• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এই ঈদে ফ্যাশন বৈচিত্র্য

প্রকাশ:  ৩১ মে ২০১৮, ০৫:৪২
লাইফস্টাইল ডেস্ক

একটি করে দিন যায় আর এগিয়ে আসে সেই কাঙ্খিত দিনটি, উৎসব-আনন্দের উচ্ছাসে মাাখা ঈদুল ফেতর। ঈদ মানেই তো নতুন পোশাক।ঈদের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় মন মতো নতুন পোশাক না পেলে। ঈদের কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি চলতে থাকে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে। নানা রং-ঢং ও আকার-আকৃতির বৈচিত্রে তৈরি হয় নতুন সব পোশাক। ফ্যাশনে যুক্ত হয় নতুন ট্রেন্ড।

ঈদের পোশাক কিনতে বিপনি বিতান গুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।। আপনি যদি এখনও ঈদের পোশাক না কিনে থাকেন তবে জেনে নিতে পারেন এবার ঈদে ঠিক কী ধরনের বা কী ডিজাইনের পোশাক চলছে। হালের ট্রেন্ডে জায়গা করে নিয়েছে কী ধরনের পোশাক। কিছুদিন আগেও ঈদ ফ্যাশন ডিজাইনে ভিন দেশি বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের প্রভাব পড়লেও, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউসগুলোই তরুণ-তরুণীদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করছে।

সম্পর্কিত খবর

    গরম আর বর্ষার মিলমিশ

    এই ফাটা রোদ তো এই বৃষ্টি, আবার ভ্যাপসা গরম। ঈদ এবার বর্ষার একেবারে শুরুর দিকে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, ঈদের পোশাকে বৈচিত্র্যময় নকশার পাশাপাশি কাপড়ের বুনন ও রঙের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন ডিজাইনাররা। বেশির ভাগ পোশাকের ফেব্রিক সুতি ও লিনেন। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রে ডিজাইনাররা হালকা শেডগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বর্ষার কারণে রঙের ক্ষেত্রে নীলের আধিপত্য থাকছে। এর পাশাপাশি আছে সবুজ, আসমানি ও ম্যাজেন্টার মতো রং। বডিফিটেড নয়; বরং লুজ ফিটেড পোশাকের প্রতি আগ্রহ যেন ক্রেতাদের। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ধারা ও কাঁচামালের প্রাপ্যতা—পরিকল্পনার আগে ফ্যাশন হাউসগুলোকে এসব নিয়েও ভাবতে হয়। জমকালো ও সাধারণ এই দুই মিলিয়ে ঈদের পোশাক বাছাই করা খানিকটা কঠিন। উত্সব, ভ্যাপসা গরম, সঙ্গে বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই পোশাকের ডিজাইন করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বেছে নিয়েছেন জমকালো ও স্বস্তিদায়ক কাপড়।

    মেয়েদের পোশাক এবার ঈদে ডিজাইন বৈচিত্র্য কম থাকলেও গতানুগতিক সালোয়ার কামিজ ছাড়াও অনেকেই পরছেন প্যাটার্ন ভিন্নতার পোশাক। ফেব্রিক ভেরিয়েশনের পাশাপাশি এতে থাকছে প্রাচীন ভারতীয় ও মরোক্কান ঐতিহ্যের ছোঁয়া। কামিজের ঘের হচ্ছে নানা রকম। সম্ভবত দেশি ধাঁচের পোশাকগুলোই ঈদের প্রথম দিনে বেশি পরা হয়। সালোয়ার কামিজ ছাড়াও ঈদ কালেকশনে থাকছে বিভিন্ন ডিজাইনের ফতুয়া, টপস, শাড়ি ইত্যাদি। মেয়েদের পোশাকে বৈচিত্র্য এসেছে কাটিংয়ে। লং কাটের একটি কামিজ যেকোনো নারীকে সহজেই করে তোলে অনন্য। আড়ং, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন'স সহ বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউজ লং কামিজের কালেকশন এনেছে।কামিজের ঝুল কখনো পেছনে বেশি থাকছে আর সামনে কমে যাচ্ছে। কখনো সামনে-পেছনে ঝুল ঠিক আছে কিন্তু সাইড থেকে নেমে গেছে। এভাবে নানা ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে ঈদ কালেকশনে।

