• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মাদ্রাসা সুপারের নেতৃত্বে বসতঘর ভাঙচুর করে ভিটা দখল

প্রকাশ:  ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:০০
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজীপাড়া আল-আরাফাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা পার্শ্ববর্তী এক পরিবারের বসতঘর ভাঙচুর করে ভিটি দখল করা হয়েছে। মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে সুপারের নির্দেশে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে এ কর্মকাণ্ড- চালায়। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা এর সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা সুপারসহ শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা হাতে দা-কুড়াল ও লাঠি-সোটা নিয়ে মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী আবুল কাশেমের বসতঘর ভাঙচুর করছেন এবং ওই ভিটিতে নতুন করে ঘর নির্মাণের কাজ করছেন।

সম্পর্কিত খবর

    এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সালে আবুল কাশেমের ছেলে জয়নাল আবেদীন ‘বেগম মানছুরা দারুল উলুম স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে ৪০ শতক জমি দান করেন। ১২ বছর পর মাদ্রাসাটি অন্য জায়গায় স্থানান্তর হলে দান দলিলের শর্তানুযায়ী তার (জয়নাল আবদীনের) ছেলে আবুল কাশেম ওই জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু ওই মাদ্রাসার পাশে হাজীপাড়া আল-আরাফা দাখিল মাদ্রাসা নামে আরও একটি মাদ্রাসা থাকায় সেটির সুপার মাওলানা নুরুল আমিনের কু-নজর পড়ে ওই জমির উপর। মাদ্রাসা সুপার মাদ্রাসার নাম করে বিভিন্ন সময় ওই জমি দখল করার চেষ্টাও করে। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

    এরই মধ্যে গত সপ্তাহে মাদ্রাসা সুপারের পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসার জমি দখল ও শিক্ষার্থীদের মারধরের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ এনে কাশেম ও তার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় পুলিশ বুধবার রাতে কাশেমকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সুযোগ মাদ্রাসা সুপার বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাশেমের বসতঘর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের বের করে দিয়ে ভাঙচুর করে ভিটি দখল করেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিষ্ঠানের নাম করে যে তা-ব চালানো হয়েছে তা খুবই অমানবিক। আদালতে বিচারাধীন বিরোধপূর্ণ জমি দখলের জন্য একটি পরিবারকে এভাবে উচ্ছেদ করা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে তারা দাবি করে ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন। স্থানীয় চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার জানান, প্রতিষ্ঠানের নাম করে এভাবে জমি দখল করায় শিক্ষকতা পেশার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ রকম কাজ চলতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে।

    এদিকে, বেগম মানছুরা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা শিব্বির আহমেদ জানান, দু’টি মাদ্রাসা একই জায়গায় হওয়ায় ২০১২ সালে তাদের মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক সানা উল্যাহ নূরীর বাড়ি পাশে চরফলকন এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকে দলিলে উল্লেখিত শর্তানুযায়ী জমিদাতার ওয়ারিশরা ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। যে কারণে, হাজীপাড়া আল-আরাফা মাদ্রাসার নামে নতুন করে ওই জমি দখল করার আইনী কোনো ভিত্তি নেই।

    হাজীপাড়া আল-আরাফাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল আমিন দাবি করেন, বেগম মানছুরা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থানান্তর হওয়ার পর ওই জমি তাদের মাদ্রাসার নামে এফিডেভিটের মাধ্যমে দান করে দেওয়া হয়েছে। তাই মাদ্রাসার ওই জায়গা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে।

    কমলনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে জমি দখলের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close