• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘নিজেকে প্রতিবন্ধী না, মানুষ মনে করি’

প্রকাশ:  ০৯ মে ২০১৮, ১৮:৪২
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে সাটুরিয়ার রুবেল মিয়া পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। রুবেল মিয়া জেলার সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ২.৮৯ পায়। কিন্তু অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তিত অপ্রতিরোধ্য রুবেল।

রুবেল মিয়া তিল্লি গ্রামের ঘোষ পাড়ার হবি মিয়ার ছেলে। জন্মের পর থেকেই তার দুই হাত নেই। নিজের আগ্রহ থেকেই দরিদ্র ঘরের সন্তান রুবেল পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু রুবেল পাশ করলেও তাদের সংসারে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। তার পরবর্তী শিক্ষা জীবন কিভাবে চলবে এ চিন্তায়।

রুবেলের মা সখিনা বেগম জানান, তার ৩ সন্তানের মধ্যে রুবেল ২য়। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। রুবেলের জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। বড় হওয়ার পর সে একাই স্কুলে যেত। পড়াশোনা করাচ্ছি অনেক কষ্ট করে। নিজে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করি, ওর বাবা ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তাই দিয়েই লেখাপড়া করিয়েছি। কিন্তু এখন ওকে কিভাবে কলেজে ভর্তি করাব সেই চিন্তায় আছি।

রুবেল মিয়া তার দু পা দিয়ে নিজের খাতা ভাজ, মার্জিন করে সুন্দর করে বাম পা দিয়ে লিখে। শুধু লেখাপড়া নয়, হাত ছাড়াই নিজের প্রায় সব কাজ করতে পারে।

তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসান ভুইয়া জানান, ভ্যানচালক হবি মিয়া ও সখিনা বেগমের ঘরে ২০০২ সালে জন্ম নেয় রুবেল। রুবেল বড় হবার পর তিল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সে সময় থেকেই তার দুই পা নির্ভর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে তিল্লি প্রাথমিক পরীক্ষায় পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আমার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সনের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ২.৯০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

এ ব্যাপারে রুবেলের বাবা হবি মিয়া জানান, আমি পেশায় একজন রিক্সাচালক, রুবেল পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ঠিকমত বই কিনে দিতে পারিনি অভাবের সংসার থাকায়। রুবেল প্রচন্ড ইচ্চাশক্তি দিয়ে আজ এ পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে। তবে এখন ওর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছি। কলেজে কিভাবে ভর্তি করব আর পড়াব কিভাবে? এ ব্যাপারে রুবেল বলেন, আমার হাত নেই সেটা মনেই করি না। আমি নিজেকে প্রতিবন্ধী না, মানুষ মনে করি। আমার বন্ধু ও শিক্ষকরা সব সময় আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। আমি পড়াশোনা শেষ করে মানুষের মতো মানুষ ও সরকারী চাকরি করে দেশ ও মা-বাবার সেবা করতে চাই।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারাজানা সিদ্দিকী জানান, রুবেল পা দিয়ে লেখাপড়া করছে এমন সংবাদ দেখে এর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাশেদা ফেরদৌস নিজে ওর বাড়িতে গিয়ে অর্থ প্রদান করেন। অপ্রতিরোধ্য রুবেলকে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সকল সুযোগ সুবিধা দেবার আশ্বাস দিলেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা। -একে

প্রতিবন্ধী,পা দিয়ে লিখে,এসএসসি পাশ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close