সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল: নাছের রহমান
বুধবার (২০ জুন) সকালে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মনসুর নগর ও কামার চাক ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণকালে প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহামান পুত্র বিএন পি'র কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সাংসদ এম নাছের রহমান বলেছেন, “মৌলভীবাজার শহরের একাংশসহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় ডুবে গেলেও বন্যার্ত মানুষের পাশে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ত্রান নিয়ে সরকার দাঁড়াচ্ছে না। “বন্যাদুর্গতদের জন্য বর্তমান সরকারের যে ত্রাণ তৎপরতা তা একেবারেই অপ্রতুল।
বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই মানুষদের এই সংকটকাল কাটিয়ে উঠতে মৌলভীবাজার, রাজনগরসহ ক্ষতিগ্রস্থ সব এলাকাকে যত দ্রুত সম্ভব বন্যানদুর্গত ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দের আহবান জানান তিনি। ”
সম্পর্কিত খবর
রাজনগর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়ন ও কামার চাক ইউনিয়েনের হাইস্কুল ও প্রাইমারী স্কুলের সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্তদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে তাদের মধ্যে ২০০০ ব্যাগ চাল, আলু, তেলসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, “এ অঞ্চলের পুরো অংশ প্লাবিত হয়ে মানুষ দুঃসহ অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। মানুষের এই দুর্বিষহ অবস্থায় সরকার প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না।”
তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের ‘সকল বিভেদ ভুলে’ বন্যার্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আব্দুলওয়ালী সিদ্দীকি, আলহাজ এম এ মুকিত, যুগ্ম সম্পাদক ফয়সল আহমেদ, হেলু মিয়া, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বক্সী মিছবাউর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল, সম্পাদক এম এ মোহিত, সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জে এম মুক্তাদির রাজু, যুগ্ম সম্পাদক পিপলু আব্দুল হাই, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, রাজ নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.জিতু মিয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্বাস উদ্দিন মাষ্টার, সাধারণ সম্পাদক সুন্দর বক্স, যুগ্ম সম্পাদক মোনায়েম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক জুবের আহমেদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইকরাম হোসেন, বিএনপি নেতা জুয়েল আহমেদসহ স্থানীয় বিএনপির তার সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মী।
এর আগে বিএনপি নেতা মৌলভীবাজারে আখাইলকুড়া ইউনিয়নের আখাইলকুড়া ইউ পির চানপুর, সুমারাই ও আমুয়া গ্রামের পানিবন্দী ৩০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরন করেন। এবং কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর, হাজিপুর ও টিলাগাঁওসহ বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে মানুষের খোজখবর নেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এড.আবেদ রাজা সহজেলা বিএনপির নেতারা ছিলেন।
এদিকে মঙ্গলবার (১৯ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের ৬নং ওয়ার্ডে বড়হাট এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্যার পানি নেমে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। এ সময় মন্ত্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৪০ লাখ টাকা ও ১ হাজার বান টিন বরাদ্দ দেয়ার কথা জানান।
মায়া বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজে হাত দেবে সরকার। এদিন দুপুরে ত্রাণমন্ত্রী সকালে জেলা প্রশাসনের সাথে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউসের মুন হলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজারে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ত্রাণের কোনো অভাব নেই। কেউ না খেয়ে থাকবে না।’
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৬০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা মজুত রয়েছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘব না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ অব্যাহত থাকবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ১১৪৩ মেট্রিকটন চাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ৬৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পূণবার্সনের জন্য বরাদ্ধ হয়েছে ১ হাজার বান্ডিল টিন এবং ৩০ লক্ষ টাকা।
উল্লেখ্য, মনু নদীর বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার শহরের তিনটি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এর মধ্যে শহরতলীর বড়হাট এলাকা, কুসুমবাগ, বড়কাপন, যোগীডর দুর্লভপুর, ঘরুয়া, বাহারমর্দন, সমপাশি, ভুজবল, খিদুর, দ্বারক, পাগুলিয়া এবং সদর উপজেলার হিলালপুর ও শেখেরগাঁও প্লাবিত হয়।
এখন পর্যন্ত ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের ৫ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার মোট ৪০ হাজার ২০০ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাইয়ের পর এবার কুশিয়ারা নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে মনু ডাইকের উত্তরভাগ ইউনিয়নের হলদিগুল এলাকায় এ ভাঙন দেখা দেয়।
এরপর সকাল থেকে রাজনগরের উত্তরভাগ ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করে। এভাবে বিকেল পর্যন্ত উত্তরভাগ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর আগে ১২ জুন রাত থেকে মনু ও ধলাই নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ১৯টি (মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের ১২, ধলাই বাঁধের ৬ ও কুশিয়ারার একটি) স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।
এতে জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলা, মৌলভীবাজার শহর ও সদর উপজেলায় আংশিক বন্যা দেখা দেয়। পরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো শহরের বড়হাট এলাকাসহ পশ্চিম অংশের কিছু অংশে বন্যার পানি রয়েছে।