• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

তিস্তার চরাঞ্চল বিদ্যালয়টির বেহাল দশা

প্রকাশ:  ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৭:০১
নীলফামারী প্রতিনিধি

তিস্তার চরের মধ্যে ফাঁকা মাঠে কয়েকটি বাঁশের সঙ্গে টিন বেঁধে একটি ছাউনি, এক পাশে টিন বেঁধে বেড়া দেয়া, তিন পাশ খোলা, কয়েকটি বেঞ্চ, কয়েকজন শিক্ষার্থী আর একজন শিক্ষক। এটা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

শিক্ষার করুণ অবস্থার চিত্র পাওয়া গেল নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচাপানি ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামার চরে। শুধুমাত্র কাগজ কলমে শিক্ষা দেয়া হয় পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রতি মাসে ভুয়া প্রতিবেদনে সরকারী টাকা উত্তোলন করা হলেও শিক্ষা বিভাগ নিরব ভুমিকা পালন করছে। অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কোন কর্মকর্তাই বিদ্যালয়টিতে যান না।

এছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন শিক্ষক নিয়মিত অনুপস্থিত থাকেন। মাসে ২-৩ দিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বিল উত্তোলন করেন। একজন শিক্ষক নিয়মিত আসলেও ক্লাশ নেয়া সম্ভব হয় না।

২০১৭ সালের বন্যায় বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার পর চরে টিনের ঘর তৈরি করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় অভিভাবকরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেয়া যায়, পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন শিক্ষক অনুপস্থিত। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল বাশার একাই প্রতিদিন লুঙ্গি পরে আসেন। বিদ্যালয়টি শিক্ষক হাজিরা খাতা পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষক মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে আসলেও আসেন লুঙ্গি পড়ে। বিদ্যালয়টিতে ৯০ জন শিক্ষার্থীর নাম কাগজে কলমে থাকলেও ১৫ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া যায়।

স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, তিনজন শিক্ষক মাসে ২-৩ দিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে সরকারী বেতন ভাতাদি উত্তোলন করেন। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকলেও সেখানে পড়াশোনা না হওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী হাতিবান্ধা থানায় আত্মীয়ের বাসায় রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন সন্তানদের।

ঝুনাগাছচাপানি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, পূর্ব ছাতুনামা চরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও পড়াশোনা না হওয়ায় অভিভাবকরা পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের অভিযোগ দিয়েও সুফল মিলে না এলাকাবাসীর।

সহকারী শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, তিনজন শিক্ষক সবাই ব্যস্ত আছেন ক্লাস্টারের মিটিংয়ে খাওয়ার জন্য বাজার করতে গেছেন। লুঙ্গি পরে প্রতিষ্ঠানে আসার বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনুমতি নেয়া আছে। তিনি স্বীকার করেন এখানে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানও লুঙ্গি পড়ে আসেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, আমি তো বিদ্যালয়ের ক্লাস্টারের বাজার করার কাজে ব্যস্ত আছি। তিস্তার দুর্গম এলাকায় হওয়ার কারণে লুঙ্গি পড়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি নেয়া হয়েছে।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম বলেন, সহকারী শিক্ষক লুঙ্গি পরে ক্লাশ করার কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনজন শিক্ষক কেন অনুপস্থিত বিষয়টি আমার জানা নেই। দুর্গম এলাকার কারণে উক্ত প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব হয় না।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশ বলেন, আমি ছুটিতে আছি বিষয়টি বলতে পারবো না। তবে সহকারী শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে। লুঙ্গি পরে কোনো শিক্ষকের ক্লাশ করার নিয়ম নেই।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক খালেদ রহীম বলেন, বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে।

/পি.এস

নীলফামারী,বিদ্যালয়

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close