• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ড. কামালকে নিয়ে ট্রল করছেন, ইতিহাস জানা নেই নিশ্চয়ই!

প্রকাশ:  ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০১:২৯ | আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৩৭
জুলফিকার তাজুল

ফেইসবুকে ঢুকতেই ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে ট্রল করা অনেকের নিউজ ফিড আমাকে ভীষনভাবে মর্মাহত করেছে, বিশেষ করে আমি কয়েকজন ছাত্র যারা ভাল বিষয়ে ভাল বিশ্ববিদ‍্যালয়ে পড়ছে তাদেরকেও যখন দেখলাম তখন কেন যেন মনে হলো কিছু বলা দরকার।

এই লেখাটি যারা ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে ট্রল করছেন তাদের জন‍্য।

সম্পর্কিত খবর

    জ্ঞানীদের আমরা বাঙালিরা কদর করতে জানিনা, মুর্খ ধান্ধাবাজ রাজনৈতিক ব‍্যাক্তিরা যা শেখায় আমরাও তাই অনুসরণ করি, ধিক তোমাদের যারা না বুঝে রাজনৈতিক আবেশে গাঁ ভাসিয়ে দিচ্ছ। এখানে কিছু তথ‍্য তার ব‍্যপারে দিচ্ছি যা কাজে আসতে পারে তাদের জন‍্য যারা লেখাপড়া করছ।

    ড. কামাল হোসেনের পিতা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইলেকট্রোথেরাপি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ডা. আহমদ হোসেন ও মা হোসনে আরা বেগম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বরিশালের শায়েস্তাবাদের ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ি। তিনি বর্তমান নটরডেম থেকে ১৬ বছর বয়সে স্কলারশিপ নিয়ে, অক্সফোর্ড থেকে আইনে অনার্স ও বিসিএল করেন কুইন্সে। অক্সফোর্ডের ইতিহাসের বিরল ধর্মঘট পালনকালে কামাল হোসেন ছিলেন মজলিশের সভাপতি। সুয়েজ যুদ্ধের প্রতিবাদে ছাত্ররা ধর্মঘটে যান। ড. কামাল এই ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন। আন্তর্জাতিক আইনে ডক্টরেট করেন নাফিল্ডে।

    ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন তাঁর খালাতো ভাইয়ের বন্ধু। সেই সুবাদে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার সুযোগ ঘটে তাঁর। তিনি জেল খেটেছেন দুইবার। একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর সাথে পরে ১৯৮৩ সালে। তিরাশিতে চোখ বেঁধে তাঁকে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের সঙ্গে আটক করা হয়।

    বঙ্গবন্ধু তাঁর বিচার চলাকালে কামাল হোসেনকেই তাঁর আইনজীবী নিয়োগের কথা বলেছিলেন, তিনি তখনো জানতেন না কামাল হোসেনও তার সাথেই বন্দি। এ জন‍্যই বিচারকরা হেসেছিলেন।

    সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে ড. কামাল হোসেন ইংরেজিতে সংবিধানের খসড়া লেখেন। ওনি বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা।

    জ্বালানি খাতে বিশ্বব্যাপী ড. কামাল হোসেন একজন সুপরিচিত সালিশ নিষ্পত্তিকারী। মালয়েশিয়া বনাম সিঙ্গাপুর সাগর ভরাট মামলার সফল সমঝোতায় তিনি ছিলেন অন্যতম সালিশ নিষ্পত্তিকারী। জার্মান তেল কোম্পানির সঙ্গে বিরোধে কাতারকে করেন বিজয়ী। গায়ানা বনাম সুরিনাম সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত যে বিরোধ, তার অন্যতম বিচারক ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে কামাল হোসেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সুইডেন, ডেনমার্ক, চীন, মোজাম্বিক, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনের টেলিযোগাযোগ ও জ্বালানি তেল-সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন প্রণয়নে সহায়তা দেন। জাতিসংঘের প্রতিনিধি স্পেশাল রেপোর্টিয়ার হিসেবে ১৯৯৮ সালে পাঁচ বছর কাজ করেছেন আফগানিস্তানে। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। মানবাধিকার নিয়েও উচ্চকিত ড. কামাল হোসেন।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের অক্সফোর্ডের অলসোলস কলেজ, নাফিল কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ব্রিটিশ বারের সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত কামাল হোসেন কাজ করেছেন বহুজাতিক ’ল ফার্ম অরডিগনামে।

    কামাল হোসেনের জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তিনিসহ বাংলাদেশের অনেকেই প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। সে-সময় তিনি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

    তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস‍্যা সমাধান করার জন‍্য কাজ করছেন দেশকে ভালবাসেন বলে। তাকে নিয়ে ট্রল করছি আমরা জঘন‍্য রাজনৈতিক অন্ধ মুর্খরা।

    (ফেসবুক স্ট্যাটাস)

    লেখক: অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ব্লগার

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close