নতুন ধান পেলেও খুশি নন কৃষক
আমন ধানের সোনালী শীষ এখন দিগন্তজুড়ে শোভা পাচ্ছে। এরই মধ্যে রাজশাহীর বরেন্দ্রসহ বিভিন্ন মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটা মাড়াই। ফলনও হয়েছে ভাল। ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে গত বছরের চেয়ে বাজারে ধানের দাম কম থাকায় মন ভাল নেই চাষীদের।
বর্তমানে আগাম জাতের ব্রি -৪৯, বিনা-৭, বিনা-১৭, ও জিংক সম্বৃদ্ধ ব্রি-৬২ কাটা মাড়াই চলছে। এছাড়াও আলুসহ অন্যান্য সবজি ফসলের জন্য আগেভাগেই ধান কাটা মাড়াই হচ্ছে বলে জানান চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ হয়েছে আমন ধানের। জেলায় আমন চারা রোপণ হয়েছে ৭৩ হাজার ২১৯ হেক্টর। চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭১ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে।
সম্পর্কিত খবর
সকল হতাশা পেরিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের মধ্যদিয়েই রাজশাহীতে আমন আবাদ করেছিল চাষীরা। রোপনের শুরুতে বৃষ্টিপাত না থাকায় অনেকে সেচ দিয়ে ধান রোপন করেন। এতে ধানের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়েছে। আবাদের মাঝ সময়ে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি হওয়ায় সেচ থেকে রেহাই পান চাষিরা। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমন চাষীদের জন্য আর্শিবাদ বয়ে এনেছিল। পরবর্তীতে আবারো খরা দেখা দেয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক ক্ষেত রোদে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। যাদের সেচ দেয়ার সুবিধা আছে তারা সবায় সেচ দিয়েই আবাদ ঘরে তুলছেন।
গোদাগাড়ি উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ধামিলা গ্রামের কৃষক আশরাফ বলেন, চলতি মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। এরমধ্যে ৫ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পূর্ণ হয়েছে। ব্রি-৪৯ জাতের ধান বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ১৯ মন। বাকী ১৫ বিঘা জমির ধান ১ সপ্তাহের মধ্যে কাটা মাড়াই শুরু করবো। প্রতি বিঘা ধান চাষে তার খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচ দেওয়ায় বিঘায় অতিরিক্ত ১ থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। ভাল ফলন পেয়ে খুশি হলেও দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তায় রয়েছে কৃষক। ভাল দাম পেলে এবার আমন চাষের কৃষকেরা লাভবান হবে বলে জানান তিনি।
তানোর উপজেলার রাতইল গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন তিনি। অধিকাংশই জমিতে ব্রি-৪৯, ব্রি-৭১ ও স্বর্ণা জাতের ধান চাষ করেছে। সপ্তাহ আগে ৩ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ব্রি-৪৯ জাতের ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৮ মণ। তার প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ব্রি-৭১ ও স্বর্ণা জাতের ধানের ভাল ফলন হবে বলে জানান তিনি।
মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে রোপা আমন চাষ হয় মূলত বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে। এবার চাষের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দেরিতে চারা রোপণ করা হয়। এ কারণে অন্য জাতের ধান কাটা মাড়াই বিলম্বিত হচ্ছে।
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই কম হওয়ার কারণে আমন ধানের উৎপাদন ভাল হচ্ছে। কৃষকেরা পোকা মাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার বেশি করেছে। জমির ধান ৯৫ ভাগের বেশি পেকে গেলে কাটা মাড়াই করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে চাষের সময়ের হেরফের হলেও শেষ পর্যন্ত ফসল ভাল হয়েছে। বিভিন্ন মাঠে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন ভাল হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। দাম একটু কম হলেও উৎপাদন ভাল হলে চাষিদের লোকসান হবে না বলে জানান তিনি।
/পি.এস