• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

স্কুল মাঠে মেলা, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্ক

প্রকাশ:  ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৩৯
বরিশাল প্রতিনিধি

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই বরিশালে ঐতিহ্যবাহী সরকারি ব্রজমোহন বিএম স্কুল মাঠে মাসব্যাপি তাতবস্ত্র মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সেখানে স্টল নির্মাণ কাজও শেষের পথে। কিন্তু স্কুল মাঠে এই মেলার সার্বিক আয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে স্কুল মাঠে মাসব্যাপি মেলার অনুমোদন নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে অভিভাবক মহল।

অবশ্য অভিযোগও রয়েছে- স্কুল ম্যানেজিং কমিটি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এক মাসের জন্য মাঠে মেলা করার অনুমতি দিয়েছে। যে কারণে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কিন্তু তা ‘থোরাও কেয়ার’ করছে না স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। বরং তাদের সহযোগিতায় স্কুল মাঠে পুরোদমে মেলা আয়োজেন চলছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি নিষেধে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা বা বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। কিন্তু এখানে সেই নির্দেশনা রয়েছে উপেক্ষিত। এমনকি মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিষয়টি সম্পর্কে বিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অপরাপর কর্তা-ব্যক্তিরা ওয়াকিবহাল থাকলেও মানছেন না।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতার উৎস নিয়ে। এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে যা জানা গেছে- তাতে অনেকেই হকচকিয়ে যাবেন। কারণ মেলা আয়োজক কমিটির অন্যতম আজগর ও বাবু এক মাসের জন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে ৪ লাখ টাকা দিলেও গোপনের আরও ৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যদিও এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কেউই স্বীকার করছেন না। কিন্তু এখানে যে বড় ধরনের অর্থসমঝোতা হয়েছে তা মেলা আয়োজক কমিটির আজগরের কথায়ই আভাস পাওয়া গেছে। দীর্ঘক্ষণের আলাপচারিতায় এ প্রতিবেদকের নানামুখী প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি।

একপর্যায়ে স্বীকার করেন- চুক্তির বাইরেও বেশ কয়েকজনকে ম্যানেজ করতে হয়েছে। কারণ তারা এবার মাঠটি দিতে চাননি। যে কারণে তাদের সাথে আপোষ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এমতাবস্থায় একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন- সপ্তাহখানেক যাবত স্কুলের মাঠে মেলার সার্বিক আয়োজন চলছে। ফলে মাঠটিতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।

তাছাড়া মেলার জন্য চারদিক থেকে টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়ায় চলাচল করাও যাচ্ছে। স্কুল চলাকালীন সময়ে মেলার কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার চরম আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। যদিও এই মেলা বন্ধ করতে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান কোন ধরনের পদক্ষেপ নেননি। ফলে এই মেলাটি নিয়ে যে বড় একটি দেনদেন হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে শিক্ষার পরিবেশন নষ্ট করে মেলা চলতে দেওয়া যাবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে এক অভিভাবক জানিয়েছেন- স্কুল মাঠ থেকে সরিয়ে অন্যত্র না নেওয়া হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে অভিভাবকরা আন্দোলনে নামবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন- মেলার অনুমতি দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ যতটা না লাভবান হয়েছে তার চেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। কারণ চুক্তিতে ৪ লাখ টাকার বিষয়টি প্রকাশ করা হলেও সমঝোতা হয়েছে ১০ লাখ টাকার। বাকি ৬ লাখ টাকা ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যে কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি-নিষেধও উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অনুমেয়।

তবে এসব অভিযোগ সমুলে অস্বীকার করে বিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলছেন- তাদের দাবি প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ নেই। যে কারণে মেলা কমিটিকে ৪ লাখ টাকায় মাঠটি ছেড়ে দিয়েছে। এই টাকাগুলো দিয়ে স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

তবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন- গতবারও একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠটি বড় একটি অংকে মেলা কমিটিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে স্কুলে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করা হয়নি। এমনকি টাকার সুনির্দিষ্ট কোন হিসেবেও নেই ম্যানেজিং কমিটির কাছে।

তবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোর্শেদ মাহবুব শামিম বলছেন- গতবার তিনি সভাপতি ছিলেন না। যে কারণে টাকার বিষয়টি তার জানা নেই। এবার বাড়তি কোন টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন- স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থে ৪ লাখ টাকায় এক মাসের জন্য মাঠটি দেওয়া হয়েছে।

ওএফ

মাঠ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close