• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে প্রমাণিত বিচার বিভাগে সরকার হস্তক্ষেপ করছে’

প্রকাশ:  ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৪৩ | আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

এর মধ্য দিয়ে বিএনপির বক্তব্য সঠিক হয়েছে বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করে খালেদা জিয়ার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজা দিতে চায় সরকার। কিন্তু এতে কোনও লাভ হবে না বরং সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে।’

সম্পর্কিত খবর

    ফখরুল বলেন, ‘সরকারের জাতিকে বিভক্ত করেছে। রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ ধ্বংস করে দিয়েছে। এর মধ্যে বিচার বিভাগ পুরোপুরি আয়ত্ত্বে নিয়েছে, নিম্ন আদালত আরও আগেই নিয়েছে। উচ্চ আদালতও তারা দখলে নিতে চায়, সেটি প্রধান বিচারপতির উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।’

    শুক্রবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে বাসা থেকে বের হন প্রধান বিচারপতি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সুষমা সিনহা। আধা ঘণ্টা পর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তারা বিমানবন্দরে পৌঁছান। সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের ফ্লাইট এসকিউ ৪৪৭ এ শুক্রবার রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। সেখানে তিনি তার মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় উঠবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

    শোনা যাচ্ছিল, স্ত্রী সুষমা সিনহাও যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে; হেয়ার রোডের বাসা থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় স্বামীর সঙ্গে গাড়িতেও ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা একাই উড়োজাহাজে ওঠেন। মিসেস সিনহা তাকে তুলে দিতে এসেছিলেন বলে হাই কোর্টের প্রটোকল কর্মকর্তা আবদুল ওয়ারেস জানান।

    সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের ডিউটি ম্যানেজার মো. জুনায়েদ হোসেন বলেন, ফ্লাইট সময়মতই ছেড়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি একাই ছিলেন, স্ত্রী সঙ্গে যাননি। সিঙ্গাপুর হয়ে শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাবে ওই ফ্লাইট।

    দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোনো প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে এত আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। আর কোনো প্রধান বিচারপতির বিদেশযাত্রা সংবাদমাধ্যমের এতটা মনোযোগও আকর্ষণ করেনি।

    গত আড়াইমাস ধরেই আলোচনার শীর্ষে ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগস্টের প্রথম সপ্তায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ে ‘আমিত্বের’ কড়া সমালোচনা করেন বিচারপতি সিনহা। এরপর থেকে সরকারি দলের নেতারা প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। সমালোচনায় যোগ দেন সব স্তরের নেতারা। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। দাবি ওঠে তার পদত্যাগের। দেয়া হয় আলটিমেটাম। জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। সেখানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয়।

    নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন গত ২রা অক্টোবর হঠাৎ করেই একমাসের ছুটিতে চলে যান প্রধান বিচারপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা অনেকটাই নজিরবিহীন। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন। অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের দাবি, চাপ প্রয়োগ করে তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সে যাই হোক, আদালত পাড়ায় কান পাতলেই এ নিয়ে শোনা যায় নানা গুঞ্জন। গুজব, গুঞ্জন আর আলোচনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেন। ওই চিঠিতে ১৩ই অক্টোবর থেকে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি বিদেশ থাকতে চান বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে তিনি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পাঁচবছরের ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের তিনবছরের ভিসা দেয়া হয়।

    এখনো সাড়ে তিনমাস মেয়াদ রয়েছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। প্রেসিডেন্ট অবশ্য এরইমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি স্বীয় দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধান বিচারপতি কি আর স্বীয় দায়িত্বে ফিরবেন। নানা আলোচনা। প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হলে কে হতে পারেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি তা নিয়েও উচ্চ আদালতে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close