    গরম আবহাওয়ায় সবাই চায় পোশাক পরে যেন স্বস্তি পাওয়া যায়। আর তাই এবার সবার পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে পাকিস্তানী লন। বাহারি রঙ আর ডিজাইনের এসব লনের চাহিদা রয়েছে প্রায় সকল বয়সী নারীর মাঝে। সুতি ওড়না ও হাতার লনও যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে শিফন জর্জেটের ওড়না ও হাতার লন। আগেকার মতো বড়সড় ওড়না পরার চল নেই আর। সেই স্থান জায়গা করে নিয়েছে কেপ। কেপ হলো কামিজের ওপর এমন একটা কাপড় যেটি গলার চারপাশে গোল হয়ে অবিকল ওড়নার মতোই দেখায়। কেপ যেকোনো আউটফিটে একটা মডার্ন লুক এনে দেয়। দোকান ভেদে এসব লনের দাম উঠানামা করেছে ১২০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। তবে, একটু কম দামে পেতে চাইলে যেতে পারেন ইসলামপুর বা নিউমার্কেটে।

    তরুণীদের মাঝে এবার গাউন কেনার আগ্রহ বেশ দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশের এই পোশাকটিকে দেশীয় চাহিদায় ক্রেতাদের কাছে নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যেই দেশীয় বুটিক হাউজগুলো পার করছে ব্যস্ত সময়। আড়ং, কে ক্র্যাফট, রঙ সহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলো নিয়ে এসেছে সুতির গাউন থেকে শুরু করে জমাকালো কাজ করা গাউন। কাটাছাটে আছে ভিন্নতা। ক্রেতাদের স্বাস্থ্য, উচ্চতা সবদিক খেয়াল রেখেই বিক্রেতারা গাউনের যোগান রেখেছেন। আর তাই তো তরুনীরা লুফে নিচ্ছে নিজের পছন্দমত গাউন। ঈদের বাজারে এবারও সালোয়ার হিসেবে নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে “পেলাজো” বা চওড়া মুহুরির সেলোয়ার। চুড়িদারের চাহিদা ইদানিং তুলনামুলক কম। ব্লকের সেলোয়ার কামিজগুলোও এবার বেশ চলছে। ডিজাইনেও এসেছে নতুনত্ব। ঈদ সামনে রেখে রাজধানীরশপিং মল গুলো ঘুরে দেখা যায়, এবার নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে শিফন জর্জেট, কাতান আর জামদানীর শাড়ি। ব্লাউজে চলছে পেছন দিয়ে খোলামেলা কাট। শাড়িতে জরি, পুতি, ভারী স্টোনের কাজও এবার বেশ চোখে পড়ছে। এসব শাড়ির বেশির ভাগই ভারত থেকে আমদানিকৃত।

    ঈদে রেডিমেট পোশাকের বাজার বরাবরের মতোই দখল করে রেখেছে ভারতীয় সালোয়ার-কামিজ আর লেহেঙ্গা। ভারত থেকে আসা গাউন ধরনের পোশাক মেয়েরা ইদানিং বেশ ছন্দ করছে। বাজারে এ ধরনের পোশাক হুররাম, বাহুবলী-২ নামে বিক্রি হচ্ছে।

    ছেলেদের পোশাক এই ঈদের বাজারে ছেলেদের ফ্যাশন খুব বেশি পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। ঈদে ছেলেদের ফ্যাশনে পাঞ্জাবির বিকল্প নেই। প্রতিবারেরমতোই ঈদকে সামনে রেখে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সাজিয়েছে পাঞ্জাবির পসরা। ঈদের বাজারে বেশি চোখে পড়ে অলওভার বা পাঞ্জাবিজুড়ে প্রিন্ট। এতে নকশা হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে ফুলেল মোটিফ, জ্যামিতিক মোটিফের নানা ধরন। ফুলের বাইরে পাতা, ময়ূর, শাখা-প্রশাখা জাতীয় শৈলী এবারের ঈদ ট্রেন্ডে ঢুকেছে। পাঞ্জাবি যেন হয়ে উঠেছে ডিজাইনারের রংকরা ক্যানভাস। ফ্যাশন হাউসগুলোর পাঞ্জাবির সংগ্রহে থাকছে নতুন নকশা, নতুন রং। কাটিংয়েও এসেছে পরিবর্তন, বাজার দখল করে আছে শর্ট আর সেমি লং পাঞ্জাবি। সাথে শর্ট কাটের ফতুয়াও বেশ ট্রেন্ডি এখন।চেক নয়, ছাপা নকশার শার্টই এবার ঈদ ফ্যাশনে বেশি চলছে। বাদলা আবহাওয়া য় বৈচিত্র্যময় ছাপা নকশার শার্টের চাহিদা বেশি। ঈদ ফ্যাশন কেমন হবে তা অনেকটা নির্ভর করে ঋতু আর ট্রেন্ডের ওপর।

