• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘ধন্যবাদ দেই পুলিশকে, যে তারা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেনি’

প্রকাশ:  ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৫৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

রাজধানীতে গভীর রাতে সড়কে তল্লাশির নামে এক তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় এবার পুলিশের আচরণ নিয়ে মন্তব্য করলেন লেখক তসলিমা নাসরিন।

তিনি বলেন, ‘আমি বরং ধন্যবাদ দিই পুলিশকে যে তারা ল্যাং মেরে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথাও ধর্ষণ করে মেরে ফেলে রাখেনি। পারতো তো।’

বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১টার দিকে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এই কথা বলেন তসলিমা নাসরিন।

গত ২২ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টার দিকে রামপুরা এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন পুলিশের একাধিক সদস্য। ওই তরুণী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও খারাপ মন্তব্য করেন পুলিশ সদস্যরা। ওই তরুণীর ব্যাগ তল্লাশির কথা বলে তার অটোরিকশা থামিয়েছিল পুলিশ। তবে তরুণী একাধিকবার তার ব্যাগ তল্লাশি করতে বললেও তা না করেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় উপস্থিত পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিএমও) চার পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো...

‘ঢাকা শহরে রাত আড়াইটায় এক মেয়ে অটোয় করে কোথাও যাচ্ছিল, পুলিশ অটোটিকে থামিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছে, ওই কথাগুলো নিশ্চিতই চূড়ান্ত অপমানজনক। কথোপকথনের ভিডিওটি পুলিশই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। ওটি দেখে মানুষ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। পুলিশের আচরণ দেখে ভীষণ ক্ষুব্ধ সবাই। আমার কাছে কিন্তু পুলিশের আচরণ মোটেও অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। পুলিশ যে সব প্রশ্ন করেছে, মেয়েটিকে একই প্রশ্ন তার বাবা মা আত্মীয় স্বজন, পড়শি, কলিগ, বন্ধু-বান্ধবী, চেনা অচেনা সবাই করতো। পুলিশ এই সমাজেরই মানুষ। সমাজে মেয়েদের মানুষ যে চোখে দেখে, পুলিশও সেই চোখে দেখে। সমাজের পুরুষেরা মেয়েদের যৌন হেনস্থা করে, পুলিশও করে।

সমাজের পুরুষেরা মেয়েদের ধর্ষণ করে, খুন করে, পুলিশও করে। আর সব লোক যে প্রশ্ন করতো, সে রাতে পুলিশ সেই প্রশ্নই করেছে, এত রাতে কেন বাড়ির বাইরে! কোত্থেকে ফিরছে মেয়ে,হোটেল থেকে নাকি! মেয়েটা নিশ্চয়ই খারাপ মেয়ে! আমি বরং ধন্যবাদ দিই পুলিশকে যে তারা ল্যাং মেরে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথাও ধর্ষণ করে যে মেরে ফেলে রাখেনি। পারতো তো।

পুলিশ কেনো মেয়েদের ভক্ষক না হয়ে রক্ষক হবে! তাদের কি ট্রেনিং-এর সময় শেখানো হয় মেয়েদের অধিকারকে পুরুষের অধিকারের সমান বলে বিবেচনা করতে? তাদের কি শেখানো হয় মেয়েদের একই সম্মান দিতে, যে সম্মান তারা পুরুষকে দেয়? শেখানো হয় নিরপরাধ নারী পুরুষকে হেনস্থা করার নয়, নিরাপত্তা দেওয়ার ভার পুলিশের! শেখানো হয় না। শেখানো হয় না বলে সমাজের আর সব পুরুষ যেমন নারীকে যৌন বস্তু বলে মনে করে, পুলিশও মনে করে।

আমার কাছে বরং অস্বাভাবিক মনে হয়েছে মেয়েটির আচরণ। ঠাস ঠাস করে কী রকম কথার পিঠে কথা বলছিল! পুলিশকে ভয় না পেয়ে পুলিশকেই নির্ভীকের মতো প্রশ্ন করছিল। আমার যখন খুশি বাইরে বেড়বো, তাতে আপনাদের সমস্যা কী? এই প্রশ্ন রাত বিরেতে একা একটি মেয়ে অসভ্য পুলিশ দ্বারা বেষ্টিত হয়েছে। কটা মেয়ে করতে পারবে?

সমাজের নারীবিরোধী নিয়ম-নীতি হাজার বছর ধরে মেয়েদের বোবা, ভীতু, সন্ত্রস্ত, বিনীত, লজ্জাবনত করে রেখেছে। মেয়েটি যে শেখানো জিনিসগুলোকে তুচ্ছ করতে পেরে নিজের মর্যাদা নিজে বজায় রেখেছে, এটিই অস্বাভাবিক এবং এটিই ইউনিক এবং এটির কারণেই মেয়েটিকে স্যালুট।’

তসলিমা নাসরিন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close