সাড়ে ৪ মাস পর গৃহবধূ বন্যার লাশ উত্তোলন
বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার মাস পর কবর থেকে বন্যা আক্তার (২৬) নামের এক গৃহবধূর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে রোববার (১২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামে কবর থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উত্তোলন করে পুলিশ।
উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাফর ইকবাল জানান, আদালতের নির্দেশে গৃহবধূ বন্যার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এসময় নির্বাহী হাকিম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুম্পা সিকদার উপস্থিত ছিলেন।
সম্পর্কিত খবর
মৃত্যুর প্রায় চার মাস ১৮ দিন পরে ওই গৃহবধূর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পরিবার ও এলাকাবাসীর সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৫ মার্চ উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামের মোশারফ হাওলাদারের বাসা থেকে অগ্নিদগ্ধে মৃত গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতর পরিবারের আবেদনের পর ওই সময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল নিহত গৃহবধূর ছোট বোন লিপি বেগম তার বোনকে যৌতুকের টাকার জন্য নির্যাতনের পর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ৬ জনকে আসামি করে বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এ মামলার প্রেক্ষাপটে আদালতের বিচারক অনুতোষ চন্দ্র বালা গত ২৫ মে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন।
নিহত গৃহবধূর পরিবার ও আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, বন্যা অক্তারের সাথে সামাজিকভাবে ২০০৭ সালে উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামের মোশারফ হোসেনের পুত্র মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে স্বামী নজরুল ইসলাম ব্যবসা করতে বাবার বাড়ি থেকে ধার বাবত পাঁচ লাখ টাকা আনার জন্য স্ত্রী বন্যাকে চাপ দেন। এরপর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। পরে বোনের সুখের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে দুই বছরে ফেরত দেয়ার শর্তে ধার বাবত দুলাভাই নজরুলকে পাঁচ লাখ টাকা দেন বাদি লিপি বেগম। কিন্তু ২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিহত বন্যার ছোট বোন লিপির নিকট থেকে ধার নেয়া পাঁচ লাখ টাকা দিতে অপরাগত জানান স্বামী নজরুল। এনিয়ে মোবাইল ফোনে নজরুল ও লিপির মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হলে বোন লিপির পক্ষ নেন নিহত বন্যা। এরই জের ধরে গত ২১ মার্চ ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে বোনের দেবর রফিক হাওলাদার (২৮), রবিউল হাওলাদার (২৫) স্বামী নজরুল ইসলাম (৩২) শ্বশুর মোশারফ হোসেন (৫০) বন্যা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে মারা গেছে ভেবে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বন্যার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
বন্যার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২২ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। ২৫ মার্চ ঢাকা মেডিকেল থেকে রোগী রিলিজ করে দিলে বাড়ি ফেরার পথে বন্যা মারা যান।
নিহতের ছোট বোন মামলার বাদী লিপি বেগম জানান, আমার বোনের মৃত্যুর পরের দিন ২৬ মার্চ উজিরপুর থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা নিতে তালবাহানা শুরু করে পুলিশ। উজিরপুর থানা মামলা না নিলে গত ১৮ এপ্রিল বোনের স্বামী, শ্বশুর ও দেবরসহ ৬ জনকে আসামি করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি (লিপি) মামলা করলে আদালতের বিচারক এ নির্দেশ দেন।
/পি.এস