• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সংসদ নির্বাচনের আগে জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কা

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক

প্রকাশ:  ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:১৫ | আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:১৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টের লক্ষ্যে উগ্রবাদী সংগঠনগুলো সক্রিয় হতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এ জন্য নতুন করে টার্গেট কিলিং শুরু করা হতে পারে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের পুরনো লিস্টে থাকা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও টার্গেট হতে পারেন। এ জন্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশ (জেএমবি) এরই মধ্যে সংগঠিত হয়ে অপতৎপরতা শুরু করেছে বলেও কিছু আলামত পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই জঙ্গি সংগঠনটি এখন পুরনো জেএমবি হিসেবে চিহ্নিত। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশের থানাগুলোকেও জঙ্গিদের অপতৎপরতা রোধে সতর্ক করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বিশ্নেষণ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের স্থাপনাগুলোতেও সার্বিক বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিভিন্ন থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা নানা ধরনের নিরাপত্তা পরামর্শ দিয়ে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পুরনো জেএমবি নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তাদের কিছু নাশকতা পরিকল্পনাও এরই মধ্যে নস্যাৎ করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গিদের পরিকল্পনাগুলো ভেস্তে দিতে গোয়েন্দারা প্রতিনিয়ত কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এদের অপতৎপরতা রুখে দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতাও রয়েছে।

    জঙ্গি সংগঠনগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও জঙ্গি দমনে দায়িত্বরত পুলিশ ইউনিটের সূত্রগুলো বলছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এবং হুজিবিসহ অন্য জঙ্গি গ্রুপগুলো সাংগঠনিকভাবে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। তবে পুরনো জেএমবি এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, পুরনো এই জঙ্গি সংগঠনটি তলে তলে অনেকটাই সংগঠিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এর কিছু আলামতও পাওয়া গেছে। বিশেষ করে গত ১১ জুন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে প্রকাশক ও লেখক শাহজাহান বাচ্চু হত্যার মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেয়। ওই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় অপারেশনাল প্রধান আবদুর রহমান ওরফে লালু নামে একজনকে গ্রেফতারের পর তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ। যদিও তার সহযোগীদের গ্রেফতার অভিযানের সময় লালু 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়। এর আগে তহবিল সংগ্রহে জেএমবি জঙ্গিরা উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অংশ নেয় বলেও তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

    আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে ভারতের উত্তরপ্রদেশ থেকে মোশারফ হোসেন ওরফে মুসা ওরফে তেজরুল ইসলাম ওরফে রেজাউল করিম এবং রুবেল আহমেদ ওরফে মনিরুল ইসলাম নামে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জেএমবির সদস্য বলেও স্বীকার করেছে। এই দু'জনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে হলেও স্থানীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো অভিযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, পুরনো জেএমবি নতুন করে সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছে।

    ভারতে দুই জেএমবি সদস্য গ্রেফতারের বিষয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে তাদের সব সময়ই গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই দু'জনকে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে চাপে পড়ে অনেক সময় জেএমবি জঙ্গিরা প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকে।

    এদিকে সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেদিক বিবেচনায় দেশের রাজনৈতিক মাঠও শান্ত থাকা দরকার। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত এবং আগামী সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী মহল টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে।

    ওই প্রতিবেদনটিতে একজন মুক্তমনা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, যে কোনো সময়ে তার প্রাণনাশের হুমকির আশঙ্কা রয়েছে। অতি সম্প্রতি পুরনো জেএমবির দায়ী গ্রুপের একজন শীর্ষ নেতা রাজশাহী অঞ্চলের পুরনো জেএমবির ইসাবা গ্রুপের শীর্ষ নেতাকে অবহিত করেছে যে, ওই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে এরই মধ্যে রেকি করা হয়েছে।

    গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এভাবে টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলা হতে পারে।

    আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, জেএমবির দায়ী গ্রুপের দায়িত্ব হচ্ছে টার্গেট করা ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা বা লক্ষ্যবস্তুর তথ্য সংগ্রহ করা। আর ইসাবা গ্রুপটি জঙ্গিদের ভাষায় 'কতল' বা টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডে ও লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কাজটি করে থাকে।

    এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো একটি প্রতিবেদনে জঙ্গিদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ছয়টি বিশেষ সুপারিশ করা হয়েছে। এতে সব ভাড়া বাসা, আবাসিক হল, মেসের নতুন ভাড়াটে বা এলাকায় অপরিচিত নতুন লোকজন সম্পর্কে যথাযথভাবে ও গুরুত্ব সহকারে খোঁজ-খবর নিয়ে সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বাস, রেলস্টেশন, স্থল, বিমান ও নৌবন্দর এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং মাঝেমাঝে আকস্মিক তল্লাশির ব্যবস্থা করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

    পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ১৯ দফা নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সূত্রঃ সমকাল ।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close