• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ছেলেরা বিদেশে প্রচুর টাকার মালিক

ছেলের বউদের অবহেলায় মা মৃত্যুর প্রহর গুনছে, বাবা শ্রবণ প্রতিবন্ধী

প্রকাশ:  ২২ জুলাই ২০১৮, ১২:০১
মাদারীপুর প্রতিনিধি

দরিদ্র-অসহায় ও সন্তানের অবহেলা-অপমানের স্বীকার হয়ে পরপারের অপেক্ষায় বৃদ্ধ বাবা আঃ করিম শিকদারের জীবনের শেষ আশ্রয় হয়েছে বড় মেয়ের জামাইর বাসায়। মা শাহাতন নেছা (শাহু) চরম অযত্ন ও অবহেলায় প্যারালাইজ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় স্বামীর ভিটায়। এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উত্তর খাগছাড়া গ্রামে।

শ্রবনপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধ আঃ করিম শিকদার এক সময় জীবনের সবটুকু শ্রম আর ঘানি টেনেছেন পুরো পরিবারের জন্য। অথচ বার্ধক্য, রোগাক্রান্ত আর স্বজন বিচ্ছিন্ন হয়ে এই আঃ করিম শিকদার ও তার স্ত্রী শাহাতন নেছা (শাহু) বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এখন শুধুই নিঃসঙ্গতা। বয়সের ভাঝ ও ক্লান্তির ছাপে এখন শাহাতন নেছা (শাহু) ৭৫ বছরের এই বৃদ্ধা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

নিজের সর্ম্পকে শাহাতন নেছা (শাহু) বলেন, ‘স্বামীর স্বল্প আয়ে চলতো সংসার। ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে সংসারে। সেই সন্তানদের কোলে পিঠে লালন-পালন করে বড় করেছেন। প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় করেছেন কঠোর পরিশ্রম। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার। কিসে হবে সন্তানের কল্যাণ সে চিন্তায় রাতকে দিন, আর দিনকে করছেন রাত। অথচ স্বামী আঃ করিম শিকদার বৃদ্ধ, শারীরিকভাবে অচল ও শ্রবনপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সেই সন্তানের অবহেলায় বোঝা হয়েছেন এখন।

একমাত্র বেকার ও অর্থ দুর্বল ছেলে বাদল শিকদার ছাড়া তার পাশে নেই অন্য অর্থ সম্পদের মালিক সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদার এবং কাতার প্রবাসী অহিদুল শিকদার। এছাড়া সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদারের বউ রাশিদা বেগম তাকে তাড়িয়ে দেয়ায় স্বামী ভিটায় ছোট একটি ঘরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। নিজের দুঃখের কথা বলতেই বারবার কান্নায় মুর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি’। সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদার ও কাতার প্রবাসী অহিদুল শিকদারের বউদের অযত্ন, অবহেলায় না খেয়ে দিন-রাত যাপন করছে।

ছেলে বাদল শিকদার বলেন, মা দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইস হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। নিজের দুই পায়েও হাটাচলা করতে পারেন না। এখন চলাফেরা করতে হয় অন্যের সাহায্যে নিয়ে। আমি অর্থ উপার্জন করতে না পারায় আমার বউসহ অন্য (সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদার এবং কাতার প্রবাসী অহিদুল শিকদার) ভাইদের বউরাও মায়ের সেবা যত্ন করছে না। বরং আমি বললে, তারা আমাকে মারপিট করে ও নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

মেয়ে নুর নাহার বেগম বলেন, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে আলাদ সংসার আমার, সব সামাল দিয়ে প্রতিদিনই মাকে দেখে আসছি। ভাই-ভাবিদের অযত্ন ও চরম অবহেলায় বাবা এখন বড় বোনের বাড়ীতে থাকেন। মা প্যারালাইস তাই কেউ তার পাশে নেই। মা’র সেবার করার জন্য ভাবিদের টাকা দিতে চাই তবুও তারা আমার মা’র সেবা-যত্ন করবে না। একমাত্র ভাই বাদল শিকদার সেই একটু মা’র দেখা-শোনা করেন।

স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তি মোঃ মিজানুর রহমান শিকদার জানান, এরা আমার বংশের লোক। স্থানীয় প্রায় ২০/২৫ জন জনপ্রতিনিধি নিয়ে কয়েক দফায় আঃ করিম শিকদারের ছেলে ও বউদের নিয়ে বিষয়টি বুঝানো হলেও তার ছেলের বউরা অসুস্থ, প্যারালাইস মা’র সেবা, যত্ন করবে না। বিষয়টি অমানবিক। তাই প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মস্তফাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মল্লিক জানান, আমি এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না, তবে কেউ যদি আমাকে জানায় তাহলে আমি তাকে সাহায্যে করবো। এরপরও এখনই আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

ওএফ

অযত্ন,অবহেলা,বাবা,মা,ছেলে,বউ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close