• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

প্রথমবারের মত চালু হয়েছে ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারি প্রশিক্ষণ স্কুল

প্রকাশ:  ২৩ মে ২০১৮, ১৭:৩৯
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়াসহ সারা দেশের মানুষের সাথে দূর দূরান্তের যোগাযোগের নির্ভরতা, নিরাপদ, নিরাপত্তা, মানবিক আচরণ সহ মোটরযান বিভাগে দক্ষ পরিবহন শ্রমিক গড়ে তুলতে মাঠে নেমেছে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। দেশে প্রথমবারের মত জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করেছে। এই স্কুলের মাধ্যমে অদক্ষ মোটরযান শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলতে কাজ করবে। ইতিমধ্যে স্কুলটি চালু হওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং দক্ষ চালক তৈরীর উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানে চালক ও তাদের সহকারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে। স্কুলটিতে বেকার যুব সমাজাও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষ জনশক্তিতে রুপ দিয়ে নিজের আয়ের পথ সৃষ্টি করতে পারবে।

বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বগুড়ায় জেলায়, বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস, কার, সিএনজি মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার যানবাহন রয়েছে। এই যানবহনগুলো বগুড়া থেকে সারা দেশের রুটে চলাচল করে। বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য প্রায় ২০ হাজার। এদের সবাই সু প্রশিক্ষিত না। নিজেরাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মোটরযান চালিয়ে সংসার পরিচালনা করছে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার কারণে এই পরিবারগুলোতে অন্ধকার নেমে আসে। তাদের কথা চিন্তা করে প্রথমে ১৯৯৯ সালে বগুড়া শহরের প্রথম বাইপাসের পাশে হরিগাড়ি নামক স্থানে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ২০ শতাংশ জমি কেনা হয়।

এই জমিতে সাধারণ শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্মানের উদ্দ্যোগ নেয়া হয় ২০০১ সালে। একতলা ভবন নির্মাণের পর নানা কারণে সেটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নির্মাণ কাজটি বন্ধ হয়ে গেলে অদক্ষ মোটরযান শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলে দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়ে কাজ শুরু হয়। এরপর ওই ভবনে বাংলাদেশ ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করার পরিকল্পনা করেন বগুড়া জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলালসহ কার্যনির্বাহি কমিটির সকল সদস্যগণ।

পরিকল্পনা মাফিক ২০১৭ সালে এসে স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যায়ে দৃষ্টিনন্দন চার তলা ভবন নির্মাণ শেষ হয়। ভবন নির্মাণ শেষে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ স্কুল ও অবকাঠামো পরিদর্শন করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন দেয়। সরকারিভাবে অনুমোদন পায় বাংলাদেশ ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুল। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অনুমোদন প্রাপ্ত এই স্কুলটি পরিচালিত হবে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কর্তৃক। গত বছর জুলাই মাসে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ১০ প্রশিক্ষনার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারি প্রশিক্ষণ স্কুলের।

এই স্কুলে ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারির জন্য ৩ থেকে ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যাবে। এই স্কুলে মোটর শ্রমিক থেকে শুরু করে বেকার যুবক যুবতী ড্রাইভিং কাম অটো মেকানিক, অটো মেকানিক্স, ওয়েলডিং এন্ড ফেব্রিকেশন, ট্রাভেল ট্যুরিজমস এন্ড টিকেটিং এবং ইলেকট্রিক্যাল হাউজ ওয়্যাারিং নামের ৫টি কোর্স অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্কুলে একজন মোটরযান সহকারিরা যাত্রী সেবা প্রদানের নিয়মাবলি, নারী ও শিশুর প্রতি বিশেষ যতœবান, মানবিক আচরণ সহ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর নিয়ম ও চাকুরীকালিন করনীয় বিষয়েও জানানো হচ্ছে এবং প্রদান করা হচ্ছে প্রশিক্ষণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন আলহাজ¦ আব্দুল গফুর এবং বিদ্যুৎসাহি রয়েছেন বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল।

বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুলের চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন শেখ হেলাল জানান, সড়ক দূর্ঘটনা কমিয়ে আনতে, সড়কে অনাকাঙ্খিত আচরণ রোধে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে সময়মত পৌঁছানো, মানবিক আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এখানে যে কেউ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মোটরযান বিভাগে দক্ষতার সাথে পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন। দক্ষ মোটরযান সহকারি যত বাড়বে ঠিক ততই আমাদের সড়কে দুর্ঘটনা কমবে।

সাধারণ শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলে তাদের জীবন মানেরও উন্নয়ন করা হবে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর সরকারি সনদ প্রদান ছাড়াও চাকুরী পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। সারা দেশের মধ্যে বগুড়ায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলো। এই প্রতিষ্ঠানে শুধু বগুড়ার শ্রমিক নয় সারাদেশের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সরকারি নিয়ম মাফিক প্রতি শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও প্রশিক্ষণ নিতে হবে। পাশাপাশি বেকার যুবকরা ও এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবহন সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এই স্কুলে মোট ৫টি কোর্স চালু আছে। প্রয়োজন হলে এই এলাকার মানুষের কথা ভেবে দক্ষ জনবল তৈরীর বিষয়েও কাজ করা হবে। যাতে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত হয় এদেশের যুব সমাজ।

বাংলাদেশ ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুলের একাডিমক পরিচালক কামরুল মোর্শেদ আপেল, জানান একজন অধ্যক্ষ, ২ জন পরিচালক, ৪ জন প্রশিক্ষক এবং ৬ জন কর্মচারী নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষনার্থী বাড়ার পাশাপাশি জনবল বাড়ানো হবে।

তিনি জানান, নতুন চালক সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিটি সদস্যকে সপ্তাহে একদিন করে এখানে ট্রাফিক আইন ছাড়াও মোটরযান আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করে থাকেন। এ ছাড়াও মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন মনোনীত দুই জন দক্ষ চালক শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করে থাকেন।

এই প্রশিক্ষণের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার পাশাপাশি চালক ও তাদের সহকারিদের সাথে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। এতে করে পরিবহন সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি যেমন গড়ে উঠবে আবার দেশে পরিবহন শ্রমিকদের মানও বৃদ্ধি পাবে। এই স্কুলে একজন অধ্যক্ষ রয়েছেন।

বাংলাদেশ ড্রাইভিং ও মোটরযান সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুলের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জাহিদ জানান, এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করে যে কেউ আয়ের উৎস খুঁজে পাবে। এই প্রতিষ্ঠানে দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের বিভিন্ন নিয়মাবলী বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যাতে করে মোটরযান সহকারিরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। এই স্কুলে এখন ছাত্ররা নিয়মিত ক্লাস করছে।

ওএফ

ড্রাইভিং,মোটরযান,সহকারি,প্রশিক্ষণ স্কুল

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close