• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

জামাল খাশোগির ‘শেষ কলাম’

প্রকাশ:  ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৪৬ | আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৬
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সৌদির ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ ও হত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে চলছে বিতর্কের ঝড়। তুরস্কে সৌদি আরবের কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত কাজে প্রবেশের পর আর ফিরে আসেননি তিনি। তবে কনস্যুলেটে প্রবেশের আগেই ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকায় নিজের লিখা একটি কলাম পাঠিয়েছিলেন তিনি। কলাম ছাপার পূর্বেই তাকে নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন।

তার লিখা কলাম ছাপাবে কি'না তা নিয়ে দ্বিধায় পরে যায় ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ কর্তৃপক্ষ। অবশেষে সেই কলাম ছাপার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

সম্পর্কিত খবর

    ‘আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যা দরকার, তা হল অবাধ মতপ্রকাশ’ শিরোনামে প্রকাশিত ৭০০ শব্দের কলামের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আরব বিশ্বজুড়ে অবাধ মত প্রকাশের সুযোগ।

    সেখানে তিনি লিখেছেন, আমি সম্প্রতি অনলাইনে ২০১৮ সালের ফ্রিডম হাউসের প্রকাশিত ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড প্রতিবেদনটি খুঁজছিলাম। এর ফলে আমার মধ্যে গভীর একটি উপলব্ধি এসেছে। বিশ্বে আরব দেশগুলোর মধ্যে একটি মাত্র দেশ আছে যাকে স্বাধীন বলে উল্লেখ করা যায়। দেশটি হচ্ছে তিউনিশিয়া। এর পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জর্ডান, মরক্কো এবং কুয়েত। তারা আংশিকভাবে স্বাধীন। তবে বাকি আরব দেশগুলো স্বাধীন নয় বলেই বিবেচিত।

    এর ফলে এসব আরব দেশগুলোতে যারা বসবাস করছেন তারা হয় অজ্ঞ অথবা তাদের ভুল তথ্য দেয়া হয়। তারা অনেক বিষয় নিয়েই প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারেন না। যেসব জিনিস দেশকে প্রভাবিত করছে বা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবন যাপন নিয়েও মুখ খুলতে পারেন না তারা। রাষ্ট্র পরিচালিত মাধ্যমগুলো জনগণের মানসিকতাকে গুরুত্ব দেয় না। যদিও অনেকেই বিশ্বাস করেন না। কিন্তু একটি বৃহদায়তনের লোকজন অনেক সময়ই মিথ্যা তথ্যের শিকার হন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এই অবস্থার পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই।

    ২০১১ সালের বসন্তে আরব দেশগুলোর মধ্যে আশা দেখা দিয়েছিল। সাংবাদিক, বিভিন্ন একাডেমির লোকজন এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল যে, তাদের দেশগুলোতে উজ্জ্বল এবং স্বাধীন আরব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

    সরকারের কর্তৃত্ব এবং অবিচল হস্তক্ষেপ এবং তথ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রত্যাশা ছিল সাধারণ মানুষের। কিন্তু তাদের এই প্রত্যাশা বিফলে যেতে সময় লাগেনি। আরব সমাজ তাদের সেই পুরনো ধারায় ফিরে গেল। শুধু তাই নয় পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও কঠোর হতে শুরু করল। সৌদি প্রেসে প্রকাশিত এ যাবৎকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলাম লিখেছিলেন প্রখ্যাত সৌদি লেখক সালেহ আল শেহি। দুঃখজনক হলেও সত্যি তাকে অন্যায়ভাবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

    তিনি সৌদির ব্যবস্থাপনা নিয়ে দেশ বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন। এর ফলে আল মাসরি আল ইয়োম পত্রিকার সম্পূর্ণ মুদ্রণ বাজেয়াপ্ত করেছিল মিসর সরকার। হয়তো তারা অন্যান্য আরব বন্ধু দেশগুলোকে কোনভাবেই ক্ষিপ্ত করতে চায়নি কিংবা চায়নি যে তাদের কাছ থেকে কোন তীব্র প্রতিক্রিয়া আসুক। এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং তীব্র নিন্দার বদলে তা মৌনতায় পরিণত হয়েছে।

    এর ফলে আরব দেশগুলো গণমাধ্যমকে আরও ব্যাপকহারে নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা পেয়েছে। একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকরা বিশ্বাস করতেন যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়তো নিষেধাজ্ঞা থেকে তথ্যকে মুক্ত করা যাবে এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।

    কিন্তু এসব সরকার, যারা তীব্রভাবে তথ্যের ওপরও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে তারা আগ্রাসী হয়ে উঠল এবং ইন্টারনেট ব্লক করে দিল। তারা স্থানীয় রিপোর্টারদের গ্রেফতার করল এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশনার ক্ষতি করতে বিজ্ঞাপন দাতাদের চাপ দিতে শুরু করল।

    তবে অল্প কিছু মাধ্যমই ছিল যারা আরব বসন্তের কর্মশক্তিকে চালিয়ে যেতে পেরেছে। অপরদিকে কাতার সরকার সব সময়ই আন্তর্জাতিক মাধ্যমের সংবাদ কভারেজকে সমর্থন করে গেছে। প্রতিবেশিদের সঙ্গে বিরোধীতা করে নিজেদের পথেই হেঁটেছে তারা।

    সৌদি আরব, মিসর এবং ইয়েমেনের সাংবাদিকরা যে প্লাটফর্ম পাচ্ছে তা অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত। এছাড়া লেবাননেও যদি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হয় তবে দেখা যাবে, তারা ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রভাবের শিকার।

    আমার অনেক পরামর্শ অনুবাদ করে তা আরবী ভাষায় প্রকাশের পদক্ষেপ নিয়েছিল দ্য পোস্ট। এজন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ। নিজেদের ভাষায় এসব বিষয় পড়লে আরবরা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে গণতন্ত্রের বিভিন্ন দিক এবং জটিলতা বুঝতে পারবে এবং নিজেদের মধ্যে এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারবে।

    তিনি বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চাওয়া অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোই মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের ‘লোহার পর্দা’ চাপিয়ে দিয়েছে।

    উল্লেখ্য, সৌদি আরবের সরকারের বিরুদ্ধে লিখালিখি করার কারনে অনেকবার সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন জামাল খাশোগি। সর্বশেষ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকলেও তার শেষ রক্ষা হয়নি।

    -এসএমএ

    শেষ কলাম,জামাল খাশোগী
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close