• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সমালোচনা করেছেন, তাতে আমি বিব্রত: প্রধান বিচারপতি

প্রকাশ:  ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১১:০১ | আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১১:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। এই অভিমান অচিরেই দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

শুক্রবার রাতে হেয়ার রোডের নিজ বাসভবন থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় বাসভবনের গেটে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি।

সম্পর্কিত খবর

    লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও একটু শঙ্কিত বটে। কারণ, গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনও রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে।’

    লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’

    শুক্রবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে বাসা থেকে বের হন প্রধান বিচারপতি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সুষমা সিনহা। আধা ঘণ্টা পর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তারা বিমানবন্দরে পৌঁছান। সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের ফ্লাইট এসকিউ ৪৪৭ এ শুক্রবার রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। সেখানে তিনি তার মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় উঠবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

    শোনা যাচ্ছিল, স্ত্রী সুষমা সিনহাও যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে; হেয়ার রোডের বাসা থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় স্বামীর সঙ্গে গাড়িতেও ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা একাই উড়োজাহাজে ওঠেন। মিসেস সিনহা তাকে তুলে দিতে এসেছিলেন বলে হাই কোর্টের প্রটোকল কর্মকর্তা আবদুল ওয়ারেস জানান।

    সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের ডিউটি ম্যানেজার মো. জুনায়েদ হোসেন বলেন, ফ্লাইট সময়মতই ছেড়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি একাই ছিলেন, স্ত্রী সঙ্গে যাননি। সিঙ্গাপুর হয়ে শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাবে ওই ফ্লাইট।

    দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোনো প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে এত আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। আর কোনো প্রধান বিচারপতির বিদেশযাত্রা সংবাদমাধ্যমের এতটা মনোযোগও আকর্ষণ করেনি।

    গত আড়াইমাস ধরেই আলোচনার শীর্ষে ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগস্টের প্রথম সপ্তায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ে ‘আমিত্বের’ কড়া সমালোচনা করেন বিচারপতি সিনহা। এরপর থেকে সরকারি দলের নেতারা প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। সমালোচনায় যোগ দেন সব স্তরের নেতারা। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। দাবি ওঠে তার পদত্যাগের। দেয়া হয় আলটিমেটাম। জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। সেখানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয়।

    নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন গত ২রা অক্টোবর হঠাৎ করেই একমাসের ছুটিতে চলে যান প্রধান বিচারপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা অনেকটাই নজিরবিহীন। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন। অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের দাবি, চাপ প্রয়োগ করে তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সে যাই হোক, আদালত পাড়ায় কান পাতলেই এ নিয়ে শোনা যায় নানা গুঞ্জন। গুজব, গুঞ্জন আর আলোচনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেন। ওই চিঠিতে ১৩ই অক্টোবর থেকে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি বিদেশ থাকতে চান বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে তিনি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পাঁচবছরের ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের তিনবছরের ভিসা দেয়া হয়।

    এখনো সাড়ে তিনমাস মেয়াদ রয়েছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। প্রেসিডেন্ট অবশ্য এরইমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি স্বীয় দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধান বিচারপতি কি আর স্বীয় দায়িত্বে ফিরবেন। নানা আলোচনা। প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হলে কে হতে পারেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি তা নিয়েও উচ্চ আদালতে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close