ভোলায় নির্মিত হচ্ছে ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার
উপকূলীয় জেলা ভোলার সাত উপজেলায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ৯৬ টি সাইক্লোন সেল্টার।বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘বহুমুখী দূর্যোগ আশ্রয়ন প্রকল্প’র মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর অধীনে এ সব স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মান করা হবে।
২ মাসের মধ্যে এসব কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বলে জানিয়েছে ভোলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোর নিচতলা ফাঁকা রেখে তৃতীয় তলা পর্যন্ত করা হবে।দূর্যোগকালীন সময়ে প্রতিটি সাইক্লোন সেল্টারে ২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এতে করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রায় ২ লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
সম্পর্কিত খবর
এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন জানান, ভোলা উপকুলীয় জেলা হওয়াতে এখানে সাইক্লোন সেল্টার অতি গুরুত্ব বহন করে। দূর্যোগের সময় এসব আশ্রয় কেন্দ্রই হয়ে উঠে সাধারন মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল। প্রতিটি কেন্দ্র বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার হিসাবে ব্যবহার করা হবে। ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মান সকল পক্রিয়া সম্পন্ন করে চূড়ান্তভাবে টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি সাইক্লোন সেল্টারের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এছাড়াও জেলায় একই প্রকল্পের মাধ্যমে ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ৪২টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে। এসব সাইক্লোন সেল্টার নির্মান সম্পন্ন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দূর্যোগের আতংক অনেটাই কমে আসবে বলে মনে করেন এলজিইডি’র এ প্রধান কর্মকর্তা।
এলজিইডি সূত্র জানায়, অত্যাধুনিক ডিজাইনের এসব সাইক্লোন সেল্টারে সরাসরি অসুস্থ্য রোগীকে র্যামের মাধ্যমে দোতালায় উঠানো, গরু, ছাগল রাখা, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন সেল্টারে জলোচ্ছাসের সময় পানি সহজে সরে যাওয়ার জন্য নিচতলা ফাঁকা রাখা হয়েছে। আর দুই তলা ও তিন তলায় অন্যন্য সময় যখন ঘুর্নিঝড় থাকবেনা তখন স্কুল হিসাবে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া দূর্যোগের সময় এখানে মানুষ, গবাদী প্রানী, প্রয়োজনীয় গুরুত্বপুর্ন জিনিস-পত্রসহ অবস্থান করতে পারবেন। সরকারের নতুন নতুন এসব আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনে দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরিতেও সহায়তা করবে।
জেলা ঘুর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র উপপরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, নতুন করে ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মান উপকূলবাসীর জন্য একটি আনন্দের খবর। জেলায় বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে ৪০০ সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। দূর্যোগ মুহুর্তে এসব কেন্দ্রে চার লাখেরও বেশি মানুষ অবস্থান করতে পারে। এসব সেল্টারের অবস্থাও বেশ ভালো। সরকারের নতুন করে ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মান দিপাঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক কাজ করবে। তবে আমাদের চরাঞ্চলগুলোতে আরো সাইক্লোন সেল্টার নির্মান প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
জেলার মোট ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টারের মধ্যে সদর উপজেলায় নির্মান হবে ১৭টি। এর মধ্যে শীবপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ৪৯ নং দক্ষিন রতনপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে একটি স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মান করা হবে। আর এই খবরে উচ্ছাসিত স্থানীয় জনসাধারন। তারা বলছেন, এখানকার মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করতে হয়। সাইক্লেন সেল্টার হলে ঝড়ের সময় অন্যতম প্রধান নিরাপদ স্থান। তাই এখানে নতুন আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানকে সরকারের একটি সময়উপযোগী স্বিাদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, এই এলাকায় একটি সাইক্লোন সেল্টার নির্মান স্থানীয়দের প্রানের দাবি ছিলো। সরকার সে দাবি পুরন করায় আমরা অনন্দিত। বিগত দিনে এখানে কোন আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিলনা। বিশেষ করে বর্ষার সময় স্কুলের নিচের অংশ পানিতে ডুবে থাকত। তাই এখন সাইক্লোন সেল্টার নির্মান হলে স্থানীয়রা দুরবস্থার হাত থেকে রক্ষা পাবে ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধা হবে।