্যোগও নিয়েছিন তিনি। পাশাপাশি এলাকার দরিদ্র মানুষকে দীর্ঘদিন ধরেই বিনা পয়সায় আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

    নিজের এইসব সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পূর্বপশ্চিমকে ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান বলেন,  আমাদের এই রায়পুরা নদীবেষ্টিত দুর্গম এলাকা হওয়ায় সবদিক থেকেই পিছিয়ে আছে। এখানে উচ্চ শিক্ষার জন্য তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ভালো  চিকিৎসার সুযোগ নেই। যাতায়াতের অবকাঠামোও অনুন্নত। এ এলাকার সন্তান হিসেবে নিজের  ব্যক্তিগত কমিটমেন্ট থেকেই উন্নয়নমূলক সামাজিক  কর্মকাণ্ড জড়িত হয়েছি। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তাভাবনা করার বহু আগে থেকেই এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত। এইসব কাজকে আরো এগিয়ে নিতেই এলাকাবাসীর পরামর্শে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই।।

    ব্যরিস্টার তৌফিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আত্মীয়তার সূত্রে মনোনয়ন নয়, আমার দীর্ঘদিনের জনসম্পৃক্ততা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় দল যদি মনে করে আমাকে মনোনয়ন দেবে। দল যদি মনোনয়ন না দেয়, তবুও রায়পুরার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আমার অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে। 

     

     

    গত কয়েকমাস ধরে রায়পুরার  ২৪টি ইউনিয়নে ব্যাপক জনসংযোগ চালাচ্ছেন ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন। এসব বৈঠতে  আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি চরাঞ্চলের বহুল সমালোচিত টেটাযদ্ধে বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এ প্রসঙ্গে ব্যরিস্টার তৌফিক বলেন, চরাঞ্চলের কুখ্যাত  টেঁটাযুদ্ধের কারণে রায়পুরা প্রায়ই পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে।  তুচ্ছ কারণে টেটা নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষের ঝাপিঁয়ে পড়ছে। গত আট বছরে চরাঞ্চলে ৮৮টি লাশ পড়েছে। সন্ত্রাস কবলিত জনপদ হিসেবে রায়পুরা পরিচিতি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। প্রশাসনের পক্ষ ধেতে টেটাযুদ্ধ বন্ধের কোনো  কাজে আসছে না। আসলে গণসচেতনা এটা বন্ধ করা অসম্ভব। আর তাই নির্বাচনী প্রচারণায় আমি যেখানেই যাচ্ছি টেটাযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছি, গণমত গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি।

    দেশের মানুষের কাছে রায়পুরার পাড়াতলি কবি শামসুর রাহমানের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। অথচ কবির জন্মবার্ষিকী বা প্রয়াণদিবসে শামসুর রাহমানের স্মরণে দীর্ঘদিন কোনো আয়োজন ছিল না এখানে। কবি শামসুর রাহমানের ভাইয়ের ছেলে ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমানই পাড়াতলীতে কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে  স্মরণ-অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেন।এ উপলক্ষে শুভাকাঙ্খীদের মিলনমেলা বসে কবির বাড়িতে। প্রতিবছর ঢাকা থেকে অনেক কবি-সাহিত্যিক ও খ্যাতিমান বক্তিত্ব যোগ দেন এসব অনুষ্ঠানে। পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসব আমেজ। কবির স্মৃতিরক্ষায় এরই মধ্যে ব্যারিস্টার তৌফিক গড়ে তুলেছেন শামসুর রাহমান ফাউন্ডেশন। কবির গ্রামের বাড়ি দেখতে আসা আতিথেয়তা দেওয়া হচ্ছে এই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি কবি শামসুর রহমানের বাড়িকে জাদুঘরে রূপান্তরের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। কবি শামসুর রাহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এসব কাজ বাস্তবায়নে ব্যারিস্টার তৌফিককেই পালন করতে হচ্ছে প্রধান ভূমিকা।

     

     

    ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমানের বৈচিত্র্যময় কর্মতৎপরতায় এলাকায় গড়ে ওঠেছে তার ব্যাপক সমর্থন ও জনপ্রিয়তা। বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদী একাধিক মহল।নরসিংদী-৫ রায়পুরা এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, আওয়ামী লীগ নেতা ও কবি শামসুর রাহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তৌফিকের জনসংযোগে নানাভাবে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। একাধিকবার নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন। তবে স্থানীয়রা স্বতস্ফুতভাবে এসব হামলা প্রতিরোধে এগিয়ে আসায় এখন পর্যন্ত বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি।

    এনই/

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close