• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সাভারে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিদেশি সবজি

প্রকাশ:  ২০ জুন ২০১৮, ১৪:২৫
জাহিদ হাসান, সাভার

রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ সাভারে বাণিজ্যিকভাবে চাইনিজ খাবারসহ পাঁচ তারকা হোটেলের রান্নায় ব্যবহৃত বিদেশি সবজি চাষ হচ্ছে। এই সবজি চাষ করে ভাগ্য ফিরিছেন উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মেইটকা গ্রামের অনেকেই। এখানকার উৎপাদিত সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্রগ্রামসহ কয়েকটি এলাকার চাইনিজ রেস্তোরায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রির আড়তেও সাভারের এই বিদেশী সবজির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

সম্পর্কিত খবর

    বিদেশি সবজি চাষে সাভারের দক্ষিণ মেইটকা গ্রামের সফল উদ্যোক্তা হলেন মো. কাইয়ুম হোসেন। তিনি তাঁর কৃষি খামারটি নাম দিয়েছেন ‘কৃষক বাংলা এগ্রো প্রডাক্ট’। কাইয়ুম হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক ভাবে এই সবজি চাষ করে আসছেন। বাবা আবদুল কাদের এর আগ্রহে প্রথম তিনি ১০ শতাংশ জমিতে ‘বেবি কর্ন’ দিয়ে এই বিদেশি সবজি চাষ শুরু করেন। মূলত তিন ভাই মিলে এই কাজটি করছেন। সবজি উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও সবজি তুলে সেটি বাজারজাতকরণের জন্য প্যাকেটজাত বা তৈরি করা তাঁর (কাইয়ুম) কাজ। উৎপাদিত সবজি ব্যবহার করে তাঁর বড় ভাই মোশারফ হোসেন সাভারের থানা রোড ও হেমায়েতপুরে দুটি চাইনিজ রেস্তোরা চালান। আর ছোট ভাই কোব্বাদ হোসেন উৎপাদিত সবজি এলাকার অন্যান্য চাইনিজ রেস্তোরা, রাজধানীর কাওরানবাজারের পাইকারি আড়তে, ঢাকা-চট্রগ্রামসহ আরো কয়েকটি এলাকার চাইনিজ রেস্তোরায় এই সবজি সরবরাহের কাজটি দেখাশুনা করেন। ছোটভাই কোব্বাদ হোসেনসহ তিনি ইতিমধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, মালোয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে এসক সবজির বিজ সংগ্রহ ও চাষের কৌশল রপ্ত করে এসেছেন।

    কাইয়ুম হোসেন আরও জানান, তিনি প্রায় দেড়শ’ বিঘা জমিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বিদেশি সবজি চাষ করছেন। এর মধ্যে নিজের রয়েছে ১০ বিঘা, আর বাকি জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন। তাঁর উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে স্প্রিং অনিয়ন, সুইট কর্ন, সিমলা মরিচ, থাই পাতা, থাই আদা, থাই পালং শাক, জুকিনি, পাচলি, লাল কপি, প্রসেস্ড ও নন প্রসেস্ড বেবিকর্ন ছেলা, ব্রুকলি, বিট রুট, ডালের গেরা, বেন কার্ড তপু, বকচাই, বাধাকপি, চাইনিজ পাতা, সেলরি, সবুজ ক্যাপসিকাম, লাল ক্যাপসিকাম, হলুদ ক্যাপসিকাম, গাজর, জালাপিনু মরিচ, চেরি টমেটো, ফ্রান্স বিন, আইচ বার্গ, সালাত পাতা, লাল সালাত, ওয়েস্টার মাশরুম প্রভৃতি।

    চারা বা বিজ বপনের পর প্রকার ভেদে ২ থেকে তিন মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। তিনি ছাড়া এলাকার আল-আমিন, রমজান, আসাদুল, শাহজালাল, সাদেক মেল্লা, মিলন, সোহরাব হোসেনসহ আরো অনেকেই তার দেখাদেখি এই সবজি চাষে এগিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় বিদেশি এই সবজি চাষে লাভ বেশি হয়। সে কারণে অনেকেই এখন এই সবজি চাষে এগিয়ে আসছেন। তাছাড়া এসকল সবজি এখন সাধারণ মানুষেরাও চিনতে শুরু করেছেন। তাই এই সকল সবজির চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

    সবজির সাধারণ রোগবালাই হলে তিনি নিজে সামান্য কিটনাশক ব্যবহার করে সমাধানের চেষ্টা করেন। গোবর বা জৈব সারই বেশি ব্যবহার করেন। যত্ন নিলে সারা বছরই এসকল সবজির ফলন পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। ভবিষ্যতে তিনি বিদেশেও এই সবজি রপ্তানির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    তার দেখাদেখি বিদেশী সবজি চাষী জানান, কাইয়ূমের সফলতা দেখে আমরাও শুরু করেছি। তার মাধ্যমে এই গ্রামে সবজি চাষাবাদের নতুন মাইল ফলক তৈরি হয়েছে। আমরাও ভালো ফল পাচ্ছি।

    এলাকার ঊর্বর মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সাভারে বিদেশি সবজি চাষ বাড়ছে দিন দিন। অন্যান্য সবজির তুলনায় নতুন জাতের এই সবজি চাষে লাভবানও হচ্ছেন অনেকেই। উৎপাদিত সবজি যাচ্ছে সারাদেশের চাইনিজ রেস্তোরাগুলোতে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বিদেশি সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। কোন সবজি চাষি সমস্যা নিয়ে এলে তাদের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অনেক বেকার যুবক এই সবজি চাষে এগিয়ে আসছে।

    এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, মাটি উর্বর ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সাভারে বিদেশি সবজি চাষ দিন দিন বাড়ছে। কাইয়ূমের মতো অনেকেই বিদেশী সবজি ছাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর তাদের মাঠ পর্যায়ে সার্বিক সহযোগিতা জন্য কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এছাড়া রয়েছে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ। উত্পাদিত সবজি যাচ্ছে সারা দেশের চীনা রেস্তোরাঁগুলোতে।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close