• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

যমুনার চরে বাদামের বাম্পার ফলন

প্রকাশ:  ২৬ মে ২০১৮, ১১:৫৮
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালী নদীর চরাঞ্চল থেকে বাদাম উত্তোলন শুরু হয়েছে। বিনা মুলধনে নদীর পতিত জমিতে বাদাম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে চাষিরা। জেলার ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার চাষিরা জমি থেকে বাদাম তুলে বাড়ির উঠানে শুকিয়ে নিচ্ছে। সামনে ঈদ আসছে তাই বাদাম নিয়ে কাটামাড়াই এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা।

হাটে বাজারে বাদাম বিক্রির অর্থ দিয়ে অনেক পরিবাই নতুন জামা কেনাকাটা করবে। বাদামের ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে উপজেলার হাট- বাজারগুলোতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। যেন ঈদ আনন্দ লুকিয়ে আছে বাদাম খোসায়। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা ও বাঙালী নদীর অসমতল চরের জমিতে সেচ নির্ভর অন্য কোন ফসল করা সম্ভব হয় না।

সম্পর্কিত খবর

    বৃক্ষ বিহীনচরের মধ্যে উত্তপ্ত বালু আর টানা রোদের কারণে সবজি ফলাতে পারে না চাষিরা। তাই দুই নদীর হাজার হাজার বিঘা জমি পতিত থাকে। এই পতিত জমিতে স্থানীয় নদী ভাঙ্গন মানুষগুলো বাদাম চাষ করে থাকে প্রতি বছর। এই বাদম চাষিদের বড় অংশই ভূমিহীন। ভূমিহীন এই চাষিরা সারা বছর যমুনা ও বাঙালি নদীর উভয় পাশে জেগে ওঠা নদীর বালু চরে বাদাম চাষ করে থাকে। এবছর সারিয়াকান্দিতে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।

    গত বছরের তুলনায় এবার বাদাম চাষী বৃদ্ধি পেয়েছে। আশ্বিন- কার্তিক মাসে বীজ বপন করে বৈশাখের শেষে বাদাম কাটামাড়াই করা হয়। বীজ বপনের পর হতেই আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের ইন্দুরমারা চরের বাদাম চাষী আলমগীর হোসেন ৩ বিঘা, বাছেদ মিয়া ১ বিঘা, সোহেল ব্যাপারি ১ বিঘা, কাজলা চরের ছালাম ব্যাপারী ৬ বিঘা, হাসেম আলী ২০ শতক, বোহাইল ইউনিয়নের ধারাবর্ষা চরের মানিক মিয়া, কাসেম মিয়া হাসেম মিয়া ২ বিঘা করে ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নের টেকামাগুড়া চরের চাষী খয়বর প্রামানিক ৮বিঘা, রশিদ মুন্সী ৩বিঘা, মাছির পাড়া চরের তফিজ আকন্দ ২বিঘা, আব্দুল আকন্দ ৯ বিঘা ও আজিজার রহমান ১০ বিঘা জমিতে বাদামের আবাদ করেছেন।

    তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এবার ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বীজ ক্রয় করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ কেজি বীজ বপন করে নিড়ানি দিয়ে ফলনের অপেক্ষা করতে হয়। সেচের প্রয়োজন হলে নদীর পানি সেচে বাদাম ক্ষেতে দিলে বাদামের ভাল ফলন পাওয়া যায়। চাষবাদের পর থেকে ফলন ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘায় খরচ হয় আড়াই হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ করে বাদাম পাওয়া যায়। আর যে সব চাষিরা পানি সেচও দেয়নি বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদী ইন্দুরমারা চরের বাদাম চাষী আলমগীর হোসেন, বাছেদ মিয়া জানান, চরের জমিতে বাদামের চাষের পর একটু সার ও পানি সেচ দিলে বাদামের ফলন দ্বিগুণ পাওয়া যায়। অনেকেই সার দিয়েছে।

