তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্স: আইনে কী আছে?
প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কারণে বিএনপি এবং দলটির নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। খবর: বিবিসি বাংলা।
তাদের অভিযোগ, দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসাবে একজন ব্যক্তির নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া বেআইনি। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে অভিযোগও জানিয়ে এসেছে। তবে বিএনপি বলছে, তাদের মনোনয়ন বোর্ডে কে থাকবেন, সেটা একান্তই তাদের বিষয়- এ নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
সম্পর্কিত খবর
সোমবারও (১৯ নভেম্বর) সাক্ষাৎকার নেয়ার প্রক্রিয়ায় লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে তারেক রহমান যোগ দেন বলে জানা গেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অথবা বাংলাদেশের আইন এ বিষয়ে কি বলছে?
নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। দুই-একদিনের মধ্যে কমিশনের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা বসার পর আইনে কি আছে, বা আমাদের করণীয় কি আছে, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখবো।
এটাকে একটি নতুন বিষয় বলেও তিনি মনে করছেন। এটা কি বিচারিক বিষয়, না-কি নির্বাচন কমিশন এটি দেখবে, তাও কমিশনকে খতিয়ে দেখতে হবে বলে জানান রফিকুল ইসলাম।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবারই প্রথম। এই বোর্ডে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরও কয়েকজন সদস্য। রোববার থেকে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর তার ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতির দুই মামলায় এবং ২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজার রায় মাথায় নিয়ে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তিনি পলাতক- ফলে পলাতক একজন ব্যক্তি প্রার্থী বাছাইয়ে অংশ নিচ্ছেন, এখানেই তাদের আপত্তি।
তবে এখানে কমিশনের করণীয় কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ। তিনি বলেন, সংবিধানে আছে নৈতিক স্খলনের কারণে কারও যদি দুই বছরের বেশি সাজা হয়, তাহলে সাজা শেষ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত বা পলাতক ব্যক্তি স্কাইপ ব্যবহার বা অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি যোগাযোগ করে, সেক্ষেত্রে ওই বিষয়ক কোনও আইন নির্বাচন কমিশনে নেই, দেশেও কোন আইন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়নি।
‘কাজেই ইচ্ছা করলেও নির্বাচন কমিশন কিছু একটা করতে পারবে না। কারণ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে নির্বাচনে প্রার্থিতা ঠিক করা যাবে না, এমন কোন আইন এখানে নেই।’
শাহনেওয়াজ আরও বলেন, আসলে এভাবে এর আগে কেউ চিন্তা করেনি। এই প্রযুক্তিগুলো নতুন এসেছে। সুতরাং এখন হয়তো এগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।
আচরণবিধির ভঙ্গের মধ্যে কি এটা পড়ে?
বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে ৯১ই ধারায় বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশে কিছু বলা না হলেও, যদি কমিশন এমন কোন তথ্য পায় বা লিখিত অভিযোগ পায় যেখানে কোন প্রার্থী বা এজেন্ট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বেআইনি কর্মকাণ্ড বা আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছে, তাহলে কমিশন সেটি তদন্ত করার আদেশ দিতে পারবে। সেখানে অভিযুক্তের বক্তব্য শুনতে হবে এবং অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
কিন্তু তারেক রহমান এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। সুতরাং তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই, বলেন শাহনেওয়াজ।
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও কিন্তু ভোটার হয়। সুতরাং দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে কিছু করা যাবে না, নির্বাচনী কোন আইনে এরকম বিষয় নেই। নির্বাচন কমিশন বিষয়টা দেখতে পারে, কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া খুব কঠিন হবে।
অন্য আইন কী বলছে?
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১০৭ থেকে ১২০ ধারায় অপরাধে সহযোগিতা করার অভিযোগে শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু স্কাইপ বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাক্ষাৎকার গ্রহণে সহযোগিতা বা অংশ নেয়া কি অপরাধে সহযোগিতার মধ্যে পড়বে?
বাংলাদেশের হাইকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সেজন্য আগে দেখতে হবে সেখানে কোন অপরাধ হচ্ছে কি-না, সেই অপরাধে সহযোগিতা করা হচ্ছে কি-না। স্কাইপ ব্যবহার করে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার বিষয়টিকে অপরাধ বর্ণনা করে, আমার জানা মতে, বাংলাদেশে এমন কোন আইন নেই।
এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় বলেই তিনি মনে করেন।
২০১৪ সালে একটি রিট আবেদনের জবাবে বাংলাদেশের হাইকোর্ট আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোন বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
হাইকোর্টের আরেকজন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলছেন, কারও সাথে কথোপকথন বেআইনি বা নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশে কোন আইন নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন যে বাক স্বাধীনতার বিষয়টি বাংলাদেশের সংবিধানেই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
/অ-ভি