• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইন্দিরা গান্ধীকে বাদ দিয়ে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় না

প্রকাশ:  ২৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:১৩ | আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫৫
পীর হাবিবুর রহমান

ভারতের ৬৯ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের নৈশ্যভোজ অনুষ্ঠানে আজ যোগ দিয়েছিলাম। প্রতি বছর ঢাকায় থাকলে এ অনুষ্ঠান মিস করি না। সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের এক অপূর্ব মিলন সন্ধ্যা হয়ে উঠে এই অনুষ্ঠান। অনেক বছর পর আজ দেখা হলো এক কালের বাম রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টচার্যের সঙ্গে। যখন রিপোর্টার ছিলাম, যোগাযোগ নিয়মিতই ছিল। সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানুষেরাই আসেন এ অনুষ্ঠানে। এমনিতেই ভারত আমার একটি প্রিয় দেশ। ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক কারণে যেমন, তার চেয়ে বেশি আমাদের সুমহান মুক্তিযু্দ্ধের ঐতিহাসিক বন্ধনে। কে কি বলেন, না বলেন তা আমি কখনো তোয়াক্কা করি না। বিশ্বাস করি কূটনৈতিক উষ্ণতা থাকলেও পাকিস্তান আমাদের কখনোই বন্ধু নয়। তাদের ২৪ বছরের শোষণ, ৯ মাসের গণহত্যা, ধর্ষণ আর বিগত ৪৭ বছরের তৎপরতা কখনোই আমাদের জন্য সুখকর ছিল না, বন্ধুসুলভ ছিল না। পাকিস্তান প্রমাণ করেছে জন্মের শত্রু কখনো বন্ধু হয় না।

ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক দেনদরবার রয়েছে। অনেক সমস্যার সমাধানও হয়েছে। কিন্তু তিস্তার পানি আমাদের ন্যায্য হিস্যা। বন্ধু ভারতকে এটি দিতেই হবে। বন্ধুত্বের মর্যাদা দুই তরফ থেকেই রক্ষা করতে হবে। তাই বলে ভারতের সঙ্গে আবেগমথিত ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যেকোনো সমস্যার সমাধান কূটনৈতিক তৎপরতায় সমাধান যেমন জরুরি, তেমনি এই বন্ধুত্ব ও মৈত্রী সুসংসহত ও দীর্ঘস্থায়ী করা প্রয়োজন।

সম্পর্কিত খবর

    ব্যক্তিগতভাবে আমি সব সময় মনে করি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের মূল শক্তি হচ্ছেন তাদের গণতন্ত্রের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। যতবার দিল্লী যাই, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল পরিদর্শন করে আসি। বিশ্ব রাজনীতিতে দুই সুপার পাওয়ারের লড়াই যখন মুখোমুখি তখন ভারতনেত্রী ইন্দিরা গান্ধী অসীম সাহস নিয়ে সুমহান মুক্তিযুুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীকার, স্বাধীনতার পথে গোটা জাতিকে এক মোহনায় মিলিত করে মুক্তিযুদ্ধের ডাকই দেননি, বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত যাতে আমাদের বিপদে পাশে দাঁড়ায় সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন। সেই দুঃসময়ে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যার মুখে পতিত এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন, বীর যোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়েছেন, ট্রেনিং দিয়েছেন। ভারতের জনগণের ঋণ ঐতিহাসিকভাবে আমরা ভুলতে পারি না। দারিদ্রতার মধ্যে থেকেও একটি দেশ সেদিন আমাদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খেয়েছে।

    শ্রীমতি গান্ধী সেই দুই সুপার পাওয়ারের যুগে বিশ্ব জনমতই আমাদের পক্ষে গড়ে তোলেননি; আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায়েও ভূমিকা রেখেছেন। ভারতের সেনারা মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে আত্নাহুতি দিয়েছে।

    উদার গণতান্ত্রিক ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যতক্ষণ ছিলাম, নানা খোশগল্প, আড্ডায় যতই মেতে থাকি না কেন, বারবার শ্রদ্ধায় একজনের নাম খুব বেশি মনে পড়েছে। তিনি আমাদের দুঃসময়ের মহান বন্ধু শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধী। ইন্ধিরা গান্ধীকে বাদ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্ব হয় না। ভারতবাসীকে এই দিনে অভিনন্দন।

    লেখক : প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close