• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

লাভজনক সরকারি পদ নিয়ে বিতর্ক, নৌকার প্রার্থী অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদক কৌঁশলী

প্রকাশ:  ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:১৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারে লাভজনক পদে থেকে কেউ ভোটে প্রার্থী হতে পারেন না। দেশজুড়ে নির্বাচনী ঢোল বেজে ওঠার পর এবার নতুন করে প্রশ্ন ওঠেছে, কোনটি লাভজনক পদ আর কোনটি লাভজনক পদ নয়?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢোল বেজে ওঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে ফরমও বিক্রি করেছে। নির্বাচনে অংশ নিতে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের জন্য ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্র কিনেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷ ঢাকা-১৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল৷ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত দু'জন কর্মকর্তাও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন৷ সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন৷

সম্পর্কিত খবর

    সরকারি কর্মকর্তাদের পদ যে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ, তা স্পষ্ট৷ এ কারণে আরপিওতে বলা আছে, সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷ এবার তা সংশোধন করে ৫ বছর করার প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি৷

    সংবিধানের ৬৬ (চ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন৷আর এই অনুচ্ছেদেই আবার বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না৷

    এমপিদের পদ লাভজনক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ সংবিধানে এ ব্যাপারে কিছু বলা নেই৷ এমপিরা যেহেতু বেতন নেন না, তাঁরা ‘সম্মানি' নেন তাই তাঁদের পদও লাভনক নয় বলে সিদ্ধান্ত আছে৷

    এখন প্রশ্ন হলো, অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের কৌঁসুলির পদ লাভজনক কিনা? তাঁরা ওই পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা? বর্তমান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি ছিলেন৷ তিনি তাঁর ওই পদে থেকেই নির্বাচন করেছেন৷ আইন কোনো বাধা হয়নি৷

    সংবিধানে লাভজনক পদের ব্যাখ্যা নেই৷ তা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-এর ১২ ধারায়৷ সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ারসম্বলিত কোম্পানির চাকরি বা পদকে ‘লাভজনক পদ’ বলা হয়েছে৷

    সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মচারী'র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেতনাদিযুক্ত পদে অধিষ্ঠিত বা কর্মরত ব্যক্তি সরকারী কর্মচারী৷ প্রজাতন্ত্রের কর্ম মানে হলো: বাংলাদেশ সরকারের সামরিক বা বেসামরিক প্রকৃতির কোনো কর্ম, চাকুরি বা পদ, কিংবা আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম হিসেবে ঘোষিত হতে পারে এরূপ অন্য কোনো কর্ম৷

    অন্যদিকে ২০০১ সালে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, যে পদে নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে, সে পদ লাভজনক পদ৷

    আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী মাহবুবে আলম বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ কোনো লাভজনক পদ নয়৷ এটা সাংবিধানিক পদ৷ এই পদে থেকে নির্বাচনে কোনো বাধা নেই৷ আর আমি রাষ্ট্র থেকে যে সুবিধা পাই, তা বেতন নয়, সম্মানি৷

    অন্যদিকে দুদকের বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন,‘আমি দুদকে কোনো চাকরি করি না৷ এটা চুক্তিভিত্তিক৷ আমি অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক সম্মানি পাই৷’

    তিনি আরো বলেন,অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচন করতে পারলে আমার নির্বাচনে কেন বাধা থাকবে৷ আর আইনমন্ত্রীও তো বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি থাকা অবস্থায় নির্বাচন করেছেন৷রাষ্ট্রের লাভজনক পদ ও নির্বাচনের অযোগ্যতা, এ বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয় সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াৎ হোসেন৷ তিনি বলেন, লাভজনক পদের ব্যাখ্যা সংবিধানে নেই৷ তবে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের লাভজনক পদ বলতে সরকারি চাকরি বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে, প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত কোনো পদকে বুঝায়৷ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ আরো কিছু পদ লাভজনক হলেও সংবিধানে ওই পদগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে বলা আছে যে, তা লাভজনক বলে বিবেচিত হবে না৷ এমপিদের পদ লাভজনক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ কিন্তু এমপিরা যেহেতেু বেতন নেন না, ভাতা নেন, তাই তাঁদের পদ লাভজনক নয় বলে সিদ্ধান্ত আছে৷ তাঁরা সরকারি অফিস, গাড়ি বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তাও নেন না৷ তবে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচিত পদ লাভজনক৷ কারণ, তাঁরা প্রশাসনিক কাজে আছেন, বেতন নেন, সরকারি অফিস, গাড়ি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নেন৷

    তিনি বলেন,অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ লাভজনক নয়৷ এটা সাংবিধানিক পদ৷ আর সাবেক নির্বাচন কমিশনারেরও নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই৷ কারণ, আইন হলো তিনি পুনর্বার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারবেন না৷ তিনিও সাংবিধানিক পদে ছিলেন৷

    সূত্র: ডয়চে ভেলে

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close