• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ছুটির আগেই ছুটি নলছিটির অধিকাংশ প্রাইমারী স্কুল

প্রকাশ:  ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৩১
ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের চরম অবহেলা, গাফিলাতি ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে বিদ্যালয়গুলোতে সরকার নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পাঠদান করা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের পাঠদান চুকিয়ে নির্ধারিত সময়ের (বিকেল সাড়ে ৪টা) আগেই স্কুল ছুটি দেয়া হচ্ছে।

এমনকি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকির অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে সময়মতো শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ দায়সারা শিক্ষাদানের ফলে স্কুলগুলোতে ছাত্র উপস্থিতির হার দিন দিন কমছে। আর এসব কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মহলে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির সদস্য ও এলাকার অভিভাবকরা এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েও রহস্যজনক কারণে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।

সরেজমিনে উপজেলার পৌর এলাকা, সিদ্ধকাঠি ও দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি স্কুলে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। রোববার দুপুর ৩টায় সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের চন্দ্রকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানায়, আরো আধঘন্টা আগে স্কুলটি ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা ও দপ্তরি বাড়ি চলে গেছেন। বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে সাইফুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই স্কুল, এইটার কোনো টাইম টেবিল নেই। যে সময় মনে চায় খুললো, আর না হলে নেই। আমি সকাল নয়টায় বের হয়ে যাই দেখি স্কুল বন্ধ। আবার বিকেল সাড়ে তিনটার সময় আইয়া দেখি স্কুল বন্ধ।’ স্কুলটিতে ৮ জন শিক্ষক কর্মরত বলে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগে স্কুল ছুটি দেওযার বিষয় জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহেলী পারভীন বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষ ছাড়া কারো কাছে এ জবাব দিতে বাধ্য নই।’

বুধবার দুপুর ২টায় পৌর এলাকার অনুরাগ গৌরিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে স্কুলটি বন্ধ পাওয়া যায়। বই-খাতা স্কুলের কক্ষের ভেতর আটকা পড়ায় শাহীন নামের এক শিক্ষার্থী বাহিরে দাড়িয়ে কান্নাকাটি করছে। বিদ্যালয়টি কখন ছুটি হয়েছে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি ঢাকাতে অবস্থান করায় এ বিষয় বলতে পারবো না। অভিযোগ রযেছে, তখন তিনি ছুটি না নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, স্কুলে অন্য কোন শিক্ষক না থাকায় একটু তাড়াতাড়ি তিনি স্কুল ছুটি দিয়েছেন।

দুপুর পৌনে ৩টায় দপদপিয়া ইউনিয়নের গোহালকাঠি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলটিতে ৫ জন শিক্ষক কর্মরত। এদের মধ্যে পারভীন আক্তার ও জয়া ভট্টাচার্য নামের দুই শিক্ষক স্কুলে নেই। এ বিষয় জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসিনা জাহান বলেন, তারা বেতনের টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেছেন। একসঙ্গে দু’জনের ব্যাংকে যাওয়া ও স্কুল চলাকালীন সময় টাকা উত্তোলনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি সদুত্তোর দিতে পারেননি। দুপুর ৩টা ২০মিনিটে ভরতকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে হোসনেয়ারা বেগম নামের এক শিক্ষককে স্কুলে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। ছোট বাচ্চারা কান্নাকাটি করায় তিনি বাসায় গিয়েছেন বলে অন্য শিক্ষকরা সাংবাদিকদের জানান।

একই দিন কয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও নির্ধারিত সময়ের আগে ছুটি দেওয়া হয়। পুষ্প বিশ্বাস ও খালেদা আক্তার নামে ওই স্কুলের দুই শিক্ষককে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দপদপিয়া জিরোপয়েন্ট থেকে বাসযোগে বরিশালের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় দিনই সাড়ে ৩টার দিকে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক পুষ্প বিশ্বাস ও খালেদা আক্তার বরিশাল থেকে প্রায় দিনই সাড়ে ৯টার পরে আসেন। স্কুলে এসে কয়েকজন শিক্ষক মোবাইল ও রূপচর্চায় ব্যস্ত থাকেন। দু-একজনে বাচ্চা নিয়েও স্কুলে আসেন।

এছাড়াও কুশঙ্গল ইউনিয়নের সেওতা ভাউমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুলকাঠি ইউনিয়নের হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেও বিরুদ্ধে রয়েছে একই অভিযোগ। তারা প্রায়ই আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়িতে চলে যান।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের সরকারি বিধি অনুযায়ী সকাল ৯টায় স্কুল খুলতে হয়। ৯টা ১৫ মিনিটে সমাবেশ। সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাস শুরু। দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত টিফিনের সময় বাদ দিয়ে ২টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ক্লাস চলবে। বিকেল সাড়ে চারটায় স্কুল বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন) মো. কামরুল হাসান বলেন, চন্দ্রকান্দা স্কুলের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন জাহান (দপদপিয়া ইউনিয়ন) বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের আগে স্কুল ছুটি দেওয়ার কোন বিধান নেই। এই আইন কেউ অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওএফ

বিদ্যালয়

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close