    এবারের ঈদ হচ্ছে বর্ষার শুরুতে। এমন আবহাওয়ার কারণে উৎসবে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে ক্যাজুয়াল শার্ট ।বর্ষাকালে ঈদ বলে নীল রঙের অনেক পোশাক বাজারে। নানা ধরনের ওয়াশ করে ফেড করা শার্টও ঈদের বাজারে ভালো চলছে। পাশাপাশি গরম আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই তরুনরা এবারও পোলো টি শার্টগুলোকে পছন্দের তালিকায় রেখেছে।

    ছোটদের পোশাক

    ঈদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি চুয়ে যায় ছোটদেরই। শিশুদের জন্য ঈদের বাজারে ওঠেছে বৈচিত্রময় পোশাক।মেয়ে শিশুদের জন্য ঘের দেওয়া লম্বা কামিজ যেমন চলছে, তেমনি ছেলে শিশুদের পাঞ্জাবিতে লাইন কাটের ব্যবহার বেশি। শিশুরা সারাদিন জমকালো পোশাক পরে থাকতে পারে না। সেজন্য সুতি, ডেনিম বা জিনসের প্যান্ট, খাটো হাতার শার্ট ও ফতুয়া দেওয়া যেতে পারে। এবার মেয়ে শিশুদের জন্য পার্টি ফ্রক, ঘাগড়া চোলি ও লেগিংসের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজও পরতে পারে এবারের ঈদে। কাতান, টিস্যু, মসলিন ও সার্টিনের ব্যবহার ভালো লাগবে পার্টি পোশাকে। এছাড়া সুতির কাপড় তো রয়েছেই।

    বড়দের মতোই ছোটদেরপোশাকের নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে কারচুপি, এমব্রয়ডারিসহ হাতের কাজ। এছাড়া রয়েছে সিল্ক, মসলিন কাপড়ের পার্টি পোশাক। বাচ্চাদের জন্য বরাবরের মতো এবারও বেছে নেওয়া হয়েছে উজ্জ্বল রং। আড়ং, রঙ, নিত্য উপহার, মেঘ, বরণ, যাত্রাসহ ছোট-বড় সব ফ্যাশন হাউজ ঈদকে সামনে রেখে তাদের নিজেদের ডিজাইন মেলে ধরেছে শিশুদের রঙ-বেরঙের পোশাক দিয়ে। ছেলে শিশুদের জন্য প্রচলিত চেক ডিজাইনের টি-শার্টের পাশাপাশি বিভিন্ন রং ডিজাইনের টি-শার্ট বিক্রি হচ্ছে শোরুমগুলোতে। গরমে শিশুদের প্রশান্তির কথা ভেবে গেঞ্জি কাপড়ের টপ, টি-শার্ট, প্যান্ট এনেছে বিভিন্ন ব্যান্ড।

    মেয়ে শিশুদের জন্য সুতির টু-পিস, থ্রি-পিস, ফ্রকের বড় সংগ্রহ এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো।

    ফ্যাশন হাউজগুলোতে বৈচিত্রের পসরা ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাকে অত্যধিক চাকচিক্য এড়িয়েই পছন্দের ঈদ পোশাক বেছে নিচ্ছে অনেক তরুণী। এবার ঈদে কাপড় ও কাটিং বৈচিত্র্য নিয়ে ঈদের পোশাক এনেছে আড়ং, সেইলর, ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, ইনফিনিটি, গ্রামীণ ইউনিক্লো, রঙ বাংলাদেশ (ওয়েস্ট রঙ), ইয়াংকি, অঞ্জন’স, ইয়োলো, জেন্টল পার্ক, আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজসহ বিভিন্ন দেশি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড। আর ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাকই এনেছে ব্র্যান্ড স্টোরগুলো।

    ঈদে ফ্যাশন বৈচিত্র্য,ঈদে ফ্যাশন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close