• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মোটাতাজা গরু বড়ই ভয়ঙ্কর

প্রকাশ:  ২৬ জুলাই ২০১৮, ১০:৪১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ওষুধ আর ইনজেকশন প্রয়োগে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। শরীরে ভিটামিন নিয়ে রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠছে কোরবানির গরু। ঈদবাজারে আর্থিকভাবে লাভবান হতেই গ্রামের গৃহস্থ থেকে শুরু করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আবারও ঝুঁকে পড়েছেন নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের অপকর্মে। অধিক মুনাফার ধান্দায় রুচির নাম করে অবলা এই পশুকে ফোলাতে পল্লী চিকিৎসকদের প্ররোচনায় প্রয়োগ হচ্ছে ইনজেকশন, খাওয়ানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির হরেক রকমের ভিটামিন ও পাউডার।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন গ্রামে, বিশেষ করে চরাঞ্চলে গরু মোটাতাজাকরণের এমন মহড়া চোখে পড়েছে। অবৈধ ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে মোটাতাজা করা গরুর শরীরে নানা বিষাক্ত পদার্থ জমা হয় এবং গোশতের সঙ্গে মিশে যায়। এসব গরুর গোশত রীতিমতো বিষাক্ত, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব হরমোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আছে শাস্তির বিধান। তা সত্ত্বেও গরুর ক্ষেত্রে হরমোনের চূড়ান্ত অপব্যবহার কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওষুধ-ইনজেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন প্রয়োগে মোটাতাজা করা গরুর গোশত বড়ই ভয়ঙ্কর। এসব ক্ষতিকর ওষুধ মানবদেহে ঢুকে টিউমার, ক্যান্সার, কিডনি নষ্ট করার মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নারীদের সন্তান হওয়ার ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে বন্ধ্যত্বের সৃষ্টি করতে পারে। অল্প বয়সেই মেয়েরা পরিপক্ব হয়, শিশুরাও অতিরিক্ত মোটা হয়ে ওঠে। মোটাতাজা গরুর বিষাক্ত গোশত খাওয়ার কারণে বয়স্করাও জটিল কঠিন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, বাড়ছে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব। গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহূত অনেক ওষুধ ইদানীং মানবদেহে সরাসরি ব্যবহারের আশঙ্কাজনক খবরও পাওয়া গেছে। দেহের নানা রকম বিষব্যথা তাত্ক্ষণিক নিরাময়ের ভাবনায় বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে সরাসরি এসব ওষুধ রোগীদের সেবন করানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো এনেসথেশিয়ালজি অ্যান্ড পেইন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা পেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের এমডি অধ্যাপক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের অপপ্রভাবে হাড়ের ক্ষয় ত্বরান্বিত হয়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। ননস্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধও না বুঝে সেবন করলে কিডনি নষ্ট বা বিকল হয়ে যেতে পারে, পেট ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একশ্রেণির অসাধু গরু ব্যবসায়ী বা খামারি নিষিদ্ধ ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করছেন। এতে স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ ডেকাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন, বেটনেনাল, কর্টান, স্টেরন, অ্যাডাম ৩৩ সেবন করানো হচ্ছে। অথবা ডেকাসন, ওরাডেক্সন, অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ইনজেকশনের মাধ্যমে দিয়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিপ্রোহেপটাডিন, যেমন পেরিঅ্যাকটিন ট্যাবলেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এসব ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য গরুর শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া বা বিপাকক্রিয়া নষ্ট করে দিচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, স্টেরয়েড ওষুধ মূলত হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়। কিন্তু এ-জাতীয় ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

ফলে গরুর শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর গোশতে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা ও তুলতুলে, নাদুসনুদুস দেখায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গরু সাধারণত দু-তিন মাসের মধ্যেই মারা যায়।

দ্রুত মোটাতাজাকরণের উদ্দেশে অনেক এলাকাতেই গরুকে অতিরিক্ত ইউরিয়া খেতে দেওয়া হয়। গরুকে কয়েক মাস ধরে ইউরিয়া খাওয়ালে গরু দ্রুত দানবাকৃতি ধারণ করে। এর ফলে গরুর শরীরের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিডনি, লিভার, ব্রেন নষ্ট হয়ে গরুর মৃত্যুকে অনিবার্য করে তোলে। অতিরিক্ত ইউরিয়া বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে গরু প্রাকৃতিকভাবে বেঁচে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় হাটেই এসব গরু মারা যায়। এ ধরনের গরুকে বিষাক্ত গরু বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরিয়া বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত গরুর গোশত খেলে মানুষও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ফলে কিডনি বিকল হওয়ার মতো ঝুঁকিও থাকে।

নানা ওষুধ দিয়ে গরু মোটা করা আসলে গরুর প্রকৃত স্বাস্থ্য নয়। এটি ওষুধের সাময়িক প্রতিক্রিয়ার একটি ফল। এতে গরুর সমগ্র শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গে ওষুধের বিষক্রিয়া শুরু হয়। অস্বাভাবিকভাবে মোটা এসব গরু নির্জীব ও শ্লথ হয়ে পড়ে। গরু ঘন ঘন শ্বাস নেয়। আচরণে চুপচাপ হয়ে পড়ে। মোটাতাজাকরণের এসব ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয় না। গরুর দেহের গোশতে রয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এসব গরুর গোশত যখন মানুষ খায়, তখন সেসব ওষুধের প্রতিক্রিয়া মানুষের শরীরেও দেখা দেয়। সুস্থ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এসব স্টেরয়েড ওষুধ মানবদেহের কিডনি, ফুসফুস, লিভার, হৃৎপিণ্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। মানবদেহের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অনিদ্রা, অস্থিরতাসহ নানা রোগ সৃষ্টি করে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

/এসএম

গরু,ভয়ঙ্কর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close