• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

কাজ শেষের আগেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন

প্রকাশ:  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:১৯
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলনের প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও শহীদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এতে ক্ষোভ ও হতাশ বিরাজ করছে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রকল্পটি দৃষ্টিনন্দন করতেই বিলম্ব হচ্ছে। দ্রুত শেষ করা হবে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ কাজ।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী প্রথম হানা দেয় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে। ওই দিন বিভিন্ন পেশাজীবিদের ধরে নিয়ে যায় পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের ভাতারমারী ইক্ষু খামার এলাকায়। সেখানে বেনোয়েট দিয়ে খুচিয়ে ও ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুজা উদ্দিন আহম্মেদ, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন, আব্দুল জব্বারসহ ৯ জনকে। অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার স্মরনে ১৯৯৮ সালে ডাক বিভাগ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদের স্মরণে আজও নির্মাণ হয়নি স্মৃতি সৌধ। সংরক্ষণ করা হয়নি তাদের সমাধী। অবহেলা আর অযত্নে পরে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবী গোলাম মোস্তফাসহ সেই আত্মদানকারী ৯ জনের সমাধী।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্মৃতি সংরক্ষণে শহীদ পরিবার ও এলাকাবাসী দাবি দীর্ঘদিনের । এ অবস্থায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের ভাতারমারী ফার্ম এলাকায় স্মৃতি সৌধ নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় কাজ কাগজে কলমে সম্পন্ন করে উপজেলা পরিষদ। কাজ না করেই ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু এবং ২৫ মে শত ভাগ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে ঠাকুরগাও রোড় এলাকার আরফান ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ উত্তোলন করা হয়। কয়েক মাস আগে বিষয়টি জানা জানি হলে বিক্ষোভে ফেটে পরে শহিদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা। এ নিয়ে গনমাধ্যমে ব্যাপক লেখা লেখিও হয়। পরে বাধ্য হয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়ার তত্বাবধানে জুন মাসে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা দেয়। নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও শেষ না করেই কয়েক দিন পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় নির্মাণ কাজ। এতে আবারো হতাশা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

শহিদ সন্তান সলেমান আলী আক্ষেপ করে বলেন, এটা মেনে নেওয়ার মত কোন ঘটনা নয়। সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। হতাশা প্রকাশ করে প্রায় একই রকম কথা বলেন, শহিদ সন্তান এনামুল কবীর, আজগর আলী ও আজাহারুল ইসলাম।

ইউপি চেয়ারম্যান কায়সার রহমান ডাবলু বলেন, তার ইউনিয়নে এমন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা দুঃখ জনক। অনেক চাপা চাপির পর কাজ শুরু হলেও এখন বন্ধ। এটা জাতির সাথে প্রতারণা।

পীরগঞ্জ উপজেলা উদীচী’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক হোসেন বলেন, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় । এ সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্বরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ প্রকল্পের সরকারী অর্থ তুলে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ না করে আত্মসাৎ করার পায়তারা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা লজ্জিত, মর্মাহত। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিমের মাধ্যমে এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

একটি সুত্র জানায়, উপজেলা প্রকৌশলী কাগজে কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে আরফান ট্রেডার্সের নামে টাকা উত্তোলন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করেই ভাগ বাটোয়ারার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, এটি চেয়ারম্যান স্যার করেছেন। তিনি বাধ্য হয়েই কাজ সমাপ্তের নোট দিয়েছিলেন। পরে হলেও কাজ শুরু হয়েছে। এখন শেষ হবে।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম অর্থ উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে বলছেন, দৃষ্টি নন্দন প্রকল্প করতেই স্মৃতি সৌধ নির্মাণের কাজে বিলম্ব হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুতই শেষ করা হবে।

আর কোন আশ্বাস বা কালক্ষেপন নয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নের গড়িমসির সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে এমন দাবি শহীদ পরিবার ও এলাকাবাসীর।

/পি.এস

ঠাকুরগাঁও,মুক্তিযুদ্ধ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close