• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বীজাগারগুলো মাদকাসক্তদের আস্তানা

প্রকাশ:  ২৩ মে ২০১৮, ১৬:০২
আবদুল্লাহ আল-মামুন (ফেনী)

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় কৃষি বিভাগের ইউনিয়ন বীজাগারগুলো জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় ভবনগুলো রীতিমত বখাটে ও মাদকাসক্তদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

ভবন গুলোর ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। ছাদ গেমে বৃষ্টির পানিতে ভিজে আসবাবপত্র ও মেঝে একাকার হয়ে ওঠে। দরজা-জানালাগুলো কোন রকম রশি দিয়ে লাগানো। থাকা ও রান্নার কক্ষগুলোতে উই পোকার মাটির বড় বড় স্তুপ কোথাও কোথাও ইঁদুর, সাপের ধাপা ধাপি দেখে মনে হয় ভুতুড়ে ঘর। ভেতরে প্রবেশ তো দুরের কথা উকি মেরে তাকাতেও যেন ভয় লাগে। অফিসের চার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যে নিজেদের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় কাপড় রেখে আসার জন্য ভয়ে ভয়ে অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। না জানি আবার হঠাৎ করে ছাদ ধসে পড়ে মাথার উপরে। সম্প্রতি বৃষ্টির মাঝে উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বক্তারমুন্সী বাজারের গো-হাটা সংলগ্ন কৃষি অফিসের মঙ্গলকান্দি মির্জাপুর ব্লক ইউনিয়ন বীজাগার কাম উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বাসা ও কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এই জরাজীর্ণ দূরাবস্থা দেখা যায়।

সম্পর্কিত খবর

    স্থানীয় লোকজন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ষাটের দশকের আইয়ুব খানের শাসন আমলে সারা দেশে তৎকালীন সময়ে সরকারের সবুজ বিপ্লবের কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বীজাগার স্থাপন করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সালে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৯টি কার্যালয়ের মধ্যে মাত্র দুটি কার্যালয়ের যতসামান্য ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার করা হয়। বাকি ৭টি কার্যালয় অদ্যাবধি কোন প্রকার সংস্কারের মুখ দেখেনি। যার ফলে ভবনগুলো জরাজীর্ণ এবং ভুতুড়ে ভবনে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলকান্দি, চর দরবেশ, সোনাগাজী সদর, আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়ন বীজাগার কার্যালয় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বাকি ভবনগুলোও ব্যবহারের অনেকাংশেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

    উপজেলার বক্তারমুন্সী বাজারের পাশে অবস্থিত মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর ব্লক অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব জানান, তাঁর অফিসটি জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটিতে ঠিক মত অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। দৈনন্দিন দাপ্তরিক কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকান, কিংবা কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনায় বসে সমাধান করতে হচ্ছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় ভবনের বেশ কিছু জায়গা বখাটেরা দখলে নিয়ে মাদকের আস্তানায় পরিণত করেছে। এমন কি ভবনটি কিছু কিছু অংশ জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় এক শ্রেণির প্রভাবশালি মহলও দখল করতে পায়তারা করছে।

    তিনি বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীরা অফিসের চারপাশে ময়লা ফেলে আবর্জনার স্তুপে পরিণত করেছেন। রাতের বেলায় অফিস ও অফিস সংলগ্ন এলাকা মাদকাসক্তদের আখড়ায় পরিণত হয়ে যায়। সংস্কারের জন্য বারবার লিখে ও মুখে বলে এ যাবৎ কোন সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে তাদেরকে কর্মস্থল থেকে অনেক দূরে বিশেষ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে কর্মকর্তা ও সেবা প্রত্যাশী কৃষকদেরকে বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

    উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আকরাম উদ্দিন জানান, সব ধরনের কৃষকদেরকে জরুরী ভাবে কৃষি বিষয়ক সেবা ও পরামর্শ প্রদান, কৃষকদের মাঝে কৃষি কার্ড বিতরণ, উপ সহকারী কর্মকর্তাদের দৈনন্দিন জরুরী কার্যক্রম পরিচালনা, নতুন নতুন প্রযুক্তিগুলো কৃষকদের নিকট পৌঁছে দেয়া এবং সর্বোপরি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসিক বাসা হিসেবে এই সকল কার্যালয় ব্যবহার হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ভবনে ৪টি থাকার রুম, দুটি রান্নার কক্ষ, দুটি বাথরুম এবং একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ ভবনগুলো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনগুলো ঠিক মতো ব্যবহার হচ্ছে না।

    সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, জরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কার এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার আবেদন করেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। তবে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ অফিস ও কৃষকদের উন্নয়নে ভবনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, পরিত্যক্ত ভবন গুলো নতুন করে নির্মানের জন্যও লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close