• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নির্যাতনের শিকার এহসানের উন্নত চিকিৎসা দরকার

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:২২
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী এহসান রফিককে চোখ ও মাথার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নায় নিয়ে যেতে হবে। ইতিমধ্যে তার পরিবার জরুরী ভাবে পাসপোর্ট তৈরি জন্য আবেদন করেছেন। আলোতে তাকাতে পারছে না এহসান। মাথাও প্রচন্ড ব্যাথা। অন্ধকার ঘরে শুয়েই দিন রাত কাটছে এহসানের।৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আটকে রেখে নির্যাতন করে এহসান রফিককে।

তার অপরাধ ছিলো নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়া।পনের দিন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এহসানের চোখ ও মাথার চিকিৎসা করানো হলেও তেমন কোন উন্নতি হয়নি।

সম্পর্কিত খবর

    শনিবার সকালে এহসান রফিকের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপর গ্রামে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। ডাক্তার অবশ্যই কম কথা বলতে বলেছেন। এহসানের বাবা শহীদ নুর আলী কলেজের প্রভাষক ও বৈশাখী টেলিভিশনের ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম মন্টু জানান, তার দুই ছেলে। বড় ছেলে এহসান আর ছোট ছেলে এহতেশান। বড় ছেলে এহসান অত্যান্ত মেধাবী। আর্মি মেডিকেল কলেজে চান্স পেলেও ছেলের স্বপ্ন পুরণ করতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়।

    ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসএম হলে আটকে রেখে শারিরিক ভাবে নির্যাতন করে। তাকে রড দিয়ে ব্যাপক মারপিট করা হয় এবং আটকে রাখে। পর এহসান কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল এ ভর্তি করা হয়। তিনি বলেন, ১১ দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে দেখানো হয়েছে।

    এহসানের চোখের কর্ণিয়ায় আঘাত ও লোহার রড দিয়ে পেঠানোর কারনে মাথায় আঘাত পেয়েছে। চোখে ঠিক মতো দেখতে পারছে না। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হবে। ইতিমধ্যে এহসানের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে কোন আর্থিক সহযোগিতা করেনি। নিজের যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই দিয়ে চেষ্টা করছি। তবে এহসানের চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে যারা এভাবে নির্যাতন করেছে তাদের শাস্তি কামনা করছি।

    তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড ইনভারমেন্ট ফ্যাকাল্টির ডিন ড.এএসএম মকসুদ কামাল জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এহসান রফিকের চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবে।

    উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ এসএম হল শাখার সহসম্পাদক ওমর ফারুক প্রায় ৩ মাস আগে এহসানের কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেন। এহসান বার বার ক্যালকুলেটর ফেরত চাইলেও ফেরত দেয়নি। সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে এহসান ওমর ফারুকের কাছে ক্যালকুলেটর চাইলে তাকে মারপিট করা হয়।

    এর পর ওমর ফারুক এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফের মাধ্যমে টিভি রুমে ডেকে নেন।সেই সময় ছাত্রলীগ এসএম হল শাখার সহসভাপতি তানিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিয়াজ শোভন ও আবু তাহের তাকে মারপিট করে এবং জোর করে শিবির স্বীকারোক্তির চেষ্টা করে। ছাত্রলীগের এসএম হল শাখার সহসম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপ সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এহসানকে রড ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করে।

    এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এর পর তাকে রাত সাড়ে ৩ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার হলে নিয়ে আসে। এর পর এসএম হল শাখার সভাপতি তাহসান আহমেদের কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থা আরো খারাপ হলে আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় তারা। আবার সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে একটি কক্ষে আটকে রাখে। ৭ ফেব্রুয়ারি বিকালে এহসান সেখান থেকে পালিয়ে আসে।

    এর পর এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমান পায়।

    ৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সম্পাদক জাকির হোসাইন এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের উপ প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, সহ সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিনকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী এহসানের নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চোখে কাপড় বেধে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে।বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে তাকে নিয়ে নিউজ ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close