কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ঝুলছে তালা সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ
চুয়াডাঙ্গা জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের লাগাতার কর্মবিরতি ও ওষুধের অভাবে তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে। ২০ জানুয়ারি থেকে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলায় ১১৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এতে ১০৭ জন সিএইচসিপি কর্মরত আছে। এ জেলায় ১১ ক্লিনিকে সিএইচসিপি’র পদ খালি রয়েছে। অন্যদিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের পাশাপাশি প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী আছেন। তাদের চাকরি স্থায়ী।
সম্পর্কিত খবর
আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে ২০০০ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। এখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয় এখানে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ফলে চালু হওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে ফের চালু করা হয়। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। ২০১৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে অপারেশনাল প্রকল্পের অধীন আরো দুই বছর চলে। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এদিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার চাকুরি দীর্ঘ ৭ বছরেও জাতীয়করণ হয়নি। তাই চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পত্র ইস্যু করে জানানো হয়, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সিএইচসিপিদের চাকুরী স্থায়ী করা হবে। এ মর্মে প্রত্যেক সিএইচসিপিদের সার্ভিস বুক ও এসিআর খোলার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর আমরা সার্ভিস বুক ও এসিআর খুলি।
আন্দোলনরত চুয়াডাঙ্গা জেলার সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান জানান, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ২০ হতে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত উপজেলা ও জেলায় এবং ২৭ হতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্বাবের সামনে শান্তিপুর্ণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করি। কিন্তু সরকার আমাদের দাবি বিবেচনা না করায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করছি। আমাদের এক দফা যৌক্তিক দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না এবং ততোদিন ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
দামুড়হুদা উপজেলার নাস্তিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার শাহিনুজ্জামান পলাশ জানান, ২০১৪ সালে আমরা জানতাম আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, চাকুরীও শেষ। এ জন্য আমরা অন্য চাকরী খুঁজতে থাকি। কিন্তু এরপর মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা লেগে আছি। আজ ৭ বছর পরে এসে মনে হচ্ছে সারাদেশের ১৩ হাজার ৮’শ ৫১ জন সিএইচসিপিদের নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
জীবননগর উপজেলার কুলতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের এফডব্লিএ তাহমিনা পারভীন বলেন, সিএইচসিপিদের আন্দোলনের কারণে ২০ জানুয়ারি হতে ক্লিনিকে ওষুধ বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সিএচসিপিদের অনশন কর্মসুচী চলার কারণে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্য সহকারীদের দিয়ে সপ্তাহে ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিক চালানো হচ্ছে।