• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর কি পূর্বসূরীদের চেয়ে আলাদা হবে

প্রকাশ:  ১০ জুলাই ২০১৮, ১৩:০৯
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১২ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাজ্য সফর করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাষ্ট্রীয় সফর না হলেও তার এই সফর আগের রাষ্ট্রনেতাদের সফরের চেয়ে ব্যতিক্রমী হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ সালে জিমি কার্টার গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে। তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল লন্ডনের ‌‘জি সেভেন’ শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেয়া। তবে ঐ সফরে তিনি নিউক্যাসলও গিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাকি বিশ্বের সম্পর্ক উন্নয়নের এক মহাপরিকল্পনার অংশ ছিল নিউক্যাসল। তাই নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউক্যাসল সিভিক সেন্টারের বাইরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সামনে ভাষণের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেছিলেন মি. কার্টার।

ঐ অনুষ্ঠান সম্পর্কে স্থানীয় পত্রিকা ক্রনিকলের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, তারা বিমানবন্দর, রাস্তাঘাট, সিভিক সেন্টারের বাইরে সব জায়গায় তাকে অভ্যর্থনা জানাতে জড়ো হয়েছিল এবং তিনি সেই অভ্যর্থনা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।

একসময় এভাবেই ব্রিটিশ জনতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতো।

১৯৬১ সালে জন এফ. কেনেডি’র যু্ক্তরাজ্য সফরের সময় তাকে আর তার স্ত্রী জ্যাকি’কে একনজর দেখার জন্য প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ লন্ডন বিমানবন্দর সংলগ্ন রাস্তায় সারি বেঁধে দাড়িয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল যুক্তরাজ্যে, যা এত মানুষ জড়ো হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিল। আর সবশেষ যুদ্ধে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) যুক্তরাজ্যের সহযোগী ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যুক্তরাজ্যে আসতো অনেকদিন বিরতির পর। প্রথম সফরকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন উড্রো উইলসন, যিনি ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে ব্রিটেন গিয়েছিলেন। এরপর ২৭ বছর পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে দ্বিতীয়বারের মতো কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্য সফরে যান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটেনের রাজপরিবারের কাছ থেকেও সৌহার্দপূর্ণ ব্যাবহার পেয়েছে। পঞ্চাশের দশকের প্রেসিডেন্ট ডুয়াইট আইজেনহাওয়ার রাণীর পছন্দের ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি একমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজপরিবারের অবকাশ যাপনের স্থান বালমোরাল দুর্গে আমন্ত্রিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সাথেও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় রাণীর। ১৯৮২ সালে উইন্ডসর দুর্গে থাকার জন্য রাণী ব্যক্তিগতভাবে মি. রিগ্যানকে নিমন্ত্রণ করেন। ১৯৯৪ সালে বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনকে রাজকীয় প্রমোদতরী ‘ব্রিটানিয়া’তে রাত্রিযাপনের সম্মান দেয়া হয়।

১৯১৮’তে উইলসনের পর জর্জ বুশ ২০০৩ এ প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাকিংহাম প্রাসাদে রাত্রিযাপন করেন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সফরে উইন্ডসর অতিক্রম করার সময় রাজপ্রাসাদে এক কাপ চা'য়ের জন্য নিমন্ত্রিত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তার পূর্বসূরিরা যেরকম রাজনৈতিক অভ্যর্খনা পেয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাও পাবেন না। ১৯৯৭ সালে বিল ক্লিনটন মন্ত্রীসভার সাথে বৈঠক করেছিলেন সে রকমও কোনও কার্যক্রম নেই ট্রাম্পের সফরে। এমনকি ২০১১ তে সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা ডাউনিং স্ট্রিট বাগানে বার্গার বানানো বা সংসদের দুই সভাতে ভাষণ, কিছুই থাকছে না ট্রাম্পের সফরে।

এসবের পরিবর্তে মি. ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি 'চেকার্স'এ ভ্রমণে যাবেন, ১৯৭০ সালে যেমনটা গিয়েছিলেন রিচার্ড নিক্সন। ট্রাম্পের এই সফর আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সফর নয়। রাষ্ট্রীয় সফরের পরিকল্পনা থাকলেও তার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

রাষ্ট্রীয় সফরে ভুলত্রুটি

বলাই বাহুল্য, রাষ্ট্রীয় সফরও অনেকসময়ই পরিকল্পনামাফিক হয় না। ১৯৮২ সালে রাণী'র পক্ষ থেকে রোনাল্ড রিগ্যানকে পাঠানো আমন্ত্রণের জবাব দিতে দেরী করেছিল হোয়াইট হাউজ, যার ফলে সেসময় কিছুটা কূটনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।

১৯৯৭ তে টেমস নদীতে চলমান এক বজরাকে জায়গা করে দিতে লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ খুলে দেয়ায় বিল ক্লিনটনের বিশাল গাড়িবহরকে কিছুক্ষণের জন্য দু'ভাগে ভাগ হয়ে যেতে হয়। সেসময় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা রক্ষীরা বেশ ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। কাজেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পরিদর্শন যেন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য চেষ্টার অন্ত থাকবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফর

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সফরকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের নানা ধরণের পরিকল্পনা থাকলেও, তাঁর কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে লন্ডন থেকে চেকার্স, চেকার্স থেকে উইন্ডসর আর উইন্ডসর থেকে স্কটল্যান্ডের যাত্রায় বিক্ষোভকারীদের সাথে তার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে বিক্ষোভ কার্যক্রম আড়াল করলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্তরাজ্যের রজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য আলোচনায় আসছে এই সফরের আগে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাণিজ্য শুল্ক আরোপ, ইরান পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করা, জেরুসালেমে মার্কিন দুতাবাস স্থানান্তর করা, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারিসহ নানা সিদআন্তের সমালোচনা করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।

কাজেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এসপ্তাহের সফরের মাধ্যমে দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা। খবর: বিবিসি বাংলা।

/অ-ভি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট,ডোনাল্ড ট্রাম্প,যুক্তরাজ্য,সফর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close