সালিসে তরুণীর মাথা ন্যাড়া করলেন গ্রাম্য মাতবররা
নীলফামারী সদরের রামনগর চাঁদেরহাট কলেজপাড়া গ্রামের প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে গ্রাম্য সালিসে এক তরুণীর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন গ্রাম্য মাতবররা। একই সঙ্গে সালিসে ওই তরুণীকে মারধরও করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে ওই তরুণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। স্থানীয় সচেতন মহল মাথা ন্যাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করেছে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, হিন্দু পরিবারের ওই তরুণীর সঙ্গে মুসলিম পরিবারের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিন্দু শাস্ত্রমতে তাঁকে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করাতে ন্যাড়া করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সালিসকারীরা।
সম্পর্কিত খবর
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে গত ২ জুলাই কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী গ্রামে ওই ছেলের বাড়িতে চলে যান তরুণী। এরপর গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে গত সোমবার রাতে তাঁকে বাড়িতে ফেরত আনা হয়। পরের দিন ভোরে প্রতিবেশীরা সালিস বসিয়ে তাঁর মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
ওই তরুণী জানান, ২০১৩ সাল থেকে শহরের পরচুলা তৈরির একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে এক অটোবাইকচালকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দেড় বছর আগে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে দেয় তার পরিবার। তার পরও মুসলিম পরিবারের ওই ছেলেকে বিয়ে করেন ওই তরুণী। দুই পরিবার মেনে না নেওয়ায় গতকাল সালিসের মাধ্যমে বাবার বাড়িতে ফেরত আনা হয় তাঁকে।
তরুণী অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘আমাকে ফেরত আনার পর সমাজের লোকজন প্রায়শ্চিত্ত করতে বলেন। এরপর আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁরা আমার মাথা ন্যাড়া করে দেন। রাজি না হওয়ায় মারধরও করা হয় আমাকে। আমি তাঁদের সব কথা মানতে রাজি আছি, কিন্তু মাথা ন্যাড়ার বিষয়টি মানতে পারছি না।’
তরুণীটি আরো বলেন, ‘সেখানে প্রতিবেশীসহ অনেক লোকজন উপস্থিত ছিল। এ সময় প্রতিবেশী দিনবন্ধু রায় (৪০) এবং সদানন্দ রায় (৪৫) ব্লেড দিয়ে আমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন।’
ওই সালিসে উপস্থিত বিবেকানন্দ রায় (৩৫), কনক চন্দ্র রায় (৪৫), সুধীর চন্দ্র রায় (৫৫), সুরেশ চন্দ্র রায় (৪৫) বলেন, ‘ওই তরুণী হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলিম হয়েছিল। সেখান থেকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রায়শ্চিত্তের অংশ হিসেবে তার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে দিনবন্ধু রায় বলেন, ‘সমাজের সব লোকজনের সঙ্গে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ব্লেড দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছি—আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সঠিক নয়।’
এ বিষয়ে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি মেয়েটিকে উদ্ধার পর্বের সালিসে ছিলাম, কিন্তু মাথা ন্যাড়া করার বিষয়ে কিছু জানি না। এ কাজটা তারা ঠিক করেনি।’
নীলফামারী কেন্দ্রীয় কালীমন্দিরের পুরোহিত অশোক কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘সনাতন হিন্দু ধর্মে মাথা ন্যাড়া করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। সে স্বেচ্ছায় প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলে বিধানমতে চুলের অগ্রভাগে এক থেকে দেড় ইঞ্চি কেটে ফেলে তার প্রায়শ্চিত্ত করবে। প্রায়শ্চিত্তের নামে মাথা ন্যাড়া করে ঠিক করেনি, এমন কোনো নিয়মও নেই।’
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল আকতার বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে জেনেছি তাদের ধর্মীয় কিছু আচার অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় তারা ওই কাজটা করেছে।’
/এসএম