কামারপাড়ায় শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততা চলছে
কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কামারশালাগুলোতে। একই সাথে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে মানুষ ভিড় করছে হাসুয়া, ছোরা, বটি, কোপ্তা, দাও, চাপাতি, কুড়াল বিক্রির রেডিমেড দোকানগুলোতে। পাড়ায় চলছে এসব হাতিয়ার তৈরি ও ধারাল করার কাজ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৃহত্তম কামারশালা ও মাংস প্রস্তুতের হাতিয়ার বিক্রির এলাকা শহরের হুজরাপুর রেল কলোনী ঘুরে দেখা গেছে কাজ বেড়েছে কামারশালাগুলোতে।
সম্পর্কিত খবর
হাঁপার টানতে টানতে অনিল কর্মকার (৫০) বললেন,‘এ কাজে আর দিন চলে না। পোষায় না। সারাবছর এখন আর তেমন কাজও হয়না। শুধু কোরবানী ঈদের সময়ই যা একটু ব্যস্ততা বাড়ে। কামারদের অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়। বাপ-দাদার আমল থেকে এই কাজ করছি। মায়ার টানে ছাড়তেও পারিনা।’ আগুনে পুড়ে লাল হয়ে ওঠা একটি বড় হাসুয়ার উপর পেশিবহুল হাতের হাতুড়ির বাড়ি মারতে মারতে মানিক কর্মকার (৩৫) বললেন, ‘এই ব্যবসার প্রধান তিনটি উপকরণ কয়লা, লোহা আর মজুরের দাম বাড়তি। পাওয়াও যায় না ঠিকমত। সেই তুলনায় বাজারের অবস্থা ভাল না।’
পুরাতন হাতিয়ার ধারাল করতে আর নতুন হাতিয়ার বানাতে আসা শহরের শান্তিবাগের রোকনুজ্জামান (৩৬) ও পুরাতন বাজারের পলাশ (৪০) বললেন, প্রতি বছরেই এখানে আসি। ঈদের এই একটি দিনের জন্যই আসতে হয়। পছন্দমত হাতিয়ার মানসম্মতভাবে বানানো যায় কামারশালায়। অনেক দিন এগুলো ব্যবহার করা যায়। বাজারে কেনা রেডিমেড মালের থেকে বানানো মালের মান ভাল হয়।
অসীম কর্মকার ( ২৩) বললেন, এ এলাকায় ৭টি কামারশালা আর ১১টি রেডিমেড হাতিয়ারের দোকান রয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর রথের মেলায় প্রায় মাসব্যাপী বিক্রি হয় এসব হাতিয়ার। বিভিন্ন গ্রামীণ মেলাতেও এসবের দোকান নিয়ে বসেন কামারেরা।
তিনি বলেন, বিলুপ্ত প্রায় হলেও জেলার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে এখনও একটি/দুটি করে কামারশালা রয়ে গেছে।
বিষু কর্মকার (৪০) বললেন, মালের দাম নির্ভর করে মূলত লোহার দামের উপর। দুই ভাবে দাম নির্ধারণ হয়। ঠিকা বা পিস হিসেবে। আর বড় ও ভাল হাতিযার মূলত ওজন দরে বিক্রি হয়। এবছর ভাল মানের লোহার হাতিয়ার ৪শ’ থেকে ৫শ’টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাতিযার ভেদে নতুন রেডিমেড মালের বিক্রি মূল্য ৫০ থেকে হাজার টাকা পর্য়ন্ত। ধারাল ও মেরামতের খরচ ৩০ থেকে শত টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন কামাররা। এবছর হাতিয়ারের মূল্য গত বারের তুলনায় সামান্য বেশি।
সরেজমিনে ঘুরে আর কথা বলে বোঝা গেছে কামাররা তাদের পেশা নিয়ে খুশি নন। তাদের জীবন মানেও তেমন পরিবর্তন আসেনি। জেলা শহরের কেন্দ্রে হলেও অনেক কামারশালায় নেই বৈদ্যুতিক সংযোগ। পরিবেশও তেমন ভাল নয়। তবে আদি সভ্যতার চাকা ঘোরানো কারিগরদের এই শেষ প্রায় বংশধরদের সাথে কথা বলে বোঝা গেছে, এদের নতুন প্রজন্ম আর এই পেশাতে আগ্রহী নয়। অথচ আধুনিকায়ন আর যুগোপযোগী করা গেলে কৃষিপ্রধান দেশে দরকারি এই পেশা টিকে থাকতে পারত বহুদিন।
ওএফ