• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

শ্রমিক থেকে শতাব্দীর সেরা আব্বাস

প্রকাশ:  ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৪৭
স্পোর্টস ডেস্ক

মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারতের বিপক্ষে টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে একটা রেকর্ড গড়েছিলেন ক্যারিবীয় পেসার এবং অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। এক পঞ্জিকা বর্ষে মাত্র ১১.৮৭ গড়ে ৩৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। যা গত একশত বছরের টেস্ট ইতিহাসে সেরা গড়।

আবুধাবিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেট নিয়ে প্রায় একাই শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপকে গুড়িয়ে দিয়ে শতাব্দী সেরা এক রেকর্ডও গড়েছেন মোহাম্মদ আব্বাস।

২৮ বছর বয়সী আব্বাসের দাপুটে বোলিংয়েই অজিদের ৩৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে পাকিস্তান, যা রানের ব্যবধানে দলটির সবচেয়ে বড় জয়। আব্বাসের এমন অসাধারণ বোলিংকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।

দ্বিতীয় টেস্টের ম্যাচ সেরা হওয়ার পাশাপাশি সিরিজ সেরাও হয়েছেন আব্বাস। এর চেয়ে ভালো একজন ক্রিকেটারের জন্য কি হতে পারে? শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে ৫ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন আব্বাস। দুই টেস্ট মিলিয়ে তার উইকেট সংখ্যা ১৭।

১০.৫৮ গড়ে ১৭ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের হয়ে এক সিরিজে কমপক্ষে ১৫ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে সেরা গড়ের মালিক এখন আব্বাস। আগের সেরা ছিলেন সাবেক পেসার মোহাম্মদ আসিফ। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০.৭৬ গড় ছিল তার।

শুধু তাই না, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আব্বাসের এই গড় গত ১০০ বছরের মধ্যে সেরা। তার ক্যারিয়ার গড় ১৫.৬৫, যা কমপক্ষে ৫০ উইকেট পাওয়া ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সেরা আর সবমিলিয়ে চতুর্থ সেরা।

আব্বাসের পর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাবেক বাঁহাতি স্পিনার বার্ট আয়রনমঙ্গারের গড় ১৪ টেস্টে ১৭.৯৭। এরপরের স্থানে থাকা ইংলিশ কিংবদন্তি পেসার ফ্রাঙ্ক টাইসনের বোলিং গড় ১৭ টেস্টে ১৮.৫৬। আব্বাস সবেমাত্র ১০ ম্যাচ খেলেছেন। এখনও সামনে অনেকটা পথ পড়ে আছে। হয়তো বোলিং গড়ে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু শুরুটা তো স্বপ্নের মতোই হয়েছে তার।

এই বছরের শুরুতে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে আব্বাস বলেন, ‘ক্রিকেটের আগে আমার জীবন ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু সেই প্রতিকূল সময় আমার ক্রিকেটার হতে সাহায্য করেছে। কারণ, এরপর আমি যখন ক্রিকেটে আসি তখন বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করার মতো পরিণত হয়েই এসেছি।’

‘আমি যখন কোর্টে কাজ করতাম তখন আমি জেলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য নির্বাচিত হই। তারা আমাকে চাকরি অথবা ক্রিকেট যেকোনো একটা বেছে নিতে বলেন। আমি সেই রাতের কথা ভুলতে পারিনা। কিন্তু আমার এক বন্ধু, যে আবার আইনজীবীও, সেই আমাকে দুটিই চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।’

সেই থেকে আব্বাসের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলতে শুরু করে। ‘দলকে তখন আমার ও বোর্ডের সচিবের ছেলের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হয় এবং সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয় টসের মাধ্যমে।’ সাক্ষাৎকারে জানান আব্বাস।

‘টস আমার পক্ষে যায় এবং আমি ৫ উইকেট পাই। এরপর আমি প্রদেশের একাডেমিতে সুযোগ পাই এবং তারপর থেকে আর থামিনি।’

যিনি এত কাণ্ড ঘটিয়েছেন তার উঠে আসার পথটা কিন্তু মোটেও মসৃণ ছিল না। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে জাতীয় দলে আসতে হয়েছে তাকে। মায়াপুরীর গল্প লিখেই উঠে এসেছেন আব্বাস। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝাটকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেই ছোট্টবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার টান ছিল অসীম। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের ছেলে হওয়ায় কৈশোরেই নেমে পড়তে হয় কাজে। ঢালাইকর হিসেবে কাজ করেন চামড়ার কারখানায়।

এখানেই শেষ নয়, এরপর ভূমি অধিদপ্তরের অধীনে আদালতে জমি নিবন্ধন কার্যালয়ে অফিস বয়'র কাজ করেন আব্বাস। এ কাজে থাকতে নিজ জেলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান তিনি। সেই টুর্নামেন্ট চলাকালীন আরেকটি বাধার সম্মুখীন হন সুইং মাস্টার। ম্যাচে খেলার জন্য দলকে বেছে নিতে হতো সচিবের ছেলে অথবা তাকে। শেষ পর্যন্ত টস করে সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়। তাতে জিতে যান ১৯ বছরের বিস্ময়। সেই ম্যাচে ৫ উইকেট নেন পাঞ্জাবের এ তরুণ। গোটা টুর্নামেন্টে বিস্ময় উপহার দিয়ে সুযোগ পেয়ে যান আঞ্চলিক দলে। আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।

ক্রিকেট তারকা.,আব্বাস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close