বিপ্লবী রাজিয়া খাতুন জামালপুরের সন্তান
বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেত্রী বিপ্লবী রাজিয়া খাতুন জামালপুরের উর্বর মাটির কৃতী সন্তান।সংগ্রামী নেত্রী রাজিয়া খাতুনের জন্ম জামালপুর সদর মেষ্টা ইউনিয়নের পাঁচগাছি গ্রামে তার মায়ের বাড়িতে। তাঁর পিতা নাসির উদ্দিন সরকার বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তিনি অবিভক্ত ভারতবর্ষের অল বেঙ্গল কংগ্রেস কমিটির সদস্য এবং জামালপুর মহকুমা কংগ্রেসের তৎকালীন সম্পাদক ছিলেন।
রাজিয়া খাতুন নিজ বাড়ী জামালপুরের কাপাসহাটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বেশীদূর অগ্রসর না হতে পারলেও পিতার ইচ্ছানুযায়ী গৃহে লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং পিতার অনুপ্রেরণায়ই তখন থেকেই রাজনীতি ও সমাজসেবার দিকে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পিতার যাবতীয় কর্মকান্ডে সহায়তা করতে থাকেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে কংগ্রেস পার্টির সদস্য হন। ১৪ বছর বয়সে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।বেশ কিছুকাল তিনি জামালপুর মহকুমা কংগ্রেসের যুগ্ন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় তিনি সুরেন্দ্র মোহন ঘোষের গুপ্ত বিপ্লবী দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।তার পিতা নাসির উদ্দিন সরকার ১৯৩৪ সালে জামালপুর গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।প্রতিষ্ঠা কালীন সময় থেকে রাজিয়া খাতুন মেয়েদের চরকায় সূঁতা কাটা, খাদি কাপড় বুনন, হস্ত শিল্প ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য শিক্ষা দিতেন। তিনি ১৯৩৯ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে যোগ দেন।
সম্পর্কিত খবর
১৯৪৮ সালে মুসলিম লীগের গুন্ডা বাহিনী তার পিতা নাসির উদ্দিন সরকারকে অমানুষিক নির্যাতন করে মৃত মনে করে মেলান্দহের মালঞ্চ এলাকায় এক জঙ্গলে ফেলে দেয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মাত্র এক বছরের মধ্যেই মুসলিম লীগের গুন্ডাদের বারংবার হামলা ও সে সময় লাল পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ ছিল।
তখন তিনি বলেছিলেন যে, আমার কোনো পিছুটান নেই, বিয়ে করিনি, আমি তুলবো পতাকা। এভাবেই জামালপুর শহরে লাল পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। পরের দিন ঘোড়ার গাড়ি সাজিয়ে তাঁকে নিয়ে সমস্ত জামালপুর শহরে মিছিল করেন। জনগণ তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে।সে সময়ে তার মানসিক প্রস্তুতি ছিল গ্রেফতার হওয়ার জন্য। তিনি সেদিন বিশাল একটি সমাবেশে বক্তৃতা দেন।
জামালপুর সদর উপজেলার হাজিপুর এলাকায় নারী প্রগতি সংঘ নামে সমিতি গঠন করে ছিলেন। সেখানে লাইব্রেরী ছিল।মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অর্থ তুলে মুক্তিযোদ্ধা দের সাহায্য করেছেন,আশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন ন্যাপ,ঐক্য ন্যাপ এবং গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরূপে স্বদেশের রাজনৈতিক অঙ্গেণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রাজিয়া খাতুন পিতার মৃত্যুর পর ময়মনসিংহ শহরে চলে আসেন। এখানে এসে প্রথম দিকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)এ যোগদান করে কাজ করতে থাকেন।কমরেড মনি সিংহ, মন্মথনাথ দে, জ্যোতিষ বসু, অজয় রায় প্রমূখ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদের সংস্পর্শে এসে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। তার অনুসারী প্রয়াত রাজনীতীবিদ ক্ষীতিশ তালুকদার জামালপুরে ছাত্র পরিষদ গড়ে তুলেন।
চিরকুমারী রাজিয়া খাতুন বার্ধক্যে উপনীত হয়েও নিজ কাজে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। রাজিয়া খাতুনের প্রচেষ্টায় ময়মনসিংহে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।তিনি দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যবরন করেন।