• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নারায়ণগঞ্জে চার বছরের শিশু হত্যা

মোবাইলে আলিফের পরিবারকে হত্যার হুমকি

প্রকাশ:  ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৫৫ | আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৫৭
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড় এলাকায় সৌদি প্রবাসীর চার বছরের শিশু সন্তান আলিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে নিহত আলিফের বাবা আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে দুইজনকে অভিযুক্ত করে সদর মডেল থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত মূল হত্যাকারীকে গ্রেফতার বা হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। এদিকে হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আলিফের পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় শোকার্ত পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

জল্লারপাড় এলাকায় আলমগীর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আলিফের বিভিন্ন খেলনা ও ব্যবহারের জিনিসপত্র। ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনরা এগুলো ধরে কাঁদছেন আর আহাজারি করছেন। চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে আাদরের ছোট সন্তানকে হারিয়ে গত দু’দিন যাবত বাকহারা হয়ে প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন আলিফের মা সালমা বেগম। মাঝে মাঝে চেতনা ফিরলেও চিৎকার করে ছেলেকে ফেরত চাইছেন আর কাঁদছেন। গণমাধ্যমের কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলে একইভাবে তিনি আহাজারি করেন এবং সন্তান হত্যার বিচার চান। পরিবারের অন্যদের অবস্থাও একই রকম।

নিহত আলিফের বড় বোন শহরের ই্ংরেজী মাধ্যম স্কুল মাউন্ট রয়েল একাডেমীর চতুর্থ গ্রেডের ছাত্রী সুমাইয়া জানায়, তার শিশু ভাইটিতো কোন অপরাধ করেনি। তাদের পরিবারেরও কোন শত্রু নেই। তার প্রশ্ন, কি অপরাধে এবং কেন তার শিশু ভাইকে এভাবে শ্বাসরোধ করে ও নির্যাতন করে হত্যা করা হলো? সে কিছুতেই এই হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিতে পারছে না। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া এই নাবালিকা শিশুটিও ছোট ভাইয়ের খুনীদের ফাঁসির দাবি জানায়।

একই স্কুলের শিক্ষার্থী নিহত আলিফের দুই বছরের বড় ভাই সিয়ামও দিনরাত কান্না করছে ছোট ভাইকে হারিয়ে। তার খেলার সাথী আদরের প্রিয় ভাইটি আজ নেই, এটা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ভাইয়ের খেলনাগুলো জড়িয়ে ধরে কান্না করেই দুইদিন কাটালো এই শিশুটি।

নিহত আলিফ চার ভাই-বোনের মধ্যে ছিল সবার ছোট। দিনের বেশিরভাগ সময় চারতলা বাড়ির নীচে নেমে এসে প্রতিবেশি শিশুদের সাথে খেলা করতো। প্রতিবেশিদের ঘরে গিয়ে খুবই আদর যত্নে থাকতো এই শিশুটি। যার কারণে এলাকাবাসী কেউই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না এই নির্মম হত্যাকাণ্ড। স্বজনরা ও এলাকাবাসী বলছেন, আলিফের প্রবাসী বাবা কিংবা পরিবারের অন্যন্য সদস্যদের কারো সাথেই কোন ধরনের বিরোধ বা শত্রুতা ছিল না। বারো বছর যাবত এই এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও কারো সাথে কোন ঝগড়া হয়নি। দীর্ঘ পনেরো বছর যাবত সৌদি আরবে প্রবাসে থাকলেও প্রতি বছরই দেশে আসেন। এলাকার সবার সাথেই তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তার স্ত্রী সালমা বেগমও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হন না। অপরিচিত কোন মানুষজনকেও কখনো তাদের বাড়িতে যেতে কেউ দেখেনি। স্বামী-স্ত্রীর চারিত্রিক বিষয়েও সবাই প্রশংসাই করলেন। তবে তারপরেও কি কারণে এমন নির্মমভাবে শিশুটিকে হত্যা করা হলো কেউ এর কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকে প্রতিবেশী আলী খোকনের ভাড়াটে যুবক অহিদ আলিফকে চকলেট দেবার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই আলিফ নিখোঁজ থাকে। বিকেলে অহিদের ঘরের তালা ভেঙ্গেই উদ্ধার হয় আলিফের বস্তাবন্দি লাশ। রাতে এবং শুক্রবার সকালেও অহিদ আলিফের চাচার মোবাইলে ফোন করে মামলা না করতে হুমকি দিয়েছে। অন্যথায় আলিফের অন্য তিন-ভাই-বোন এবং বাবা-মাকেও হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।

ফলে এলাকাবাসী ও স্বজনদের অভিযোগের আঙ্গুল অহিদের দিকেই। তবে ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা পার হলেও অহিদকে পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা। তারা দাবি করেন, অহিদকে গ্রেফতার করতে পারলেই হত্যাকেণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলিফ হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চান। তবে পুলিশের দাবি, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জোড় তদন্ত চলছে। সদর মডেল থানার ওসি মো: কামরুল ইসলাম জানান, মূল আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টীম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শীঘ্রই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।

হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, নিহত আলিফের বাবা হুমকির বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমরা সেই হুমকিদাতার মোবাইল নম্বর পর্যবেক্ষণ করছি। নিহত শিশুটির শোকার্ত পরিবারের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড় আমহাট্টা এলাকার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী আলমগীর হোসেন তার ছোট সন্তান আলিফকে আদর করে ব্যাংকে টাকা তোলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। বেলা এগারোটায় বাসা থেকে ফোন আসে, আলিফ বাড়ির সামনে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের ছয় ঘন্টা পর বিকেল পাঁচটায় একই মহল্লার প্রতিবেশির বাড়ির ভাড়াটের ঘর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হয় আলিফের রক্তাক্ত লাশ।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই ঘরের ভাড়াটে সম্রাট ওরফে রিপনকে আটক করলেও মূল সন্দেহভাজন ব্যক্তি অহিদ লাশ উদ্ধারের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে।

/পি.এস

নারায়ণগঞ্জ,হত্যা,হুমকি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close