• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ছিনতাইকারীদের দখলে মেঘনা পাড়, তিন বছরে ১৬ খুন

প্রকাশ:  ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৩৯
রাজীবুল হাসান (ভৈরব)

ভৈরবের মেঘনা পাড় এখন ছিনতাইকারীদের দখলে। প্রতিদিন ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ প্রায়ই খুনের ঘটনা ঘটছে মেঘনা পাড় এলাকায়। গত তিন বছরে মেঘনা পাড় এলাকায় পুলিশ হত্যাসহ ১৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তিন বছরে কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়।

গত ১৩ আগস্ট সোমবার দুপুরে একদল ছিনতাইকারী মেঘনা পাড়ের রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাই শেষে ছিনতাইয়ের মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে বাপ্পী নামের এক ছিনতাইকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এসময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ৪ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ভৈরবের মেঘনা পাড়ে রেলওয়ে দুটি ও সড়ক পথে একটিসহ মোট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু থাকায় সরকার এই এলাকাকে কেপিআই এরিয়া ঘোষণা করেছে।

কেপিআই এরিয়ার সেতুগুলির নিরাপত্তার জন্য এখানে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ৮ জন পুলিশ নিয়মিত ডিউটি করতে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে এসব পুলিশ নিয়মিত ডিউটি করে না। তবে এই পুলিশ সদস্যরা বলছে অরক্ষিত মেঘনা পাড় দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়, আমরা শুধু সেতু পাহারা দেয়। ভৈরব মেঘনা পাড়ে রেলওয়ের নতুন সেতুসহ তিনটি সেতু ও নদীর পাড়ে ঘুরতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে আসে।

জানা গেছে, গত বছর জুলাই মাসে ৯ দিনের ব্যবধানে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় দুইজন খুন হয়। এরা হলো নরসিংদির রমজান ও নবীনগরের এক যুবক। এরপর গত বছর ৩০ অক্টোবর ইমরান নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে ছিনতাইকারীরা খুন করে। এর কিছুদিন পর সেতুর টোল প্লাজার কাছে এডভোকেট ইসমাইলকে ছিনতাইকারীরা খুন করে।

২০১৫ সালে বিলকিছ নামের এক মহিলার লাশ সেতুর কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত বছর রেলসেতু সংলগ্ন এলাকায় এক বখাটেকে আটক করতে গিয়ে পুলিশ কনেস্টেবল আরিফুল ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ডালিম নামের এক পথচারী গুরুতর আহত হয়। এর আগে পুলিশের এসআই মোস্তাফিজ এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করার পর তার ছুরিকাঘাতে ওই এস আই নিহত হয়। মেঘনা পাড়ে দর্শনার্থীদেরকে ইভটিজিং করে বখাটেরা। অপরাধীদেরকে দর্শনার্থীরা ভয়ে কিছু বলতে পারেনা।

ভৈরব মেঘনা পাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা অধিকাংশই গ্রাম এলাকা থেকে আসে। ভৈরবের আশেপাশে রায়পুরা, কুলিয়ারচর, বেলাব, নরসিংদি, কটিয়াদী, বাজিতপুর, আশুগঞ্জ, সরাইল, নবীনগর, বাহ্মণবাড়ীয়াসহ হাওড় জনপদের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবিসহ নানা পেশার অসংখ্য মানুষ ভৈরবের মেঘনা পাড় কেপিআই এলাকায় বেড়াতে আর ঘুরতে আসে। ছিনতাইকারী, বখাতে ও অপরাধীরা নদীর পাড়ে প্রতিনিয়ত উৎ পেতে থাকে। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকেলে অসংখ্য মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মেঘনা পাড়ে আসলে অপরাধী, বখাটে ও ছিনতাইকারীরা তাদের মোবাইল, টাকা পয়সাসহ সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়।

দর্শনার্থীদেরকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে একটি ছিনতাইকারী চক্র। পুলিশের ডিউটি না থাকায় মেঘনা পাড় থাকে অরক্ষিত। এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে সেতু পাহারার পুলিশরাও ঠিকমত ডিউটি করেনা। দেশের গুরুত্বপূর্ন তিনি সেতু ভৈরবে অবস্থিত কিন্ত প্রতিনিয়ত সেতুগুলি থাকে অরক্ষিত।

ভৈরবে ঘুরতে এসে গত সোমবার ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় আরিফুল হক । তার সাথে কথা হলে সে জানায়, ভৈরব মেঘনা পাড়ে প্রতিদিন ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটে। এখানে যদি পুলিশের ডিউটি থাকত তাহলে এই ধরণের ঘটনা ঘটত না।

ভৈরব পৌর মেয়র এডভোকেট ফখরিল ফখরুল আলম আক্কাছ এব্যাপারে জানান, জেলার আইন শৃংখলা কমিটিতে আমি বহুবার এসব ঘটনা অবহিত করেছি কিন্ত পুলিশ ভৈরব মেঘনা পাড়ের আইন শৃংখলা রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্হা গ্রহন করেনি। ফলে বার বার ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে।

কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাশরুকুর রহমান খালেদ মোবাইল ফোনে এই প্রতিনিধিকে এ ব্যাপারে জানান, ঘটনাটি শুনে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভৈরব থানার ওসি নির্দেশ দিয়েছি। ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেছুর রহমান জানান, সীমিত সংখ্যক পুলিশ দিয়ে আমার ভৈরবের আইন শৃংখলা রক্ষা করতে হয়। তারপরও চেষ্টা করছি ছিনতাই কমাতে। মেঘনা পাড়ে আসা লোকজনও সচেতন হতে হবে বলে তিনি জানান।

ভৈরব রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল মজিদ জানান, রেললাইনের ১০ গজের আওতাভুক্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের থানার। এ এলাকার যেকোন ঘটনা হলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। মেঘনা পাড় বা সেতু দেখা আমার পুলিশের দায়িত্ব নয় বলে তিনি জানান।

ওএফ

খুন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close