• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে পাকিস্তানের ভূত

বাংলাদেশ ব্যাংক আইয়ুবকে সযত্নে রেখেছে, বঙ্গবন্ধুকে নয়

প্রকাশ:  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ প্রকাশ করেছে। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নেই। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অন্যদিকে বইটিতে একাধিক ছবি রাখা হয়েছে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের।

বইটি দুটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বটি কন্টেন্ট বা প্রবন্ধ, নিবন্ধ, স্মৃতিচারণা ও বিভিন্ন বাণিজ্য ব্যাংকের ইতিহাস রয়েছে (১-৩৪২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত)। দ্বিতীয় পর্ব সাজানো হয়েছে ছবিতে (৩৪৩-৩৬১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত)। দুই পর্ব মিলে আইয়ুব খানের তিনটি ছবি স্থান পেয়েছে। আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের একটি গ্রুপ ছবি স্থান পেয়েছে। বইটির ছবি পর্বের প্রথম পৃষ্ঠা তথা মূল বইয়ের ৩৪৩ নম্বর পাতাতে আইয়ুব খানের দুটি ছবি স্থান পেয়েছে। প্রথম ছবিটির নিচে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের, ঢাকার মতিঝিলস্থ প্রধান ভবনের পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান (১০ ডিসেম্বর ১৯৬৮)। ছবিটিতে আইয়ুব খান বসে স্বাক্ষর করছেন। পেছনে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে আছেন। একই পৃষ্ঠার দ্বিতীয় ছবিটিতে আইয়ুব খান দাঁড়ানো অবস্থায়। তার পাশে কয়েকজন বেসামরিক লোক দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিটির নিচে ক্যাপশনে রয়েছে- ‘পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান ও স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকার প্রধান ভবনের কর্মকর্তারা (সন ১৯৬৮)।

বইটির ৮২ পৃষ্ঠায় রয়েছে আইয়ুব খানের আরেকটি ছবি। ছবিটি উদ্বোধনের। সেখানে একাই আইয়ুব খান চাবি দিয়ে তালা খুলছেন। ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা আছে- ‘পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৮ তারিখে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।’ পরের পৃষ্ঠায় ছবি রয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের। কিস্তি টুপি পরিহিত মোনায়েম খান মঞ্চে বসে আছেন। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে- ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ডিজি অফিস ভবনের (বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ভবন) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান (১০.১২.১৯৬৮)। এসব ছবি আর্ট পেপারে মুদ্রিত।

ছবি পর্বের ৩৪৯ পৃষ্ঠাতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাকালীন এমডি ড. মোহাম্মদ ইউনূসের একটি ছবি রয়েছে। তবে ছবির নিচে ক্যাপশনে তার নাম উল্লেখ নেই। ছবিটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে বৈঠক’। বইটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর আ.ন.ম. হামিদুল্লাহ, সাবেক গভর্নর নুরুল ইসলাম, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আবুল মাল আবদুল মুহিত; সাবেক গভর্নর লুৎফর রহমান, ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ফখরুদ্দিন আহমদ, ড. আতিউর রহমান ও বর্তমান গভর্নর ফজলে কবীরের ছবি স্থান পেয়েছে।

বইয়ের কন্টেন্ট পর্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অস্পষ্ট ও ছোট্ট ছবি রয়েছে। ৮৪ পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়া এই ছবিতে শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ৩০ তলা বিশিষ্ট ভবনের উদ্বোধন করছেন। তার পেছনে রয়েছেন তৎকালীন গভর্নর। ছবিটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় সংলগ্নী ভবন উদ্বোধন (২৪ ফেব্রুয়ারি)। ৩৬১ পৃষ্ঠার এই বইয়ে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি বা স্কেচ নেই।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে মন্তব্য চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের কাছে। ততক্ষণে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের হয়ে পড়েছেন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখিনি। বইটিও আমার কাছে নেই। ফোনে আমি এ মুর্হুতে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) বইটি দেখে মন্তব্য করব।’

বইটি প্রকাশের সময় উল্লেখ করা হয়েছে ডিসেম্বর, ২০১৭। বইটির প্রকাশনা প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে বইয়ের পঞ্চম পৃষ্ঠায় যথাক্রমে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ড. সনৎকুমার সাহা, মো. আল্লাহ মালিক কাজেমী, মো. আবুল কাশেম. আবু হেনা মো. রাজি হাসান ও সিতাংশু সুর চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। সম্পাদকমণ্ডলীর নাম ছাপা হয়েছে শুভঙ্কর সাহা, ম. মাহাফুজুর রহমান, ড. আবুল কালাম আজাদ, নাসিরুজ্জামান, এফএম মোকাম্মেল হক, গোপাল চন্দ্র দাস, আনোয়ারুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, জোবায়দা আফরোজ ও ইন্দ্রানী হকের নাম। এর মধ্যে ড. আতিউর রহমান দুই বছর আগে এবং অর্ধেক সদস্য বই প্রকাশের আগে অবসরে গেছেন। চতুর্থ পৃষ্ঠায় বইটির প্রকাশক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছে জিএম আবুল কালাম আজাদের।

এ বিষয়ে এই প্রকাশনা প্রকল্পের অন্যতম উপদেষ্টা ও সদ্য সাবেক হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এ প্রকল্পের উপদেষ্টা হলেও আমাকে বইয়ের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি কোনো বৈঠকেও আমাকে ডাকা হয়নি। যারা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত তারাই এ কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যার নির্দেশে (প্রেসিডেন্ট অর্ডার) প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেই বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকা খুবই দুঃখজনক। বইটি আমি দেখিনি, যদি এমন হয় তাহলে এটা সংশোধন করা প্রয়োজন।’ সূত্র: খোলা কাগজ

/এসএম

বাংলাদেশ ব্যাংক,বঙ্গবন্ধু
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close