'অপমানিত' হয়ে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার প্রধান শিক্ষকের নির্যাতনে অপমানিত হয়ে বিষপান করে ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করে।
সাথীর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও স্কুলের সহপাঠিরা প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। নিহত সাথি একই উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের পাতিলাদি গ্রামের মৃত ইকবাল বেপারীর মেয়ে। সাথীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে প্রধান শিক্ষক পলাতক রয়েছেন।
সম্পর্কিত খবর
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী সাথী আক্তার (১৩) বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পেয়ারপুর এলাকায় নানা বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতো। শনিবার সকলে বিদ্যালয়ে আসার পর টিফিনের সময় প্রধান শিক্ষকের কাছে অন্য এক ছাত্রী তাকে গালি দিয়েছে বলে বিচার দিলে, প্রধান শিক্ষক দুইজনকেই ডেকে এনে সবার সামনে শাসন করে এবং স্কেল দিয়ে মারধর করে। এতে সাথী খুব লজ্জা পেয়ে স্থানীয় এক দোকান থেকে ঘাস মারার একটি ঔষধ কিনে বাড়ী নিয়ে সন্ধ্যায় সেটা পান করে। ঔষধ খাওয়ার পর সাথীর মামী দেখে সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ সময় সাথীর মামী কি হয়েছে জানতে চাইলে সে জানায় স্যার তাকে স্কুলে সবার সামনে অনেক বাজে ভাষায় গালিগালাজ দিয়েছে ও অনেক মারধর করেছে। তাই সে লজ্জায় ঘাস মারার ঔষধ খেয়েছে।
নিহত সাথির মামী মুক্তা বেগম জানান, সাথীকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাজে ভাষায় গালা-গালি ও অনেক মারধর করায় লজ্জায় বিষ খেয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করছি সাথীকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু পারলাম না। আমি ঐ প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানাই। চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালায় প্রধান শিক্ষক মো. নুর হোসেন বলেন, ঐ ছাত্রী মারা যাওয়ার পূর্বে সাংবাদিকদের জানিয়েছিল সাথী ও আর এক ছাত্রী গালাগালি করায়, আমি তাদের দুইজনকেই ডেকে এনে সবার সামনেই শাসন করে ক্লাসে পাঠিয়ে দিই। আর এই ঘটনা দুপুরে হয়েছে। সামান্য এ ঘটনায় সাথী যে ঔষুধ খাবে তা ভাবতে পারিনি। আমি তার চিকিৎসার সকল দায়ভার নিয়েছি। তবে সাথী নিহত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন ও স্কুলের সহপাঠিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীকে আটক করার আশ্বাস দিয়েছে। তাছাড়া নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ করে নাই।
/পি.এস