    আবার কেউ নদীর পানি সেচ দিয়ে বাদাম চাষ করে ফলন ঘরে তুলেছে। গতবারের তুলনায় এবার বাদামের দাম বেশি হওয়ায় লাভও এবার বেশি হবে। কাটা মাড়াইয়ের পর উপজেলা বিভিন্ন হাটে-বাজারে প্রতি মণ বাদাম ১ হাজার ৮শ’ হতে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর চরের বাদাম ব্যাবসায়ী জামাল আকন্দ, হজরত প্রামানিক ও আমিনুল ইসলাম জানান, তারা প্রতি মণ বাদাম চরের জমি থেকে ১ হাজার ৪শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা দওে ক্রয় করে থাকে। চর থেকে বাদাম ক্রয় করা, ঘোড়ার গাড়ী ভাড়া, নৌকা ভাড়া, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন ভাড়া দিতে হয়।

    এ কারণে চরের বাদাম প্রতি মণ সর্ব্বোচ দেড় হাজার টাকা মণে ক্রয় করে থাকে। আর হাট থেকে ১৭ থেকে ১৮ শত মণে ক্রয় করে থাকে। ব্যবসায়িরা জানান, অল্প পরিশ্রমে চাষীরা চরের পতিত জমিতে বাদামের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এই বাদাম বিক্রির টাকা দিয়ে যমুনা নদীর ভূমিহীন চরের বাসিন্দারা ঈদ আনন্দ করবে। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চরাঞ্চলের জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। ধুনট উপজেলার যমুনার বৈশাখি, রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, বতুয়ার ভিটা ও পুকুরিয়া চরাঞ্চলে প্রায় তিন হাজার হেক্টর পতিত জমিতে বাদাম চাষ করে এখন উত্তেলন শুরু হয়েছে।

    ঈদের আগেই এই বাদাম রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করবেন। বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাসি এলাকার ইবনে সউদ জানান, যমুনা নদীর জেগে ওঠা চরে এবছরও বাদাম চাষ করেছে। যাদের জমি নেই তারা চরের পতিত জমিতে সারা বছর বিভিন্ন ফসল চাষ বাস করে থাকে। এবছর বালু পরা চরে বাদাম চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছে। ঈদের আগে এই বাদাম বিক্রি করে ভ’মিহীন চাষিরা ঈদের আনন্দ করবে। এবছর প্রতিবিঘা বাদাম বিক্রি করে খরচ বাদে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার শহরে বাড়ি ঘাটের বাদাম চাষিরা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে যমুনা নদীর ভাঙনে ১৪টি গ্রামের বসভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়। ফলে পথে বসে হাজার হাজার সমৃদ্ধ কৃষক। ২০ বছর পর যমুনা বুকে জাগতে শুরু করে নতুন নতুন চর।

    প্রথম দিকে চরের কৃষকদের কোন কাজেই আসতো না। কিন্তু ৭-৮ বছর আগে কয়েকজন চাষি চরের জমিতে স্বল্প পরিসরে চিনা বাদামের আবাদ শুরু করেন। এরপর থেকে প্রতি মৌসুমে বাদাম চাষ হয়। ফলন পাওয়া যায় বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ মণ। চাষকৃত বাদাম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ১৭ থেকে ১৮ শত টাকা মণ। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, জেলায় যমুনা নদীর চরে বাদামের চাষ ভাল হয়ে থাকে।

    জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮০ হেক্টর জমি। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বাদম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া যাবে বগুড়ায় প্রায় ২ টন করে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদুজ্জামান জানান, বাদাম চাষে যেসব চাষীরা যত্ন নিয়েছেন তাদের ফলন বাম্পার হয়েছে এবং যারা যত্ন কম নিয়েছেন তাদের বাদামের ফলন কম হয়েছে। গতবছরের তুলনায় গড়ে এবার ফলন অনেক বেশি হয়েছে। বাদামের বাম্পার ফলন এবং দাম বেশি হওয়ায় যমুনা ও বাঙালী নদীর চরাঞ্চলের চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। চলতি বছর বাজারে বাদমের দাম বেশ চড়া।

    যমুনা ও বাঙালির নদীর উভয় পাশে বেশ চর জাগে। এই চরের বালু মাটিতে চাষিরা বাদাম চাষ করে আর্থিকভাবে প্রতিবছর লাভবান হয়ে থাকে। এই বাদাম চাষিদের বেশিরভাগের চাষের কোন জমি নেই। অনেকেরই জমি ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। তারাই সারা বছর পতিত জমিতে চাষবাস করে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close