• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

রাজশাহীর বিআরটিএ অফিস দালালদের অভয়ারণ্যে

প্রকাশ:  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:২৬
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহী বিআরটিএ অফিসে চাহিদা অনুযায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী না থাকার কারণে দালালের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।সরকারী এই অফিসটিকে ঘিরে রয়েছে দালালদের অবাধ বিচরণ। সবখানেই দালালরা নিজেদের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বিচরণ করছে।

আর বাইরে থেকে লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবেই স্বল্প জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিআরটিএ অফিস। কোন ব্যক্তি লাইসেন্সের জন্য গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলার আগেই দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। আর এই অফিসে দালাল ছাড়া কোন কিছুই হয়না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্পর্কিত খবর

    রাজশাহী বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী বিআরটিএতে ১৩ জন অনুমোদিত জনবল রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, দু’জন ইন্সপেক্টর, একজন মেকানিক্যাল এ্যাসিসটেন্স, একজন উচ্চমান সহকারী, একজন অফিস সহকারী এবং একজন এমএলএসএস ও অন্যান্য পদ।

    আগে রাজশাহীর সাথে আরো দুই জেলা থাকলেও বর্তমানে এখন অন্য কোন জেলা নেই। শুধু রাজশাহী জেলার কাজকর্ম হয়।তারপরও সেখানে দালালের দৌরাত্ম্য রয়েছে। রাজশাহী বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, অফিসে অনুমোদিত ১৩ জন জনবল রয়েছে।

    অস্থায়ী কোন কর্মচারী নেই। তারপরও সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ৮-১০ জন ব্যক্তি সেখানকার অস্থায়ী কর্মচারী পরিচয় দিয়ে কাজ করছে। তারা অফিসের কর্মচারীদের সাথে সখ্যতা রেখেই দালালি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এসব ভূয়া কর্মচারী পরিচয়দানকারীরা যেকোন সময় অফিসে ঢুকে কাজ করতে পারে। এতে তাদেরকে কোন বাধার মুখে পড়তে হয় না। কারণ এই অতিরিক্ত টাকার ভাগ তারাও পায়। বিআরটি’র সবখানেই দালালি কার্যক্রম চলে। দালাল ছাড়া কোন কাজই হয়না বলে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।

    যারা এসব কর্মকার্তা সাথে জড়িত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পিওন আলী মোহাম্মদ, ওলি, এনডিসি অফিসের পিওন লালন, নগরীর একটি ফার্নিচারের মালিক হেলাল, ড্রাইভার মোস্তফাসহ আরো অনেকে।

    এরমধ্যে আলী মোহাম্মদ বিআরএটি অফিসের পিওন হলেও তার দৌরাত্ম্য সবখানেই। অফিসের সব স্থানেই আলীর হাত রয়েছে। আলী যাওয়া মানেই সহজে সব কাজ হয়ে যাওয়া। তিনি সবসময় ডিডি ও এডি কাছাকাছি থাকায় সব কাজ করতে সুবিধা হয়। কারণ কোন ফাইল বা কাজ গেলেই সবাই মনে করে স্যারের কাজ। এ জন্য সেই কাজটি সবার আগে হয়ে যায়। তবে মানুষের কাজ করে যে টাকা আসে সেটা সবার পকেটেই যায় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে আলী মোহাম্মদ এসব অভিযোগ অস্বীকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যে। এসব কাজের সাথে জড়িত নয়। কাজের জন্য সব অফিসে যেতে হয়।

    এরমধ্যে দালাল হেলাল সবসময় নিজেকে বিআরটিএ’র কর্মচারী পরিচয় দেয়। অফিসের সবখানেই তার দৌরাত্ম্য রয়েছে। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন, প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন থেকে শুরু করে নম্বর প্লেট পর্যন্ত সবই করে এই হেলাল। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আড়াই হাজার টাকা খরচ হলেও হেলাল সেটির জন্য লাইসেন্স প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নেয়। এই টাকার ভাগ কর্মচারী থেকে সবাইকে দিতে হয়।

    আর সে কারণে টাকা দিয়ে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের পরীক্ষায় তেমন বেগ পেতে হয় না। তাদের বই কিনে পড়াশোনাও করতে হয় না। কারণ লিখিত পরীক্ষার সময় তারা কর্মচারীদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়। আবার সরাসরি মোটরসাইকেল চালাতে না পারলেও বা ভাইভা পরীক্ষায় না পারলেও নির্দিষ্ট সময়ে লাইসেন্স পেয়ে যায় তারা। আর যারা অফিসের কাউকেই না ধরে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। অনেকের বছরের পর বছর লেগে যায় লাইসেন্স পেতে।

    নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক লাইসেন্স প্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, আমি এক বছর আগে লাইসেন্স করতে দিয়ে এখনো পাইনি। আমাকে বারবার বলা হয় পরে পরে। এভাবে সময় ক্ষেপণ করা হয়। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার পরে দিয়ে অনেকেই লাইসেন্স পেয়ে গেছে।

    আলম নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমি গত ছয় মাস ধরে লাইসেন্সের জন্য ঘুরছি। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।রবিন নামের এক আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, এখানে শুধু টাকার খেলা। টাকা দিলে আটকানো হয়না। আর না দিলে ভুল ধরা হয়।

    এত গেলো মোটরসাইকেলের লাইসেন্স পাওয়ার কথা। হালকা বা ভারী যানবাহনের লাইসেন্স পেতে গেলে দালালকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

    এদিকে দালালদের অবাধ বিচরণ ও কর্মচারীর জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে রাজশাহী বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক ইঞ্জি. এ.এস.এম কামরুল হাসান বলেন, এখানে কোন দালাল নেই। কর্মচারীদের চেনার জন্য গেটেই সকল কর্মচারীদের ছবিসহ পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কর্মচারীরা পরিচয় পত্র ঝুলিয়ে থাকে। সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে। সেই সাথে আলাদা আলাদা বুথ করা হয়েছে।

    মাইকের মাধ্যমে কিছুক্ষণ পর পর সতর্কবাণী দেওয়া হয়। তারপরও কেউ যদি দালালের পাল্লায় পড়ে তাহলে কি করার আছে। কোন কর্মচারী দালালের সাথে যুক্ত এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাইরে দালাল কি করলো সেটি দেখার দায়িত্ব আমাদের নেই। তবে ভেতরে দালালি কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close