• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য: যৌথসমীক্ষা যাচাইয়ে বেইজিংয়ে বৈঠক

প্রকাশ:  ২০ জুন ২০১৮, ১৪:৫৭ | আপডেট : ২০ জুন ২০১৮, ১৫:৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে চীন থেকে বড় বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ, আর চীনের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়ানো। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে দুইদেশ কতোটা লাভবান হবে, এই নিয়ে যৌথ সমীক্ষা যাচাই কমিটির দুদিনের বৈঠক শুরু হয়েছে বেইজিংয়ে । এটিই উভয় দেশের মধ্যে এফটিএ-বিষয়ক প্রথম বৈঠক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম।

সূত্র আরো জানায়, এফটিএর বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো তাড়াহুড়ো করতে চায় না। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। কেননা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশ বছরে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিপরীতে বাংলাদেশ চীনে রফতানি করে বছরে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ কারণে এফটিএর আগে বিভিন্ন দিক ভালো করে খতিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (এপিটিএ) আওতায় ২০১০ সাল থেকে চীনের বাজারে ৪ হাজার ৮৮৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করার প্রস্তাব চীনের পক্ষ থেকে প্রথমে দেয়া হয়। এফটিএ করার পক্ষে চীনের যুক্তি হলো— এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে অধিক হারে চীনের বিনিয়োগ আসবে। আর বাংলাদেশের রফতানিও বহুমুখী হবে। এফটিএর ফলে বাংলাদেশের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তা নিশ্চিত হতে চায় সরকার। আর বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই পদক্ষেপ নেবে সরকার।

২০১৫ সালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে দেশটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি যৌথ সমীক্ষা যাচাই গ্রুপ গঠনে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সে অনুযায়ী দুই দেশ গ্রুপ গঠন করে। এ গ্রুপ দুই দেশের এফটিএর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজ করছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, চীন বিশ্ববাজারে একটি উদীয়মান শক্তি। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর হলে তাতে বাংলাদেশই লাভবান হবে। তবে শুধু মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। কারণ বাংলাদেশ চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বা কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মতো চুক্তি হলে এর মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সেবাসহ প্রায় সব বিষয় থাকবে। এর ফলে নিশ্চিত বিনিয়োগও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি বাণিজ্যও বৃদ্ধি পাবে। তবে এশিয়ান হাইওয়ে, এশিয়ান রেলসংযোগ বা বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে চীনকে অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ যেহেতু এ অঞ্চলের সংযোগস্থল হতে চায়, ফলে করিডরকে ঘিরে শিল্পপার্ক বা বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এশিয়া প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তির (এপিটিএ) আওতায় ২০১০ সাল থেকে চীনের বাজারে চার হাজার ৮৮৬টি পণ্যেও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এফটিএ করার ক্ষেত্রে বেজিংয়ের যুক্তি হলো, এফটিএ’র মধ্য দিয়ে ঢাকায় চীনের বিনিয়োগ বাড়বে। সেই সঙ্গে ঢাকার রফতানিও হবে বহুমুখী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ এইচ এম আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, যৌথ সমীক্ষা ও চুক্তি এক জিনিস নয়। এ ধরনের চুক্তি করার আগে বহু পক্ষের মতামত গ্রহণ ও সমীক্ষা প্রয়োজন হয়। আলোচনা চলছে, চলবে। পরবর্তী বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ সবার আগে। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য কিংবা শিল্পগ্রস্ত হয় এমন কোন বিষয় আছে কী না সেটা যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ চুক্তি হলে চীনের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ চাওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ হবে, কীভাবে সেটা হবে তারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ-চীন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close